এত্তা-জঞ্জাল: পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: দীপঙ্কর দে
এলাকায় সাফাই অভিযান চালিয়ে দু’বছর আগে মেক্সিকো থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিল উত্তরপাড়া। সেই উত্তরপাড়াই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষায় দেশের অন্যতম দূষিত শহর!
জঞ্জাল থেকে সার তৈরি করে এবং পুর এলাকায় সাফাই অভিযান চালিয়ে ২০১৬ সালের শেষ দিকে মেক্সিকোর একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পুরসভার পক্ষে পুরস্কার নিয়ে ফিরেছিলেন পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। পুরসভার সেই কাজ দেখতে সম্প্রতি জাপান থেকে একটি প্রতিনিধি দলও ঘুরে গিয়েছে শহরে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে সেই ‘স্বচ্ছতা’য় দাগ লেগে গেল। যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শহরে।
এলাকায় ঘুরলে অনেক জায়গাতেই এখন আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামসীতা ঘাট স্ট্রিটের কথাই ধরা যাক। একটি আবাসন সংলগ্ন ফাঁকা একফালি জমিতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসী আবর্জনা ফেলছেন। পরিস্থিতি এমনই, ডাঁই করা জঞ্জালের ভারে জমির ছ’ফুটের পাঁচিল হেলে গিয়েছে। আরও কয়েক কদম এগিয়ে একটি অনুষ্ঠান-বাড়ি লাগোয়া ফাঁকা জমির একাংশেরও একই হাল। সেখানেও ময়লা ফেলার ধুম। লাগোয়া বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করল চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়। এক প্রবীণার কথায়, ‘‘সারাদিন দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। এখানে বলে কিছু
হয় না।’’
১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবার আবর্জনা ফেলে পুকুর বোজানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এখানকার ভূতের গলির একটি প্রাচীন মন্দিরের উল্টো দিকের একটি বড় পুকুর এক সময় স্থানীয়েরা ব্যবহার করতেন। হাঁস চরে বেড়াত। এলাকার ছেলেপুলেরা ছিপ নিয়ে মাছ ধরত। পুকুরের কারণে বর্ষায় লাগোয়া রাস্তা জলমগ্ন হত না সেই অতীত এখন ঝাপসা। কচুরিপানা আর আবর্জনা সেই পুকুরের দখল নিয়েছে। এখানকার এক বৃদ্ধের খেদ, ‘‘উত্তরপাড়ায় এখন পরিকল্পিত ভাবে পুকুর চুরি হচ্ছে। প্রোমোটার-রাজের জন্য উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর স্টেশন লাগোয়া রেলের নয়ানজুলিও বুজছে। নিকাশির জল যাবে কোথায়? আর আমাদের কথা শুনবে কে? শহর তাই আবর্জনায় ভরছে।’’
আবর্জনা ছড়িয়ে থাকা এবং পুকুর বোজানোর ছবিটা শুধু ওই দুই ওয়ার্ডেই নয়, কোতরং, ধাড়সা, মাখলা, হিন্দমোটর, উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী বা মধ্য ভদ্রকালীর বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরলে সর্বত্র একই ছবি ধরা পড়ে। মাখলায় কয়েকটি ওয়ার্ডে আবার খাটাল-সমস্যায় জেরবার বাসিন্দারা। এলাকার একটি বেসরকারি ইংরেজি স্কুল লাগোয়া মাখলা মোড়ের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে খাটাল থেকে দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ। ডাঁই করা গোবর রাখা থাকে রাস্তায়। পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
আবর্জনা বা দূষণ নিয়ে অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি জঞ্জাল বিভাগের পুর-পারিষদ তাপস মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘এলাকার ৮০ শতাংশ জঞ্জাল নিয়মিত দু’বেলা পরিষ্কার হয়। তবে ব্যস্ত জায়গায় বহু মানুষ প্লাস্টিক, নোংরা ফেলেন। আমরা এ বার রাস্তায় যাতে আবর্জনা না-ফেলা হয়, সেই প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’’ আর পুরকুর ভরাট? তাপসবাবুর দাবি, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকেই পুকুর পরিষ্কার শুরু হয়েছিল। ফের হবে।’’ উত্তরপাড়ার পরিচ্ছন্ন শহরের তকমাটা ফিরে পেতে চান নাগরিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy