E-Paper

‘আমরাও পারি, করিনি’, বাঙালি নিগ্রহে বার্তা মমতা ও অভিষেকের

রাজধানী দিল্লি-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি বিষয়টিকে রাজনীতির মাঠেও নিয়ে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ০৮:১৪
(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা অনৈক্য চাই না। কখনও কাউকে বলেছি (ভিন্ ভাষাভাষীদের) রাজ্য ছেড়ে চলে যাও?’’ একই সুরে বিভিন্ন রাজ্যে নিগ্রহের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বললেন, ‘‘আমরাও তো ওই রকম ঘটনা ঘটাতে পারি! কিন্তু তা আমাদের শিক্ষা নয়।’’

রাজধানী দিল্লি-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি বিষয়টিকে রাজনীতির মাঠেও নিয়ে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী। ‘ভাষা-আন্দোলনে’র ডাক দিয়ে সোমবার বীরভূমে আয়োজিত দলীয় মিছিলের শেষে মমতা বলেছেন, ‘‘আমরা ( রাজ্য সরকার) কত ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি! আমি কোনও ভাষার বিরুদ্ধে নই।’’ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমরা যদি সকলকে আশ্রয় দিতে পারি, আপনারা কেন পারবেন না?’’ এ রাজ্যের অন্য ভাষার বাসিন্দাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘আপনারাও আওয়াজ তুলুন, অত্যাচার বন্ধ করো।’’ সেই সূত্রেই মমতার হুঙ্কার, ‘‘দরকার হলে জীবন দেব, কারও ভাষা কেড়ে নিতে দেব না!’’

মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানা ও ওড়িশার মতো কয়েকটি রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপরে এই নিগ্রহ নিয়ে তৃণমূল যে নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই লক্ষ্যেই রবিবার থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় সব জেলায় দলের কর্মী- সমর্থকেরা ভাষার অধিকারের দাবিতে মিছিল করেছেন। বোলপুরেএ দিন সেই কর্মসূচিতে ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। হাতে কখনও বাংলা অক্ষর লেখা প্ল্যাকার্ড, কখনও রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে হেঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপরে আক্রমণের অভিযোগে সরব হয়েছেন। মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ রাজ্যে এসেছেন, তাঁদের কথায় কিছুটা টান আছে। আমরা ভারতীয়েরাই কি সবাই এক সুরে কথা বলি? বীরভূম, মুর্শিদাবাদের ভাষা, কথার টানও তো আলাদা।’’

ভাষার প্রশ্নে এ দিন বিজেপি তথা বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির প্রশাসনকে বিঁধেছেন অভিষেকও। দিল্লি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে তিনি বলেছেন, ‘‘বাঙালিদের উপরে পূর্বপরিকল্পিত অত্যাচার ও হিংসার ঘটনা ঘটছে। এটা বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি।’’ সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাংলায় বহু অবাঙালি মানুষ থাকেন। আমরা মনে করি, তাঁদেরও সমান অধিকার আছে। আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না। ওই রাজনীতি করতে চাইলে, কোচবিহার বা জঙ্গলমহলের মতো এলাকায়, যেখানে বিজেপি ভাল ফল করেছে, সেখানে সমস্ত সরকারি প্রকল্প বন্ধ করে দিতে পারতাম! কিন্তু আমরা তা করিনি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ‘ভাষা আন্দোলন’-এর মঞ্চে আমন্ত্রিত শান্তিনিকেতনের বহু আশ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে নির্যাতনের জন্য আরএসএস-বিজেপিকে নিশানা করে এ দিন কলকাতায় মিছিল করেছে সিপিএম-ও।

মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভাষা-আন্দোলন’কে অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মতে, “প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির মাধ্যমে তৃণমূল সমাজকে খোলা বাজার করে দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলাকে লুপ্ত করে মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তৃণমূল। এই সব থেকে নজর ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রী এখন বাংলা-বাঙালির বিষয়টি বেছে নিয়েছেন। উনি যা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে বাইরের রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরাই বিপর্যস্ত হচ্ছেন।” আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘বোলপুরে ‘ছৌ বাংলা’, ‘ঢোল বাংলা’, ‘গান বাংলা’ অনেক রকম আবোল তাবোল স্লোগান তুলে লোক হাসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী! তবে হাসির রোল শোনা যায়নি বেশি, কারণ লোক বিশেষ জমেনি ! কিন্তু একটা সিদ্ধান্ত ঠিক নিয়েছিলেন, ‘অনুব্রত উবাচ’-এর বিস্ফোরণের পরে ভাষা আন্দোলন কর্মসূচি বোলপুরে করে !’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Abhishek Banerjee TMC Migrant Workers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy