Advertisement
E-Paper

জলদি সিদ্ধান্ত নিন, আবেদন সনিয়াকে

বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গেই জোট চেয়ে সোমবার রাহুল গাঁধীর কাছে সওয়াল করেছিলেন রাজ্যের অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়ে রাহুল কিছুটা সময় নিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৩

বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গেই জোট চেয়ে সোমবার রাহুল গাঁধীর কাছে সওয়াল করেছিলেন রাজ্যের অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়ে রাহুল কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু রাহুল কথা বলার আগেই সনিয়ার কাছে দরবার করা শুরু করে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাই। এবং সেই সঙ্গে রাহুলের মনোভাব আঁচ করে তথাকথিত ‘একলা চলো-পন্থী’ নেতাদেরও সুর নরমের ইঙ্গিত মিলল।

কংগ্রেস সহ-সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে মূলত একলা চলার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া। কিন্তু রাত পোহাতেই সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে মানসবাবু বলেন, তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’ যা-ই থাক, হাইকম্যান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই তিনি মাথা পেতে নেবেন। পরে মানসবাবু বলেন, ‘‘আমি দলের গর্বিত সেবক। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করা আমার ডিএনএ-তে নেই!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান খালেদ এবাদুল্লাকে সঙ্গে নিয়ে সস্ত্রীক মানসবাবু এ দিন সনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকেই তাকিয়ে। তাই হাইকম্যান্ড দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালে ভোট-প্রস্তুতির সুবিধা হয়। শেষ মুহূর্তে হুড়োহুড়ি করতে হয় না!

মানসবাবু যদি রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে একলা চলার পক্ষে সওয়াল করে থাকেন, তা হলে মালদহের বর্ষীয়ান সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী ছিলেন বামেদের সঙ্গে জোটের প্রবল প্রবক্তা! তিনি সোমবারই ওই বৈঠকের আগে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসেন। ফলে ডালুবাবু এবং মানসবাবুর মাধ্যমে জোট নিয়ে রাজ্য নেতাদের মতামত মোটামুটি ভাবে সনিয়ার জানা হয়ে গিয়েছে। এ বার রাহুলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে রাজ্য কংগ্রেসের বড় অংশের আশা।

এ দিকে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে সামান্য হলেও অশান্তির মেঘ ঘনিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। বৈঠকে রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি জোটের বিপক্ষে, একলা চলার পক্ষে সওয়াল করেছেন বলে দলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল। একান্ত আলোচনায় দীপা এ দিন অনুযোগ করেন যে, তাঁকে জোটের বিরোধী বলে তুলে ধরে কিছু নেতা সংবাদমাধ্যমকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন! বামেদের সঙ্গে জোট করতে হলে সেই আলোচনার কাঠামো কী হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। দলের অন্য সূত্র আবার বলছে, আসলে আসন বণ্টনের সমীকরণ কী হবে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ চিন্তায় রয়েছেন দীপা। যে যেখানে জিতেছে, সে সেখানে প্রার্থী দেবে— এই যদি অঙ্ক হয়, তা হলে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট থাকলে রায়গঞ্জে তাঁর পক্ষে লড়াই করা সম্ভব হবে না। কারণ ওই আসনে জিতেছেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। ফলে দীপা জোর দিয়ে জোট করার কথা বলেননি। আবার জোটের বিরোধিতাও করেননি।

কংগ্রেস শিবিরে সার্বিক এই পরিস্থিতির মাঝেই এ দিন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে দলের রাজনৈতিক লাইন কী হবে, তা পার্টি কংগ্রেসে এক বার স্থির হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটি খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসবে। জোট তথা রাজনৈতিক কৌশলের ব্যাপারে আলোচনা করে তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাবে। তার পরে এ মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছে আলিমুদ্দিন। সেখানেই রাজ্যের অবস্থান আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থির হওয়ার সম্ভাবনা।

সিপিএমের একাংশের মতে, কারাটের মন্তব্য শুনে এটা মনে করার কিছু নেই যে, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সার্বিক বিরোধিতা করছেন! তিনি আদতে সিপিএমের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াগত দিকটিই তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে দলের মধ্যে দু’রকম মতের (বঙ্গ ও কেরল ব্রিগেড) ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাও করছেন।

বস্তুত, সিপিএম নেতৃত্ব এখন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। নীতীশ কুমারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী কী ভাবে তাঁকে বামেদের সঙ্গে জোট না করার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন, সোমবার বৈঠকে সে গল্প ফাঁস করে দিয়েছিলেন রাহুল! তাতেই প্রদেশ নেতারা বুঝে নিয়েছেন, রাহুলের মনোভাব তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার বিপক্ষে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হবেন বুঝেও রাহুল ওই ঘটনা রাজ্য নেতাদের বলেছেন! কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুলের বৈঠকের আগেই হাইকম্যান্ডের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে জোট-সূত্র নিয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সি পি জোশী এবং প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের। তবে প্রকাশ্যে কেউ এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।

বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রথম প্রবক্তা যিনি ছিলেন, সেই কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেছেন, ‘‘উভয় পক্ষের উচিত জোটের আবহ তৈরি করা ও তা আরও মজবুত করা। বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে জোটের পরিবেশে আঁচ পড়তে পারে।’’ সে দিক থেকে মানসবাবুর এ দিনের বক্তব্য প্রদেশ নেতাদের স্বস্তিই বাড়িয়েছে!

Congress Sonia Gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy