সাংবাদিক সম্মেলনে সোমেন মিত্র। নিজস্ব চিত্র।
সাংসদের দলবদলে তিনি যে বিস্মিত, সোমবার রাতেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। মঙ্গলবার আরও আক্রমণাত্মক তিনি। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মৌসম বেনজির নুরকে ‘বেইমান’ আখ্যা দিলেন সোমেন। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পাশে বসে এআইসিসি নিযুক্ত পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ বললেন, বাংলায় বিজেপির হাতই শক্ত করছে তৃণমূল। উত্তর মালদহ থেকে আর জিতে ফিরবেন না মৌসম নুর— সোমেন মিত্র এমন মন্তব্যও করেছেন এ দিন।
উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ যে তৃণমূলে যেতে পারেন, সে জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছিল। তবে প্রকাশ্যে মৌসম সে সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকেও তিনি বার বারই জানাচ্ছিলেন, কংগ্রেস ছাড়ার কথা তিনি একেবারেই ভাবছেন না। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মৌসম নুরকে নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা জল্পনা মোটেই অমূলক ছিল না।
মৌসমের দলবদলের খবর সোমবার যে সময়ে সামনে এসেছিল, তখন আর সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা সম্ভব ছিল না প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষে। তাই সোমেন মিত্র সোমবার শুধু একটা বিবৃতি প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এবং গৌরব গগৈ একসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন। সোমেন মিত্র ফের বিস্ময় প্রকাশ করে জানালেন, মৌসমের দলত্যাগের জল্পনা কানে আসায় সোমবার সকালেই তিনি মৌসমকে ফোন করেছিলেন এবং দেখা করতে বলেছিলেন। দেখা করবেন বলে কথা দিয়েও মৌসম আর দেখা করেননি, ফোনও করেননি— দাবি সোমেনের।
আরও পড়ুন: আরামবাগ থেকে ধৃত খাগড়াগড় কাণ্ডে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দুই জঙ্গি
সোমেন এ দিন বলেন, ‘‘মৌসম বেনজির নুর দলের সঙ্গে বেইমানি করলেন।’’ উত্তর মালদহের সাংসদ সোমবার বলেছিলেন, বিজেপি-কে রোখার জন্যই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লড়তে চাইছেন। মঙ্গলবার সোমেন বললেন, মৌসম যা করলেন, তাতে উত্তর মালদহে বিজেপির আরও সুবিধা হল। তবে উত্তর মালদহ আসনটি কংগ্রেসই ধরে রাখবে বলেও সোমেন এ দিন দাবি করেছেন।
সোমবার যে বিবৃতি সোমেন মিত্র প্রকাশ করেছিলেন, তাতেই তিনি জানিয়েছিলেন যে, উত্তর মালদহে এ বার গনি খান চৌধুরীর ভাগ্নে ঈশা খান চৌধুরীকে প্রার্থী করা হবে। মঙ্গলবার ফের সোমেন মিত্র জানিয়েছেন যে, মৌসমের কার্যকলাপ দেখে কংগ্রেস আগে থেকেই ঈশা খান চৌধুরীকে প্রস্তুত রেখেছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চ্যালেঞ্জ, ‘‘উত্তর মালদহ থেকে জিতে ফিরে আসবেন না মৌসম বেনজির নুর।’’ তাঁর দাবি, মৌসমের দলবদল কংগ্রেসকে কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। কিন্তু প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর পরিবারের কেউ এ ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বেইমানি’ করলে ‘মানসিক ক্ষতি’ হয়— মন্তব্য প্রবীণ কংগ্রেস নেতার।
আরও পড়ুন: অসুস্থ বাবাকে নিয়ে রাতভর দৌড় সাব-ইনস্পেক্টরের, সরকারি বিমা শুনেই মুখ ফেরাল ৪ হাসপাতাল
মৌসমের দলবদলের ফলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব যে আরও বাড়ল, তা সোমেন মিত্রের এ দিনের মন্তব্যে স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘এখানে তৃণমূল মুখে বলছে যে, তারা বিজেপি বিরোধী। কিন্তু এই রাজ্যে কংগ্রেসকেই তৃণমূল শেষ করছে। তাই ওদের সঙ্গে সমঝোতার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। সেটাই আমি দিল্লিকে বলেছি।’’
এআইসিসি নিযুক্ত পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈয়ের গলাতেও শোনা গিয়েছে একই সুর। মৌসমের দলবদলকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে গৌরব সোমবার বলেন, ‘‘যে পার্টি দিল্লিতে গিয়ে আমাদের দলের নেতাদের রসগোল্লা খাওয়ায়, সেই পার্টিই বাংলায় আমাদের দলকে ভাঙছে, আমাদের কর্মীদের মারছে। সেই পার্টির সঙ্গে কী করে হাত মেলাব!’’ গৌরবের কথায়, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর বিরোধী। এই রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনা শূন্য।’’
তৃণমূল বাংলায় বিজেপির হাতই শক্ত করছে বলেও গৌরব এ দিন দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘অমিত শাহ মালদহে গিয়ে বলেছিলেন যে, মালদহে কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে। মৌসমকে দলে টেনে তৃণমূল সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করল। কিন্তু তা-ও বলছি, সেখানে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না। মালদহে কংগ্রেস ভাল ফল করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy