Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিক-যুদ্ধে জয় দিল্লির, বঙ্গ ব্যর্থই

পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক দূরীকরণে তাঁরা সক্রিয়। বিধানসভায় এই বিষয়ে কঠোরতর নতুন আইন পাশ করতে চলেছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫২

আইন আছে। কিন্তু আছে শুধু কাগজে-কলমেই। তার সদ্ব্যবহার নেই এ রাজ্যে! ফলে খাস কলকাতা থেকে জেলা শহর, সর্বত্র প্লাস্টিকের পাতলা ক্যারিব্যাগের দাপট অব্যাহত।

গত বৃহস্পতিবারেই দিল্লিতে ৫০ মাইক্রনের পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর যাবতীয় নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, দিল্লি যদি পারে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ পারবে না কেন?

পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক দূরীকরণে তাঁরা সক্রিয়। বিধানসভায় এই বিষয়ে কঠোরতর নতুন আইন পাশ করতে চলেছেন তাঁরা। কিন্তু অনেক পরিবেশকর্মীর প্রশ্ন, আইন তো ছিলই। এখনও আছে। কিন্তু তা যথাযথ ভাবে বলবৎ করা হয়নি। হচ্ছেও না। নিয়মবিধি মেনে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ না-করলে নতুন আইন পাশ করিয়ে কী লাভ হবে?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ২০০৬ সালে ৪০ মাইক্রন বা তার চেয়ে পাতলা ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে কেন্দ্র আইন সংশোধন করে ৫০ মাইক্রন বা তার চেয়ে পাতলা ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করলে পুরসভা বা পঞ্চায়েত পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে। পরিবেশ রক্ষা আইনে মামলা হলে আদালতে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু জরিমানা করবে কে?

আরও পড়ুন: পৃথক পথের সারথি কারা, প্রশ্ন সিপিএমে

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পুরসভা বা প্রশাসনের চোখের সামনেই তো দোকান-বাজারে দেদার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার। মাঝেমধ্যে একটু-আধটু লোকদেখানো অভিযান হয় মাত্র। এই ব্যাপ্ত প্লাস্টিক-দাপটের মধ্যে দক্ষিণ দমদমের বাঙুর বা দার্জিলিঙের মতো প্লাস্টিকবিহীন কিছু এলাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো টিকে আছে। খাস কলকাতাতেই চলছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের রমরমা। প্রায় প্রতি বছর মহানগরীর জলমগ্ন হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে প্লাস্টিককেই দায়ী করে থাকেন পুরকর্তারা।

পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্লাস্টিক পচনশীল নয়। তাই তা মাটিতে মিশে যেতে পারে না। ফলে এক বার পরিবেশে প্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ ঘটলে তার থেকে দূষণ ছড়াতেই থাকে।’’ তিনি জানান, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ যে শুধু নিকাশি ব্যবস্থাকে নষ্ট করে তা-ই নয়। জলাশয়ে প্লাস্টিক জমতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী। তা বিষিয়ে তোলে মাটিকেও।

পরিবেশের সমূহ সর্বনাশ ঘটাচ্ছে যে-প্লাস্টিক, আইন প্রণয়ন করেও তার দাপট আটকানো যাচ্ছে না কেন?

‘‘নিজেদের বাঁচাতে হলে প্লাস্টিক রুখতেই হবে। তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর জনসচেতনতা, দু’টিই জরুরি,’’ বলছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা। কলকাতা পুরসভার মেয়র-পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার অবশ্য মনে করেন, জোর করে বা আইন দেখিয়ে প্লাস্টিক বন্ধ করা যাবে না। তার বদলে সচেতনতাকেই হাতিয়ার করতে চান তিনি। পরিবেশ দফতরের একাংশের দাবি, জোর করে ক্যারিব্যাগ কারখানা বন্ধ করে দিলে বহু মানুষের রুজিরুটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু কাগজে-কলমে আইন প্রণয়নের পরে তা বলবৎ না-করে শুধু সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টায় আদৌ প্লাস্টিক রোখা কি সম্ভব?

উত্তর মিলছে না।

plastic Carry bag West Bengal National Green Tribunal Plastic Pollution প্লাস্টিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy