Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি তথ্য: পুরসভাই কাঠগড়ায়

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। অথচ, ডেঙ্গিতে কলকাতা শহরের কত জন বাসিন্দা মারা গিয়েছেন, প্রশ্ন উঠলেই থতমত খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩১

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। অথচ, ডেঙ্গিতে কলকাতা শহরের কত জন বাসিন্দা মারা গিয়েছেন, প্রশ্ন উঠলেই থতমত খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

কেন? ক্ষুব্ধ-বিরক্ত স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, কলকাতা পুরসভার অসহযোগিতার জন্যই ডেঙ্গিতে মৃতদের ঠিকানা যাচাই করা যাচ্ছে না। পুরসভা বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখেছে। স্বাস্থ্য দফতরকে তাই ওই মৃতদের নামের পাশে লিখে রাখতে হয়েছে ‘অ্যাড্রেস ইয়েট টু বি ভেরিফায়েড।’ ফলে, খাস কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃতদের তালিকা সরকারি ভাবে শূন্য থেকে গিয়েছে। এর জন্য ‘তথ্য গোপন’-এর দায় এসে পড়ছে স্বাস্থ্য দফতরের ঘাড়ে।

ঠিকানা যাচাই ঘিরেই স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কলকাতা পুরসভার সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। ঠিকানা যাচাই না-হওয়ার অভিযোগ যে সঠিক, তা মেনেও নিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মিউনিসিপ্যাল সার্ভেল্যান্স অফিসার অমিতাভ চক্রবর্তী।

স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের অধিকাংশই কলকাতা পুরসভার কাজে তিতিবিরক্ত। এক অফিসার তো বলেই বসলেন, ‘‘প্রত্যেক বার ওরা এটা করে। আমরা নবান্নে জানিয়েছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের ধারণা, ইচ্ছাকৃত ভাবেই কলকাতা পুরসভা এটা করছে। কারণ, ঠিকানা যাচাই না-হওয়া পর্যন্ত মৃতরা যে কলকাতারই লোক এবং কলকাতাতেই রোগাক্রান্ত হয়েছেন, সেটা সরকারি ভাবে বলা যাবে না। এবং পুরসভা দাবি করতে পারবে, কলকাতায় এখনও কেউ ডেঙ্গিতে মারা যাননি।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, ‘‘ছ’জন মৃতের বাড়ি কলকাতা পুরসভা এলাকায়। এঁরা যে ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন, সেটা নথিপত্র যাচাই করে আমরা নিশ্চিত করেছি। এঁদের মধ্যে তিন জন সেপ্টেম্বরে মারা গিয়েছেন। কিন্তু পুরসভা এখনও এঁদের ঠিকানা যাচাই করে উঠতে পারছে না। ফলে কলকাতায় মৃতের তালিকায় এঁদের কারও নাম ঢোকানো যাচ্ছে না!’’

দু’-তিন দিন আগেই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষকে কলকাতায় ডেঙ্গিতে ক’জন মারা গিয়েছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জানান, পুরসভার কাজ তালিকা পাঠানো। ৬ জনের নথি স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত তথ্য স্বাস্থ্য দফতর দেবে।

কিন্তু স্বাস্থ্য দফতররের জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুরসভা আমাদের কোনও তথ্য দেয় না। আমরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তা সংগ্রহ করি। তাদের নথি যাচাই করে মৃত্যু ডেঙ্গিতে হয়েছে কি না, তা দেখি। ডেঙ্গি নিশ্চিত হলে তার পর মৃতদের ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলাকে ঠিকানা যাচাই করতে দেওয়া হয়। তারা যাচাই করলে তবেই সেই জেলার মৃতের তালিকায় নামগুলো তোলা হয়।’’ এই কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভাকেও ৬টি ঠিকানা যাচাই করতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। আর কোনও জেলা এ ভাবে দেরি করছে না।’’

স্বাস্থ্য দফতরের আর এক কর্তার প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি তা হলে দিল্লিতে এই ‘অ্যাড্রেস ইয়েট টু বি ভেরিফায়েড’ লেখা রিপোর্ট জমা দেব? এর জন্য তো আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’ এ ব্যাপারে অতীন ঘোষ এবং পুরসভার উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে বহু বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাঁরা টেক্সট-এরও উত্তরও দেননি।

কলকাতা পুরসভার তরফে সার্ভেল্যান্স অফিসার অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাগুলো পুজোর আশপাশে ঘটেছে। তাই ভাল করে ঠিকানা খতিয়ে দেখা যায়নি। এতদিন স্বাস্থ্য দফতরও আমাদের ঠিকানা যাচাইয়ের কথা জোর দিয়ে বলেনি। নবান্নের বৈঠকের পরে ওরা বেশি জোর দিচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘একটু দেরি হয়েছে। মনে হয়, আর ১৫ দিনের মধ্যে সব ঠিকানা যাচাই করে ফেলব।’’

Dengue Death Mosquitoes Kolkata Municipal Corporation KMC Health Department ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy