Advertisement
E-Paper

১২ দিন আগে জলমগ্ন শহরের বিপর্যয়ের ‘ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ে দ্রুত ঘুম ভেঙে জাগল রাজ্য বিজেপি!

রবিবার দুপুর থেকেই বিজেপির তৎপরতা শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গ নিয়ে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে এলাকা, সেই দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা তার কিছু আগে থেকেই সক্রিয় হয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে পরিস্থিতি বিশদে জেনে দুপুর নাগাদ আসরে নামেন রাজ্য নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:০১
BJP, which was sleeping during Kolkata’s calamity, seems to wake up to North Bengal’s disaster! Did they learn from the blunder 12 days back

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দিতে তৎপর বিজেপি। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সোমবার সকালেই পৌঁছলেন দুর্গত এলাকায়। পাহাড় ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন বিপর্যস্ত অংশে ছুটলেন সাংসদ রাজু বিস্তা, মনোজ টিগ্গা, জয়ন্ত রায়, বিধায়ক দীপক বর্মণ, সুকুমার রায়, পুনা ভেংড়া, মনোজ ওরাওঁ, শঙ্কর ঘোষরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কলকাতার ‘ভুল’ উত্তরবঙ্গে শুধরে নিতে সচেষ্ট হল রাজ্য বিজেপি। বিপর্যস্ত পাহাড় এবং ডুয়ার্সে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সদলবলে ঝাঁপাতে তৎপর হল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল।

শনিবার সারারাত আকাশভাঙা বৃষ্টির জেরে রবিবার সকাল হওয়ার আগেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাহাড় ও ডুয়ার্স। ঠিক ১২ দিন আগে রাতভর এমনই বৃষ্টির ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল কলকাতা। সে দুর্যোগে শহরের বেহাল দশার জন্য প্রশাসন ও শাসকদলকে যতটা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল, রাজ্যের বিরোধী দলের সমালোচনাও তার চেয়ে কিছু কম হয়নি। বিজেপি নেতৃত্ব কেন কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে শহরবাসীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ালেন না, সে প্রশ্ন উঠেছিল। অনেকের মতে, সেই সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপর্যয়ের সকাল বিকেলে গড়ানোর আগেই আসরে নেমে প়়ড়েছিলেন বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগেই সাত তাড়াতাড়ি উত্তরবঙ্গে হাজির হয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও।

রবিবার সকালে বিপর্যয়ের খবর এসেছিল মূলত পাহাড় থেকে। ধস নেমে এবং বিভিন্ন নদী উপচে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ঙের নানা এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাণহানির খবর আসতে শুরু করে। বেলা বাড়তে ডুয়ার্সের পরিস্থিতিও খারাপ হতে শুরু করে। তরাই ও ডুয়ার্সে জেলা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের নানা এলাকা শুধু নয়, কোচবিহারের মতো জেলার কিছু অংশও প্লাবিত হয়।

রবিবার দুপুর থেকেই বিজেপির তৎপরতা শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গ নিয়ে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা তার কিছু আগে থেকেই সক্রিয় হয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে পরিস্থিতি বিশদে জেনে দুপুর নাগাদ আসরে নামেন রাজ্য নেতৃত্বও। সভাপতি শমীক প্রথমে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। প্রশ্ন তোলেন দুর্গা কার্নিভালে মমতার অংশগ্রহণ নিয়ে। জানান, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিজেপি নেতৃত্বকে অবিলম্বে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব জেলা রেহাই পেয়েছে, সেখানকার নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হয়ে নির্বাচন দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছেন বিপ্লব দেব। তিনিও রবিবার দুপুর থেকেই উত্তরের পরিস্থিতি নিয়ে তৎপরতা বাড়ান। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেন, সেখানে আটকে পড়া বাঙালি পর্যটকদের নিরাপদে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে।

দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু ছাড়াও আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় পৌঁছে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছিলেন। একই ভূমিকায় ময়দানে নামেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি ও কালচিনির তিন বিধায়ক আনন্দময় বর্মন, শঙ্কর ঘোষ এবং বিশাল লামা। সোমবার সকালে শমীক পৌঁছনোর পরে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় যান বিজেপির সাংসদ-বিধায়কেরা। ছিলেন উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণও।

বস্তুত, উত্তরবঙ্গে বিজেপির ‘রাজনৈতিক শক্তি’ তুলনায় বেশি। তাদের সাংসদ এবং বিধায়কের সংখ্যাও খুব কম নয়। সেই কারণে রাজ্য বিজেপি তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং লোকবল দ্রুত কাজে নামাতে পেরেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দার্জিলিঙের সাংসদ বিজেপির। সেই ‘দায়’ও দ্রুত ময়দানে নামার তাগিদ হিসাবে কাজ করেছে।

বিজেপির তরফে কোথাও ত্রিপল ও বস্ত্র বিতরণ, কোথাও শুকনো খাবার ও জল পৌঁছে দেওয়া, কোথাও জখম এবং অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, কোথাও ত্রাণ শিবির খুলে দুর্গতদের থাকার অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় অস্থায়ী হেঁশেল খুলে রান্না করা খাবার বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়। বানারহাটের বামনডাঙায় তেমনই একটি গণ হেঁশেলের তদারকিতে হাজির যান শমীক। সেখানেই তার কিছুক্ষণ আগে আক্রান্ত হন বিজেপি সাংসদ খগেন এবং বিধায়ক শঙ্কর। তবে শমীক, মনোজ, দীপক, জয়ন্তরা তার পরেও নাগরাকাটা ও সংলগ্ন বানারহাটের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। স্পি়ড বোটে বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও দেখেন।

তবে ১২ দিন আগে কলকাতায় বিজেপির ভূমিকা একেবারেই এমন ছিল না। পুজোর আগে জলমগ্ন কলকাতার বেহাল দশা নিয়ে শমীক-শুভেন্দুরা শুধু পুরসভা এবং সরকারকে আক্রমণ করে দায় সেরেছিলেন। দু’একটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক জন বিজেপি কর্মীদের ব্যক্তিগত প্রয়াস ছাড়া ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনও চেষ্টাই সে সময়ে করেনি বিজেপি। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছিল, বিরোধী দলের কাজ শুধু সরকারের সমালোচনা করা নাকি শাসকের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলেও ধরা? যার কোনও সদুত্তর বিজেপি নেতাদের কাছে ছিল না। ‘দুর্গত’ কলকাতার পাশে সময়মতো দাঁড়াতে না পেরে বিজেপি যে রাজনৈতিক সুযোগ হাতছাড়া করেছে, তা প্রথম সারির নেতারাও একান্তে আলোচনায় গোপন করেননি।

পুজো মিটতে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় বিজেপিকে সেই ‘ভ্রম’ সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছে। সে সুযোগ বিজেপি কতটা কাজে লাগাতে পারল, তা অবশ্য আগামী বিধানসভা ভোটের আগে বোঝা যাবে না।

Heavy Rain landslide North Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy