Advertisement
E-Paper

জিতেও সঙ্গে নেই চেনা শহর

কান ঘেঁষে জিতলেন। গড়ও অক্ষত রইল। কিন্তু মুখ ফেরাল এত দিনের ভরসার কাটোয়া শহর। ফলে জিতেও হাসি নেই কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরপর রাউন্ডে পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি।

সৌমেন দত্ত ও সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:৩৭
রবিবাবু ও শ্যামাদেবী। নিজস্ব চিত্র।

রবিবাবু ও শ্যামাদেবী। নিজস্ব চিত্র।

কান ঘেঁষে জিতলেন। গড়ও অক্ষত রইল। কিন্তু মুখ ফেরাল এত দিনের ভরসার কাটোয়া শহর। ফলে জিতেও হাসি নেই কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরপর রাউন্ডে পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি। বেলার দিকে ব্যবধান কিছুটা কমে। দাঁইহাট পুর এলাকার ইভিএম খোলার পরে লড়াইয়ে ফেরেন তিনি। শেষ রাউন্ডে ৯১১ ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদারকে হারিয়ে জিতে যান রবিবাবু।

কিন্তু তাঁর খাসতালুক কাটোয়া শহর, যেখানে দীর্ঘদিনের পুরপ্রধান ছিলেন তিনি সেখানেই পিছিয়ে পড়েন। হিসেব বলছে, শহর থেকে অন্তত সাড়ে চার হাজার ভোট কম পেয়েছেন তিনি। কেন? রাজনৈতিক দলগুলির বিশ্লেষণ পুরভোটের পরে তাঁর দলবদল মানুষ ভাল ভাবে নেননি। কাটোয়া তাই চেনা নেতার পাশ ছেড়ে রয়ে গিয়েছে কংগ্রেসেই।

কাগজ পড়ায় ব্যস্ত তৃণমূল কর্মীরা।

এ বারের ভোটে দলবদল করে ভোটের মাঠ থেকে ছিটকে গিয়েছেন শান্তিপুরের ছ’বারের বিধায়ক অজয় দে, বীরভূমের হাঁসনের পাঁচ বারের বিধায়ক অসিত মাল। আবার টিকে গিয়েছেন ভাঙড়ের রেজ্জাক মোল্লা বা রবিবাবুর মতো অনেকে। অসিত মালকে হারিয়ে দিয়েছেন প্রথম বার ভোটে লড়া কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ। অজয়বাবুও হেরে গিয়েছেন ভোটের ‘নতুন মুখ’ জোট প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্যের কাছে। হারের কারণ আন্দাজ করতে গিয়ে দলের মধ্যের নানা সমীকরণের কথা বলেছেন তাঁরা। আবার যাঁরা জিতেছেন তাঁরাও একটুর জন্য পাওয়া জয়ের কারণ দেখতে গিয়ে সামনে এনেছেন দলের একাংশের বিরোধীতার কথা। রবীন্দ্রনাথবাবু বৃহস্পতিবারই বলেছিলেন, ‘‘কাটোয়া পুরসভায় দুর্নীতি, দুবৃত্তদের আনাগোনা এবং ভোটের দিন দলের কিছু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধাচরণের দায়ভার আমাকে বইতে হল।’’

যদিও কাটোয়ার তৃণমূল পুরপ্রধান অমর রাম তাতে সায় দেননি। শুক্রবার তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে।” তবে ভোটের ফলের দিন আরও দু’এক কথা বেশি বলেছিলেন তিনি। অমরবাবুর দাবি ছিল, ‘‘রবিদা কী বলেছেন জানি না। তিনি দীর্ঘ দিন কংগ্রেসে ছিলেন। আমি বলেছিলাম নতুন প্রতীকে মানুষের আরও কাছে যেতে হবে। হয়তো প্রচারে কোনও ঘাটতি ছিল।’’ তবে জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতাকে এ দিন ব্যক্তিগত আলোচনায় বলতে শোনা গিয়েছে, “মানুষ কিন্তু কংগ্রেস ছেড়ে আসা দলবদলকারীদের ভাল ভাবে নেননি। সে জন্যই দীর্ঘদিনের বিধায়ক অজয় দে, অসিত মাল এমনকী তৃণমূলের খাস জেলা থেকে হারতে হয়েছে নির্বেদ রায়কে। সেখানে রবীন্দ্রনাথবাবুর জিতে যাওয়া কিন্তু বড় ব্যাপার।”

এই শহরের ভরসাতেই ১৯৯৬ সাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে জিতেছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। বারেবারে দেখা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় রবীন্দ্রনাথবাবু পিছিয়ে পড়লেও, শহরের ভোট গণনা শুরু হতেই এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রতিবার বিধানসভা নির্বাচনে শহরে তাঁর জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। ২০১১ সালেও কাটোয়া শহর থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে রবীন্দ্রনাথবাবু জিতেছিলেন প্রায় ১৮ হাজার ভোটে। এ বারে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে পিছিয়ে গেলেন সাড়ে চার হাজারেরো বেশি ব্যবধানে। তৃণমূল সূত্রে খবর, শহরের ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১, ৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে খুবই অল্প ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী। তুলনামূলক ভাবে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি। বাকি সব ওয়ার্ডের রায় অন্য।

আলোচনা চলছে কংগ্রেস পার্টি অফিসে।

গত বছর পুরভোটে এ শহরে কংগ্রেস-তৃণমূল ১০-১০ আসন পায়। বোর্ড গড়বে না বলে জানিয়েও দেয় কংগ্রেস। পরে কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ২৯ মে তৃণমূলে যোগ দেন রবিবাবু। শহরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তখন থেকেই। ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে রবিবাবুর বিরুদ্ধে জোটের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এত দিন একসঙ্গে লড়াই করে আসা শ্যামা মজুমদার। পাড়ার আলোচনায় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের লড়াই-ই। ফল বেরোনোর পরেও সে আলোচনার শেষ নেই।

ভাগীরথীর পাড় থেকে চায়ের দোকানে বসে থাকা যুবক কিংবা প্রৌঢ়, সবাই মনে করছেন, এ ভাবে দলত্যাগ কাটোয়ার মানুষ ভাল চোখে দেখেননি। যাঁদের জন্য পুরসভা নির্বাচনে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারল না, সেই প্রতীকে ভোট দিতে চাননি কাটোয়ার মানুষ। উল্টো দিকে, কংগ্রেসের প্রার্থী শ্যামা মজুমদার সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিবিড় ভাবে প্রচার করেছেন। ফলে মানুষের মনে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছিল। আইনজীবী হওয়ার আলাদা প্রচারও পেয়েছিলেন তিনি। ভোটে তার প্রতিফলনও ঘটে। শ্যামাদেবী শুক্রবার বলেন, “কাটোয়ার মানুষ আমাকে জিতিয়েছে। এখন আরও বেশি করে মানুষের কাছে থাকতে হবে। তাঁদের প্রতি আমি দায়বদ্ধ।”

যদিও তৃণমূলের দাবি, অভিমানে মুখ ফিরিয়েছেন শহরের মানুষ। ফের শহর তাঁদের পাশে আসবে বলেও তাঁদের বিশ্বাস।

তবে কংগ্রেসের এক কর্মী মনে করিয়ে দেন, “১৯৮৭ সাল থেকে টানা কাটোয়া বিধানসভায় কংগ্রেসের হয়ে লড়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। ওই বছর ছাড়া কাটোয়া শহর কংগ্রেসের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এ বারও সেই ট্র্যাডিশনই রইল।’’

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

Trinamool Congress Rabindranath Chattopadhyay Rabindranath Chatterjee MLA Katwa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy