Advertisement
E-Paper

রক্তাক্ত বিজেপি সাংসদ, প্রহৃত বিধায়কও! দুপুর পেরিয়ে রাত গড়ালেও অধরা অভিযুক্তেরা, হামলা কি ‘পরিকল্পিত’ ছিল?

খগেন, শঙ্করের উপর হামলার ঘটনার পর রাজ্যের জায়গায় জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছে বিজেপি। হুগলিতে দলের জেলা কার্যালয় থেকে মিছিল করে জিটি রোডে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তারা। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন নেতা-কর্মীরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০৫
Was the attack on Shankar Ghosh and Khagen Murmu planned? TMC denies allegations

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ইটের ঘায়ে এক জনের মুখ থেকে গলগল করে রক্ত ঝরেছে। অন্য জনকে ধাক্কা, চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা। উন্মত্তদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে গাড়িতে ওঠার পরেও তাঁকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়েছে। তাতে গাড়ির কাচ ভেঙে কয়েক টুকরো তাঁর শরীরে বিঁধেওছে বলে অভিযোগ।

প্রথম জন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। দ্বিতীয় জন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। তাতে এক জন রক্তাক্ত হয়েছেন। অন্য জন প্রহৃত। সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছিল। তার পর বিকেল পেরিয়ে রাত গড়ালেও অধরা অভিযুক্তেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও কাউকেই আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। সরাসরি এই ঘটনার উল্লেখ না-করলেও, সকলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’’

গোটা ঘটনায় প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। সাংসদ-বিধায়কদের উপর হামলাকে পরিকল্পিত বলেই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুন্ডারা পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলা চালিয়েছে।’’ বিজেপির ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণও বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় পৌঁছোনোর পর কোনও অজানা কারণে ঘটনাস্থল ছেড়ে ডিআইজি এবং এসপি চলে গিয়েছিলেন। তার পরেই হামলা হয়। ফলে হামলা পরিকল্পিতই ছিল। নাগরাকাটা থানায় আমরা অভিযোগ দায়ের করব।’’ দীপকের আরও অভিযোগ, পুলিশের সামনেই গোটা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশেরই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করা উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি বলেই দাবি পদ্ম-বিধায়কের।

তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনাকে পরিকল্পিত বলতে রাজি নয়। খগেন, শঙ্করের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করলেও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এ ভাবে হতে পারে না। যারাই করুক, ঠিক করেনি। আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু বিজেপিও মনে রাখুক, মানুষ জানেন, তাঁদের নেতারা একশো দিনের টাকা, আবাসের টাকা-সহ বহু প্রাপ্য থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেছেন। যেটা পরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে দিয়েছেন। বিজেপি বাংলা ভাষাকে অপমান করছে। বাংলাভাষীদের হয়রান করছে ওদের রাজ্যে। তার পর যদি বন্যা এলাকায় কেউ ফটোসেশন করতে ঢোকেন, তা হলে সেটাকে প্ররোচনা ধরাই ভাল। তবে যে পদ্ধতিতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা অবাঞ্ছিত।’’

সোমবারই উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছেন তিনি। তার মধ্যেই নাগরাকাটার ঘটনার পর মমতা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সরকার এবং প্রশাসন সর্বাত্মক ভাবে মানুষের পাশে আছে। আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব। চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়। আমরা একে অপরের পাশে থেকে একসঙ্গে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করব।’

নাগরাকাটার ঘটনার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ কথা শমীক তাঁর এক্স হ্যান্ডলে জানান। তিনি লেখেন, ‘‘নাগরাকাটায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের নৃশংস হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।’’ শমীক জানান, এই ঘটনা নিয়ে রাজনাথের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়। রাজনাথ তাঁকে বলেন, “রাজনীতিতে হিংসার কোনও স্থান নেই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই অন্যায় ও অত্যাচার কখনও মেনে নেবেন না। সবাই মিলে এই হিংসার রাজনীতি প্রতিহত করতে হবে।” এই প্রসঙ্গে শমীক তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেন, “বাংলার মানুষ গণতন্ত্রের শক্তিতে বিশ্বাস রাখেন। সাংসদ খগেন মুর্মু ও আহত কর্মীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”

দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে সোমবার সকাল থেকেই মাঠে নেমেছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সোমবার সকালেই শিলিগুড়ি পৌঁছোন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তার পর তাঁরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দুর্গত এলাকাগুলিতে যান। নাগরাকাটার বামনহাটায় গিয়েছিলেন শমীক, দীপক, খগেন, শঙ্কর এবং জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। শমীক জানান, বামনহাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর তিনি, দীপক এবং জয়ন্ত একটি নৌকায় করে নদীর ও পারের আর একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। পরের নৌকায় যাওয়ার কথা ছিল খগেন এবং শঙ্করের। সেই সময়েই তাঁদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।

বিজেপির অভিযোগ, লাঠি, জুতো নিয়ে খগেন এবং শঙ্করের উপর চড়াও হয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। নদী থেকে পাথর তুলে তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তাতেই মাথা ফাটে খগেনের। গলগল করে রক্ত ঝরতে থাকে। ধাক্কা দেওয়া হয় শঙ্করকেও। শমীকের অভিযোগ, যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলের দুষ্কৃতী। তাঁরা কেউ ওই গ্রামের নন। অন্য গ্রামের। যে গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

শঙ্কর এবং খগেনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে তাঁদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পর দু’বার জ্ঞান হারিয়েছিলেন খগেন মুর্মু। ওঁর চোখের নীচে ফেটে গিয়েছে। নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নাক থেকে রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে। ওঁকে এক নিউরোসার্জন দেখছেন। খগেন মুর্মু ট্রমায় রয়েছেন। শঙ্করের হাতে এক্স রে হয়েছে। যদিও তার রিপোর্ট এখনও মেলেনি।’’

ঘটনার পর শঙ্কর ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। সেখানে তাঁর অভিযোগ, কিছু মানুষ ‘দিদি-দিদি’ বলে তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে গালাগালি করা হয় তাঁদের। তার পর মারধর। বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাদের আগের গাড়ির একটাও কাচ নেই। আমার সারা শরীর কাচে ভর্তি। প্রাথমিক চিকিৎসা করে এসেছি। খগেনদার অবস্থা দেখুন। ‘রিলিফ’ দিতে এসে দেখুন আমাদের সাংসদের কী অবস্থা করেছে। আমার মাথায় বাটাম চালাতে গিয়েছিল। সিটে বসে পড়েছিলাম।’’

উত্তরবঙ্গের উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহের দাবি, সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে এই কাজ করতে পারে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কে বলল এই কাজ তৃণমূলের?’’ পরে আবার বিবৃতি দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমেই আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আমাদের দল কোনও ধরনের হিংসার সমর্থন করে না। আজ যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে বিজেপির নিজের কর্মফল। যখন সাধারণ মানুষ ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তখন বিজেপি নেতারা ১০টির বেশি গাড়ির কনভয় নিয়ে শুধুমাত্র ফোটোশুটের জন্য এলাকায় গিয়েছিলেন, কোনও ত্রাণ ছাড়াই। এতে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং তার পর এই ঘটনা। বিজেপির দীর্ঘ দিনের অন্যায় এবং মানুষের প্রতি অবহেলার ফল এটা।’’

খগেন, শঙ্করের উপর হামলার ঘটনার পর রাজ্যের জায়গায় জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছে বিজেপি। হুগলিতে দলের জেলা কার্যালয় থেকে মিছিল করে জিটি রোড দখল করে বিক্ষোভ দেখায় তারা। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।

North Bengal North Bengal Weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy