E-Paper

অর্থ কমিশনের টাকা খরচে গতি রাজ্যে

প্রধানত গ্রামীণ পরিকাঠামো খাতে অর্থ কমিশনের এই অর্থ খরচ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছিল রাজ্যে। সব জেলা সমান ভাবে অগ্রগতি তুলে ধরতে পারছিল না। ফলে অর্থ কমিশনের দেওয়া টাকা পুরো খরচ করার আগেই পরের বরাদ্দ চলে আসছিল।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫ ০৭:৩০

— প্রতীকী চিত্র।

হাতে রয়েছে একটি মাত্র আর্থিক বছর। তার পরে শুরু হবে ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাজ। এই অবস্থায় চলতি আর্থিক বছর (২০২৪-২৫) শেষ হওয়ার আগেই (৩১ মার্চ) পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের পড়ে থাকা অর্থের খরচে গতি বাড়ানোর কাজ শুরু করল রাজ্য সরকার। তাতে যে কাজ এত দিন তুলনায় বেশ ঢিমেতালে চলছিল, গত দু’মাসে তাতেই খরচ এক ধাক্কায় এক হাজার কোটির বেশি করে ফেলল রাজ্য। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, চলতি অর্থ কমিশনের বরাদ্দ মেয়াদের মধ্যে পুরো খরচ না হলে তা খারাপ বার্তা দেয়। নতুন অর্থ কমিশনের বরাদ্দে যাতে তার কোনও প্রভাব না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে আগেভাগে তাই গতি বাড়ানোর পথে হাঁটল রাজ্য।

প্রধানত গ্রামীণ পরিকাঠামো খাতে অর্থ কমিশনের এই অর্থ খরচ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছিল রাজ্যে। সব জেলা সমান ভাবে অগ্রগতি তুলে ধরতে পারছিল না। ফলে অর্থ কমিশনের দেওয়া টাকা পুরো খরচ করার আগেই পরের বরাদ্দ চলে আসছিল। এ ভাবে বকেয়া খরচের পরিমাণও বাড়তে থাকে। গত বছর থেকেই বরাদ্দ খরচের উপর বাড়তি নজর দিয়েছিল রাজ্য। একাধিক বৈঠক করে প্রত্যেক জেলাকে খরচের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে হয়েছিল মুখ্যসচিবকেও। গত নভেম্বরের শেষে খরচ না হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩৪৮ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে সব জেলা মিলিয়ে মোট বরাদ্দের মধ্যে সে সময় পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৫৪.২২%। ২৪ ফেব্রুয়ারি যে তথ্য জেলা প্রশাসনগুলিকে নবান্ন জানিয়েছে তাতে, খরচ না হওয়া সেই অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৪৫ কোটি টাকা। সব জেলা মিলিয়ে খরচ বেড়ে হয়েছে ৭৪.১৭%। অর্থাৎ এই দু’মাসে খরচ বেড়েছে ১৯.৯৫ শতাংশ বিন্দু। এই খরচের নিরিখে ক্রমতালিকার প্রথমে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর (৮৬.৯৮%), একদম শেষে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (৭.৭১%)। সব জেলা মিলিয়ে দৈনিক খরচের পরিমাণও ২৪ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২ কোটি টাকা।

অর্থ কমিশনের বরাদ্দের ৬০% খরচ করতে হয় সুনির্দিষ্ট খাতে (টায়েড ফান্ড)। তার মধ্যে থাকে পানীয় জল সরবরাহ, জল পরিশোধনের পরিকাঠামো নির্মাণ, কঠিন-তরল-প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো এবং শৌচাগার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। ৪০% অর্থ বরাদ্দ থাকে নির্ধারিত নয় (আন-টায়েড) এমন খাতে। ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে অর্থ কমিশনের মোট ১০,৩২০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা রাজ্যের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ খরচ করা না গেলে, রাজ্যের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০২৬-র ১ এপ্রিল থেকে ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাজ শুরু করার কথা। কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগাড়িয়া কিছু দিন আগে রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের তুলনায় আরও বেশি অর্থের দাবি করেছিলেন (বিজেপিশাসিত-সহ একাধিক রাজ্য একই দাবি করেছিল) অর্থ কমিশনের থেকে। যা বিবেচনায় রাখার আশ্বাসও দিয়েছেন অর্থ কমিশনের আধিকারিকেরা। রাজ্যের আশা, তার আগে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে বাকি থাকা পুরো অর্থের ব্যবহার হয়ত করে ফেলা যাবে। সে কারণে জেলাগুলিকে বাড়তি উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal government Sixteenth Finance Commission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy