—ফাইল চিত্র।
ফড়েদের হাত এড়িয়ে চাষিরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সেই জন্য সহায়ক-মূল্য বাড়িয়ে এবং ধান কেনার শিবির খুলে আগেই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার আলুচাষিদের সাহায্য করতে এগিয়ে এল তারা। কুইন্টাল-প্রতি ৫৫০ টাকা দরে আলু কিনবে সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, চাষিরা মাঠ থেকে আলু তুলে বস্তাবন্দি করে হিমঘরে পৌঁছে দিলেই এই হারে দাম পেয়ে যাবেন। রাজ্য সরকার ১০ লক্ষ মেট্রিক টন (উৎপাদিত আলুর ১৫ শতাংশ) আলু কিনবে। হিমঘর-মালিকদের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি এই আলু কেনা হবে। আলু কেনার জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে হিমঘর-মালিকদের ১০০ শতাংশ টাকা আগাম ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এমন ব্যবস্থা রাজ্যে এই প্রথম। এই ঋণ নেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করছেন হিমঘর-মালিকেরা। কটাক্ষও শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, লোকসভার ভোট আসন্ন। সেই দিকে চোখ রেখেই আলুচাষিদের জন্য এই বন্দোবস্ত।
যে যা-ই বলুক, আলুচাষিরা যাতে কোনও ভাবেই বিপাকে না-পড়েন, সেই জন্য কারচুপির রাস্তা বন্ধ করতে আট ঘাট বেঁধে নামছে সরকার। যে-সব চাষি আলু বিক্রি করবেন, সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও-র তৈরি করা তালিকায় আলুচাষি হিসেবে তাঁদের নাম থাকতে হবে। বিডিও-রা সেই তালিকা দেবেন হিমঘর-মালিকদের। সেই তালিকা ধরেই চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনতে হবে। ১ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ভাবে আলু কেনার কথা। হিমঘর-মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃষ্টির জন্য ১ মার্চ আলু কেনার কাজ শুরু করা য়ায়নি। ৮ মার্চ শুরু হবে। তাই কেনার সময়সীমা ১৭ মার্চের পরেও বাড়ানো হবে সাত দিন।
এ বছর প্রচুর আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হিমঘর-মালিকদের একাংশের হিসেব, গত বছর রাজ্যে এক কোটি মেট্রিক টন আলু হয়েছিল। এ বছর হবে প্রায় এক কোটি ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন। চাষিরা যাতে ন্যায্য দাম পান, সেই জন্যই ‘মার্কেট ইন্টারভেনশন স্কিম’ চালু করেছে রাজ্য। এই প্রকল্পে আলু কেনা হবে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর দিনাজপুরে।
চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কেনার বিষয়টি দেখভাল করবেন জেলাশাসকেরা। পুলিশ সুপার এবং রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারাও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। কৃষি বিপণন দফতরের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এক জন আলুচাষি এই প্রকল্পে সর্বাধিক ২৫ কুইন্টাল আলু হিমঘর-মালিকদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। হিমঘর-মালিকের কাছে আলু বিক্রির আগে চাষিকে সংশ্লিষ্ট বিডিও অফিসে গিয়ে জমির কাগজ, সচিত্র পরিচয়পত্র, কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে স্লিপ বা চিরকুট নিতে হবে। আলু বস্তাবন্দি করে সেই সরকারি চিরকুট নিয়ে হিমঘর-মালিকদের কাছে যেতে হবে। জমা দিতে হবে চাষির সচিত্র পরিচয়পত্রের ফোটোকপি, পাসবইয়ের প্রথম পাতা। হিমঘর-মালিকেরা পাসবুক দেখে চেকে আলুর দাম দেবেন কৃষকদের।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে জ্যোতি আলু কেনা হবে। প্রতিটি আলুর আকার হতে হবে ৫০ মিলিমিটার থেকে ১০০ মিলিমিটারের মধ্যে। আলুর মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করবেন কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরা। প্রতিটি হিমঘরে গিয়ে আলু পরীক্ষা করবেন তাঁরা। সব হিমঘরে এই প্রকল্পের জন্য ২০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy