Advertisement
E-Paper

সম্প্রীতির আবহে অভিনব ঘেরাও লিলুয়ার কলেজে

দু’দিনের ব্যবধানে গঙ্গার দু’পারে দু’রকম ছবি! গঙ্গার পূর্ব পারে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য ঘেরাও-মুক্ত হতে পুলিশ ডাকায় মঙ্গলবার রাতে ছাত্রছাত্রীদের বরাতে জোটে চূড়ান্ত লাঞ্ছনা। আর বৃহস্পতিবার গঙ্গার পশ্চিম পারে লিলুয়ার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঘেরাও হয়ে পুলিশ ডেকেও তাদের ক্যাম্পাসের বাইরেই রাখলেন অধ্যক্ষ, ডিন-সহ কলেজ-কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৭

দু’দিনের ব্যবধানে গঙ্গার দু’পারে দু’রকম ছবি!

গঙ্গার পূর্ব পারে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য ঘেরাও-মুক্ত হতে পুলিশ ডাকায় মঙ্গলবার রাতে ছাত্রছাত্রীদের বরাতে জোটে চূড়ান্ত লাঞ্ছনা। আর বৃহস্পতিবার গঙ্গার পশ্চিম পারে লিলুয়ার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঘেরাও হয়ে পুলিশ ডেকেও তাদের ক্যাম্পাসের বাইরেই রাখলেন অধ্যক্ষ, ডিন-সহ কলেজ-কর্তারা।

ওই কলেজে এ দিন বিকেল থেকে বেশি রাত পর্যন্ত অধ্যক্ষ, ডিন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মী-সহ ১০০ জনকে ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়ারা। কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। তবে তাঁরা জানিয়ে দেন, ঘেরাও থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পুলিশ ডাকা হয়নি। ওদের ডাকা হয়েছে কলেজের সম্পত্তি রক্ষার জন্য। সেই পুলিশকেও রাখা হয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি স্কুলে। সাদা পোশাকে ক্যাম্পাসে ঢোকেন শুধু কয়েক জন পুলিশকর্তা। অধ্যক্ষ অশোক কুমার বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তানের মতো। ওদের নিয়েই থাকতে হবে আমাদের। ওরা যদি সারা রাত বা তারও পরে ঘেরাও চালিয়ে যায়, আমরা ঘেরাও হয়ে থাকব। পুলিশকে বলব না যে, ঘেরাও-মুক্ত করো।”

ঘেরাওকারী পড়ুয়ারাও সৌজন্য দেখাতে কসুর করেননি। নিজেদের রাতের খাবার হিসেবে রুটি-তরকারি আনিয়ে অধ্যক্ষ, ডিন-সহ ঘেরাও হয়ে থাকা সকলকেই তা খেতে অনুরোধ করেন তাঁরা। অধ্যক্ষ তাঁদের বলেন, “তোমরা তো সংখ্যায় অনেক। আমাদের দিলে তোমাদের কুলোবে না। তোমরাই খাও। আমরা খিচুড়ি রাঁধার ব্যবস্থা করে নিচ্ছি।” পড়ুয়ারা সৌজন্য দেখিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও। তাঁরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় তালা খুলে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে মাঝেমধ্যেই।

কিন্তু কেন এই ঘেরাও?

পড়ুয়ারা জানান, ২০১৩ সালের প্রথম দিকে একটি সংস্থা ওই কলেজে ভুয়ো ক্যাম্পাসিং করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। তাই এ বছর কোন কোন সংস্থা করবে, লিখিত ভাবে তা জানিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। কিন্তু কলেজ-কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি হননি। তাই প্রথমে বিক্ষোভ এবং পরে ঘেরাওয়ের রাস্তা নেওয়া হয়।

কলেজ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। চতুর্থ বর্ষের ‘কোর’ (মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও অটোমোবাইল) বিভাগের পড়ুয়ারা শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বলেন, যে-সব সংস্থা ক্যাম্পাসিং করবে, তাদের লিখিত তালিকা দিতে হবে। শিক্ষকেরা কিন্তু সেই দাবি মানেননি। তাঁদের বক্তব্য, এ দিন ডিরেক্টর কলেজে আসেননি। তাই দাবি মানার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, পড়ুয়াদের বোঝানোর জন্য তাঁরা বৈঠকের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি বলেই জানান কর্তৃপক্ষ।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথম থেকে চতুর্থ, সব বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা দলে দলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মূল তিনটি ফটকেই তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। পড়ুয়াদের আবার এক দফা বোঝানোর চেষ্টা হয়। কাজ হয়নি।

বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কলেজের কর্মীরা বাইরে বেরোতে চাওয়ায়। কর্তৃপক্ষ জানান, মহিলা কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় বিক্ষোভকারীদের। সেই সঙ্গে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদেরও ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু গেটের তালা খুলতেই মহিলা কর্মীদের সঙ্গে কিছু পুরুষ কর্মীও বেরিয়ে যেতে থাকেন। তখন শুরু হয় ধস্তাধস্তি। গুজব রটে যায়, শিক্ষকেরা বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের মারধর করেছেন। বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। কলেজের অ্যাকাডেমিক ডিন সমীরকুমার সাহা বলেন, “কোনও শিক্ষকই কোনও ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। পুলিশ ডাকা হয়েছে সম্পত্তি রক্ষার জন্যই।”

সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বালি, বেলুড়, মালিপাঁচঘরা, লিলুয়া ও হাওড়া পুলিশ কন্ট্রোল থেকে ৮-৯ দল পুলিশ চলে আসে। তবে উর্দিধারী সব পুলিশকেই কলেজের পাশের একটি স্কুলে রাখা হয়। সাদা পোশাকের কিছু পুলিশকর্তা ক্যাম্পাসে ঢোকেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, কলেজের সম্পত্তি রক্ষার জন্যই পুলিশ ডাকা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের উপরে কোনও আক্রমণের পক্ষপাতী নন তাঁরা।

পড়ুয়াদের দাবি সম্পর্কে অধ্যক্ষ অশোক কুমার বলেন, “২০১৩ সালে যে-সংস্থা ভুয়ো ক্যাম্পাসিং করেছিল, তাদের বাতিল করে কালো তালিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তখন যিনি উপাধ্যক্ষ ছিলেন, তিনিও কলেজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এ বার ভাল ভাল কোম্পানি আসছে। পড়ুয়াদের সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি।”

liluah college state news online state news unique ghera students activity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy