Advertisement
E-Paper

অবৈজ্ঞানিক ভাবে ঝিল সাফাই, ফিরে যাচ্ছে পরিযায়ীরা

পরিবেশপ্রেমীরা জানান, সাঁতরাগাছি ঝিলে আগে দশটির বেশি কচুরিপানার দ্বীপ ছিল। আদালতের নির্দেশ মেনে হাও়ড়া পুরসভা ঝিল সাফ করতে গিয়ে কচুরিপানার দ্বীপগুলির বেশির ভাগই তুলে ফেলেছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
আগের বছরের শীতেও এসেছিল এত পাখি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

আগের বছরের শীতেও এসেছিল এত পাখি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দূরদূরান্ত থেকে প্রতি বছরের মতো হাজির হয়েছিল ওরা। কিন্তু এসে দেখছে, সাঁতরাগাছির পরিবেশটাই যেন বদলে গিয়েছে! চেনা ঠাঁই উধাও। তাই অন্যত্র আস্তানা খুঁজে নিচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। বদলে যাওয়া পরিবেশের কারণেই এ বছর সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের।

সাঁতরাগাছি ঝিলে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো পক্ষীপ্রেমীরা জানান, কয়েক বছর আগেও সাঁতরাগাছিতে ৮-১০ হাজার পরিযায়ী পাখি আসত। ঝিলে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় সেই সংখ্যাটা ক’বছর ধরেই কমছিল। গত শীতে কমবেশি দু’হাজার পাখি এসেছিল ঝিলে। দূষণের সমস্যা নিয়ে আদালতেরও দ্বারস্থ হন পরিবেশবিদেরা। আদালতের নির্দেশ মতো ঝিল সাফাই শুরু করেছিল হাওড়া পুরসভা। সেই কাজের জন্যই পরিযায়ীদের কাছে ঝিলের চেনা পরিবেশ বদলে গিয়েছে বলে মনে করছেন পক্ষী বিশেষজ্ঞেরা।

পরিবেশপ্রেমীরা জানান, সাঁতরাগাছি ঝিলে আগে দশটির বেশি কচুরিপানার দ্বীপ ছিল। আদালতের নির্দেশ মেনে হাও়ড়া পুরসভা ঝিল সাফ করতে গিয়ে কচুরিপানার দ্বীপগুলির বেশির ভাগই তুলে ফেলেছে। পড়ে রয়েছে তিনটি দ্বীপ। প্রতিদিন জাল ফেলে ঝিল সাফাইও চলছে। পক্ষীপ্রেমীদের দাবি, এই দুই কারণে সমস্যা হচ্ছে পাখিদের।

একটি পক্ষীপ্রেমী সংগঠনের কর্মীরা দেখেছেন, চলতি মরসুমের গোড়ায় পাখিরা আসছিল, কিন্তু থাকার জায়গা পছন্দ না হওয়ায় অনেকে উড়ে যায়। এ বছর বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু জলাশয়ে ভিড় বাড়ছে পরিযায়ীদের। সম্ভবত সাঁতরাগাছিতে আসা অতিথিদের অনেকে সেখানে আস্তানা গেড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। পক্ষী বিশেষজ্ঞ শুভঙ্কর পাত্র বলছেন, ‘‘ঝিলটি বেশি সাফ করা হয়েছে। কচুরিপানার দ্বীপ উধাও হওয়ায় বিশ্রামের জায়গা ও খাবারের জোগানও কমে গিয়েছে। সে জন্য পাখিরা থাকতে চাইছে না। ওই কচুরিপানার চাঁই খুঁটি দিয়ে ঘিরে রাখলে পাখিরা বিশ্রাম নিতে পারত।’’

পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানান, কচুরিপানা জলাশয়ের জীববৈচিত্রের অঙ্গ। এ ভাবে সাফ করায় ঝিলের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী-সহ বাস্তুতন্ত্র বিগড়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছ এবং অন্য প্রাণীরা। সাফ করার আগে এ সব ভাবা উচিত ছিল। স্বাতীদেবী বলছেন, ‘‘এই সময়ে পাখিরা খেয়ে ফ্যাট জমায়। সেই ফ্যাট খরচ করেই পাড়ি দেয় গন্তব্যে। কিন্তু প্রাকৃতিক জায়গা বদলে যাওয়ায় বিশ্রাম না করেই দীর্ঘ পথ ফিরে যাচ্ছে। এতে ওদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।’’

সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি জানান, পরিবেশ আদালত ঝিল থেকে প্লাস্টিক-সহ বর্জ্য তুলতে বলেছিল। কিন্তু কচুরিপানা তুলে পাখিদের বাসস্থান নষ্ট হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুরসভা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঝিল সাফ করায় এমন ঘটছে।’’ পরিবেশ আদালতের নির্দেশের কথা বলে পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারে সাহায্য করেছিল বন দফতর। কোথায় কত দ্বীপ থাকবে, তা ওদের বোঝা উচিত ছিল।’’ হাওড়ার ডিএফও নিরঞ্জিতা মিত্র জানান, প্রথম বার সাফাইয়ের সময়ে হাওড়া পুরসভা তাঁদের সাহায্য নিয়েছিল। কিন্তু এ বার সাফাইয়ের সময়ে বন দফতরকে কিছু জানানো হয়নি। ডিএফও বলছেন, ‘‘এর পরে যাতে এ ভাবে সাফ করা না হয় সে ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে কথা বলব।’’

migratory bird Unscientific cleaning সাঁতরাগাছি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy