Advertisement
E-Paper

দু’চোখে আঁধার, স্মৃতির জোরেই স্কুলের সেরা

মেচগ্রাম পূর্ণচন্দ্র বিদ্যায়তনের ছাত্রী বছর ঊনিশের মাম্পি ৪০৭ নম্বর পেয়েছেন। যা তাঁর স্কুলের সর্বোচ্চ। ইংরেজিতে এবং ভূগোলে মাম্পি লেটার মার্কস পেয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০৩:৩৫
মায়ের সঙ্গে পাঁশকুড়ার মাম্পি। নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে পাঁশকুড়ার মাম্পি। নিজস্ব চিত্র

চোখের আলো নিভেছিল সাত বছর আগে। কিন্তু স্বপ্নের জাল বুনতে তো আর চোখ লাগে না! তাই দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও পড়াশোনা বন্ধ করেননি পাঁশকুড়ার উত্তর মেচগ্রামের বাসিন্দা মাম্পি চক্রবর্তী। স্মৃতিশক্তিকে সম্বল করে কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি এবার বসেছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষায়। মঙ্গলবার বেরিয়েছে সেই পরীক্ষার ফল। তাতে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাম্পি। শুধু উত্তীর্ণ হওয়া নয়, নিজের স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছেন তিনি।

মেচগ্রাম পূর্ণচন্দ্র বিদ্যায়তনের ছাত্রী বছর ঊনিশের মাম্পি ৪০৭ নম্বর পেয়েছেন। যা তাঁর স্কুলের সর্বোচ্চ। ইংরেজিতে এবং ভূগোলে মাম্পি লেটার মার্কস পেয়েছেন। ওই দুই বিষয়ে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৯২ এবং ৮৬। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চাওয়া মাম্পি কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবেন। তিনি বলেন, ‘‘আর একটু বেশি নম্বর আশা করেছিলাম। তবু আমি খুশি যে, মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকাতে পেরেছি। শিক্ষিকা হতে চাই।’’

বাড়ির ছোট মেয়ের সাফল্যে খুশি মাম্পির পরিবার। তবে এই পথটা পার হওয়া মাম্পির কাছে সহজ ছিল না। পরিবার সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিঘা যাওয়ার পথে মাম্পিদের ভাড়া করা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। যমে-মানুষে টানাটানির পরে মাম্পি প্রাণে বাঁচলেও দৃষ্টিশক্তি হারান। সে সময় তিনি
সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। এর পরে চার বছর বন্ধ হয়ে যায় মাম্পির পড়াশোনা। ২০১৬ সালে মাম্পি ফের শুরু করেন পড়াশোনা। সরাসরি ভর্তি হন অষ্টম শ্রেণিতে। তখন থেকে তাঁর পড়াশোনার ‘অস্ত্র’ ছিল স্মৃতিশক্তি। ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে পড়া রপ্ত করতে অসুবিধা হওয়ায় মা কল্যাণী চক্রবর্তী এবং দিদি তনুশ্রী তাঁকে বই পড়ে শোনাতেন। তা শুনেই পড়া মুখস্থ করতেন মাম্পি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরীক্ষায় লেখার জন্য ‘রাইটারে’র সাহায্য নিতে হয়েছিল মাম্পিকে। অন্য সব বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর ‘লিখতে’ মাম্পির অসুবিধা না হলেও অঙ্কে খানিকটা বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। কারণ, অঙ্কের জ্যামিতি তো শুনে মুখস্থ করা যায় না। তাই ওই বিভাগের প্রশ্ন ছুঁতে পারেননি মাম্পি।

মাম্পির লড়াইয়ে সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁর মা কল্যাণীদেবী এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ের অদম্য জেদেই এটা সম্ভব হয়েছে। ওর জীবন যে দিকে চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে পড়াশোনা করার কথা ভাবাই যায় না। ও মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে, এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।’’

মাম্পির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাম্পি এই প্রতিকূলতাকে জয় করে যেভাবে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এ বছর আমাদের স্কুলে সবচেয়ে বেশি নম্বর ও-ই পেয়েছে।’’ মাম্পির আপাতত আশা, তাঁকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন। বাধা জয় করে পড়াশুশোনা চালিয়ে যাবেন।

Madhyamik Result 2019 মাধ্যমিক Madhyamik Result Mampi Chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy