কর্মরত যে সকল প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা টেট-উত্তীর্ণ নন, তাঁদের আবার পরীক্ষায় বসতে হবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়েছিল, চাকরি রাখতে গেলে টেট পাশ হতেই হবে। শীর্ষ আদালতের এই রায় পুনর্বিবেচনার পথে হাঁটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে প্রস্তাব গিয়েছে নবান্নে। দফতর সূত্রের খবর, নবান্ন থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললে আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হবে।
ইতিমধ্যে একাধিক রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের টেট সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সে পথে হাঁটতে পারে। সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ঘিরে রাজ্যের শিক্ষক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যাঁরা গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করছেন, তাঁরাও এই নির্দেশের আওতায় পড়ছেন। ফলে অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের প্রায় এক লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নতুন করে টেটে বসতে হবে। এর প্রভাব প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠনে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রাথমিক- উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠনের কথা ভেবে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোর জন্য সরকারের কাছে দরবার করছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আমরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। রাজ্য রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে চলেছে শুনে ভাল লাগল। ইউপিএ সরকারের আমলে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রক্ষাকবজ দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী আমাদের জয় নিশ্চিত।’’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বাংলায় তৎপরতা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। গত মাসে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জেলায় জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। কোন জেলায় কত জন শিক্ষককে টেট দিতে হবে? সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মধ্যে কে কবে অবসর নেবেন? কবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন? জেলা কর্তৃপক্ষকে এই সমস্ত তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে বলেছিল পর্ষদ।
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পদোন্নতির জন্যেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে টেট পাশ হতে হবে। আগামী দু’বছরের মধ্যে টেট-উত্তীর্ণ হতে পারবেন যাঁরা, তাঁদের চাকরি থাকবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দেবেন বা অন্তিম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরের জন্য আবেদন করবেন। তবে যে সব শিক্ষক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অবসর নেবেন, তাঁদের টেট উত্তীর্ণ না-হলেও চলবে।