বৃষ্টি এবং ধসের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দার্জিলিঙের পার্বত্য এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গলবার মিরিকের দিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে মিরিকে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও থাকবেন তাঁর সঙ্গে।
পাহাড়ের রাস্তাঘাট এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি। ঘুরপথে পাহাড় এবং সমতলের মধ্যে গাড়ি চলাচল করছে। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিকে। দুধিয়া থেকে মিরিকে যাওয়ার পথে একটি লোহার সেতু ভেঙে গিয়েছে। দুর্যোগে বিধ্বস্ত মিরিকের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার আলাদা আলাদা ভাবে সেখানে যাচ্ছেন মমতা এবং রিজিজু। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সোমবার নাগরাকাটায় বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তার পরের দিনই বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতাদের উত্তরবঙ্গ সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
শনিবার রাতভর বৃষ্টিতে দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায় ধস নামে। জলমগ্ন হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও। রবিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন সকালেই উত্তরের জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক সারেন মমতা। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তখনই। সোমবার দুপুরে তিনি পৌঁছে যান শিলিগুড়িতে। উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে মৃতদের পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের এক জন করে সদস্যকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন, দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে মিরিক অন্যতম। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন দুর্যোগের কারণে উত্তরবঙ্গে যে সেতুগুলি ভেঙেছে, তা আবার নতুন করে তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘যে সেতুগুলি ভেঙেছে, সেগুলি ছোট। আমাদের মিরিক সেতু নির্মাণ করতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিরিকে ওই সেতু আবার করে তৈরি করতে এক বছর লাগবে। তবে যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত না-হয়, সেই কারণে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রিজিজুও মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছেন। দু’দিনের সফরে উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে তাঁরও মিরিকে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার পরে উত্তরবঙ্গের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। বুধবার বিজনবাড়িতে যাওয়ার কথা রিজিজুর।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন। বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পরে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি-সহ বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে শুভেন্দুর। সোমবার নাগরাকাটায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে একদল উত্তেজিত জনতার হাতে আক্রান্ত হন দলীয় সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। মঙ্গলবার তাঁদের সঙ্গেও দেখা করবেন শুভেন্দু। রাতের দিকে শিলিগুড়ি পৌঁছোনোর কথা রয়েছে মোদী সরকারের উত্তরপূর্বাঞ্চল উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারেরও। আক্রান্ত দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা রয়েছে এ রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী অভিযান দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিপ্লব দেবেরও।
প্রশাসনিক স্তরের পাশাপাশি দলগত উদ্যোগেও তৃণমূলের তরফে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকাগুলিতে মানুষকে সাহায্যের জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্য দিকে বিজেপিও একই ভাবে মাঠে নেমেছে। সোমবার শুভেন্দু সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে জানান, বিজেপি কর্মীরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় খাবার, ওষুধ, পোশাক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
এরই মধ্যে সোমবার নাগরাকাটায় বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময়ে আক্রান্ত হন খগেন এবং শঙ্কর। তাঁদের উপর হামলার ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’
প্রধানমন্ত্রীর ওই পোস্টের পরই খগেন-শঙ্করের উপর হামলার জন্য রাজ্য ও শাসকদলের নাম জড়ানোর নিন্দা করে পাল্টা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কোনও যাচাই করা প্রমাণ, আইনি তদন্ত বা প্রশাসনিক প্রতিবেদন ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সরাসরি দোষারোপ করেছেন। এটি কেবল নিম্নমানের রাজনীতির উদাহরণ নয়, এটি প্রধানমন্ত্রী যে সাংবিধানিক নীতি বজায় রাখার শপথ নিয়েছেন তার লঙ্ঘন। যে কোনও গণতন্ত্রে আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়। কেবলমাত্র আইনি প্রক্রিয়াই দোষী চিহ্নিত করতে পারে। কোনও রাজনৈতিক টুইট নয়।’’