E-Paper

আন্দোলন-লগ্নেও অসন্তোষ জারি রাজ্য বিজেপির অন্দরে

প্রধান বিরোধী দলের অন্দরে একাংশের অভিযোগ, আরজি করে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ঘটনাটি সামনে এসেছিল সকালে। অথচ দলীয় নেতৃত্বের সেখানে পৌছতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২৭
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। —ফাইল ছবি।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নেমেছে একাধিক রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ। একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও। কিন্তু সেই নিয়েও দলের অন্দরে অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে অন্তরায় হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঢিলেঢালা মনোভাব, এমনটাই মনে করছে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধী শিবির। পাশাপাশি প্রকট হচ্ছে পরিষদীয় দলের সঙ্গে মূল দলের বিভাজনও।

প্রধান বিরোধী দলের অন্দরে একাংশের অভিযোগ, আরজি করে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ঘটনাটি সামনে এসেছিল সকালে। অথচ দলীয় নেতৃত্বের সেখানে পৌছতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। দলের যুব মোর্চার ভূমিকাতেও সন্তুষ্ট নয় দলের ওই অংশ। দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে, এসএফআই-ডিওয়াইএফআই প্রধান বিরোধী দলের শাখা সংগঠন। আমাদের যুব মোর্চা, এবিভিপির অস্তিত্ব আছে বলে তো মনেই হচ্ছে না!’’ সূত্রের খবর, অতি সম্প্রতি ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের বৈঠকে এই সব প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে দলের চিকিৎসক শাখার ভূমিকা নিয়েও। কার্যত কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকেও।

অসন্তোষ শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ নেই। পরিষদীয় দলের সঙ্গে মূল দলের বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে। এক বিধায়কের মতে, ‘‘বিধানসভায় সরকার পক্ষকে নাস্তানাবুদ করছে পরিষদীয় দল। এই ঘটনাতেও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিধানসভার মধ্যে কর্মসূচি করলাম আমরা। নবান্ন, রাজভবন ও স্বাস্থ্যভবন ঘেরাওয়ের কথা বললাম। অথচ তার পরেই দলের তরফে বলা হল, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করা হবে। ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাও কবে থেকে বাংলার সংস্কৃতি হল? তৃণমূল যখন সাংসদদের বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা বলেছিল, তখন তা হলে সমালোচনা করেছিলেন কেন?’’

দলীয় কর্মসূচির সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে দলের মধ্যে। দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছিলেন সুকান্ত। সেই কর্মসূচিকে কার্যত অর্থহীন বলে আক্রমণ করেছে দলের ওই অংশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ভাবে দলীয় স্তরে দু’টি কর্মসূচি হয়েছে। প্রথমটি গত ১৪ অগস্ট কলেজ স্কোয়ার থেকে আরজি কর পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি গত শুক্রবার শ্যামবাজারে অবস্থান। দু’টি কর্মসূচিতেই জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো কম। দু’টি কর্মসূচিতেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি হলেও তা সেই ভাবে দাগ কাটেনি। কর্মসূচির একটিতে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা, অন্যটিতে সুকান্ত। শহরে থাকা সত্বেও বিরোধী দলনেতা একটি কর্মসূচিতেও যোগ দেননি। পরে বিজেপির অবস্থান-মঞ্চের পুলিশি অনুমতি না মেলা নিয়ে শুভেন্দুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘এই অভিজ্ঞতা আমার অনেক আছে। আমি ৭৫ বার হাইকোর্টে গিয়েছি অনুমতি আদায়ের জন্য। এর একটাই ওষুধ, হাজারদুয়েক লোককে জড়ো করে রাস্তায় নামা। যাতে এই পুলিশ পালাতে বাধ্য হয়!’’

প্রথম দিন নির্যাতিতার শববাহী গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ, টানা অবস্থান, স্বাধীনতা দিবসের দিন ছদ্মবেশে মিছিল নিয়ে আরজি করের সামনে পৌঁছে যাওয়া, সব মিলিয়ে এক ঝাঁক কর্মসূচিতে প্রধান বিরোধী দলকে কার্যত টেক্কা দিয়েছে সিপিএমের বহু গণ-সংগঠন। তা বুঝতে পেরেই কি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঢিলেঢোলা মনোভাব নিয়ে রুষ্ট নেতা-কর্মীদের একাংশ? যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁয়ের যুক্তি, ‘‘গণ-আন্দোলন মানুষই করতে পারে। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন পথে সেই আন্দোলন হবে।’’ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বিজেপিকে একসঙ্গে রাস্তায় হেঁটে ঐক্যবদ্ধ ছবি দেখাতে হয় না। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জায়গায় দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করছি।’’ আন্দোলনে বামেরা অনেকটাই মুখ্য ভূমিকায় উঠে আসার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত রবিবার আরজি কর-কাণ্ডে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP R G kar Incident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy