Advertisement
E-Paper

‘বাংলাদেশি’ তকমা বৈষম্যমূলক ও অন্যায়! কোন কোন এলাকায় বাঙালি হয়রানি জানিয়ে ওড়িশা সরকারকে চিঠি পাঠাল নবান্ন

গত ২৫ জুন ওড়িশায় কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের ১৬ জন শ্রমিককে আটক করে সে রাজ্যের পুলিশ। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে তাঁদের আটক করার খবর প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার ডট কমে। ওই শ্রমিকেরা বীরভূম জেলার বাসিন্দা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ১৮:১২
বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানির অভিযোগ নিয়ে ওড়িশা সরকারকে চিঠি পাঠাল নবান্ন।

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানির অভিযোগ নিয়ে ওড়িশা সরকারকে চিঠি পাঠাল নবান্ন। —নিজস্ব চিত্র।

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করার ঘটনায় এ বার ওড়িশা সরকারকে চিঠি পাঠাল রাজ্য। বৃহস্পতিবার ওড়িশার মুখ্যসচিব মনোজ আহুজাকে চিঠি পাঠিয়ে ওই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। চিঠিতে পন্থ লিখেছেন, শুধুমাত্র নিজেদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার জন্য যে ভাবে তাঁদের অন্যায় ভাবে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা দুঃখজনক। এই ধরনের ঘটনা শুধু অন্যায় এবং বৈষম্যমূলকই নয়, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকারেরও পরিপন্থী।

ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় কাজে যাওয়া রাজ্যের শ্রমিকের ক্রমাগত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে সে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জানিয়েছেন পন্থ। চিঠিতে বাংলার মুখ্যসচিব লিখেছেন, হয়রানির শিকার হওয়া ওই ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ রয়েছেন দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক, কেউ আবার পরিচারকের কাজ করেন। কেউ কেউ আবার দীর্ঘদিন ধরে ওড়িশায় বাস করছেন। ওড়িশার কোথায় কোথায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা-ও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন পন্থ। রাজ্যের মুখ্যসচিব লিখেছেন, পারাদ্বীপের আশপাশের এলাকা, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপড়া, ভদ্রক, মালকানগিরি, বালেশ্বর এবং কটকের মতো উপকূলীয় জেলাগুলিতে কোনও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের আটক করা হচ্ছে।

গত ২৫ জুন ওড়িশায় কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের ১৬ জন শ্রমিককে আটক করে সে রাজ্যের পুলিশ। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে তাঁদের আটক করার খবর প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার ডট কমে। ওই শ্রমিকেরা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ ওই শ্রমিকদের আত্মীয়পরিজন তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি। ওড়িশার রেমুনা থানার পুলিশ তাঁদের আটক করে। তাঁরা এখনও ছাড়া পাননি। নলহাটির ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতির কথা মুখ্যসচিব পন্থের নজরেও আসে। তাঁদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।

বৃহস্পতিবার ওড়িশা সরকারকে পাঠানো চিঠিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানির শিকার হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পন্থ। তাঁদের কাছে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, বিদ্যুতের বিল-সহ বিভিন্ন বৈধ নথিপত্র থাকার পরেও কেন তাঁরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রাজ্য সরকারের। শ্রমিকদের কাছে বেশ কয়েক প্রজন্ম আগের জমির নথি চাওয়াও এক অযৌক্তিক দাবি বলে মনে করছেন বাংলার মুখ্যসচিব। পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিদের পরিচয় এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার পরেও অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা হয়রানি থেকে মুক্ত হচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন পন্থ। এই ধরনের ঘটনা ভীষণ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।

এই ঘটনাগুলি বন্ধ করতে ওড়িশার মুখ্যসচিবের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ঘটনাগুলি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন পন্থ। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে নির্বিচারে আটক বা হয়রানি করা না হয়, সেই কথাও চিঠিতে লিখেছেন বাংলার মুখ্যসচিব।

শুধু ওই একটি ঘটনাই নয়, গত সপ্তাহে কটকের মাহঙ্গা থানা এলাকায় আরও ১৯ জন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহ পাকড়াও করা হয়েছিল। তাঁরা মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে তালগাছির বাসিন্দা। ওই ১৯ জনকে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। বৃহস্পতিবার রাজ্যে ফিরে এসেছেন তাঁরা। তবে পর পর এই ঘটনাগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসন।

গত কয়েক মাসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করার ঘটনা বারবার ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। গত ১০ জুন মুম্বই পুলিশ ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করেছিল। অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের ভারতীয় পরিচয়পত্র মুম্বই পুলিশকে পাঠানো সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে বিএসএফের মাধ্যমে তাঁদের সটান বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে হরিহরপাড়া, বেলডাঙা এবং পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা তিন জনকে দেশে ফেরানো হয়।

বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সভাপতি সামিরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যে ফিরে আসা শ্রমিক-প্রতিনিধিরা।

বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সভাপতি সামিরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যে ফিরে আসা শ্রমিক-প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়ার ঘটনায় এ বার আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলা-সহ কলকাতা হাই কোর্টে মোট তিনটি মামলা দায়েরের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের বৃহস্পতিবার ডাকা হয়েছিল কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের দফতরে। সেখানে পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ‍্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁদের। বৈঠকে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সবরকম আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সামিরুল। সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের তরফে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুখ এবং অর্ণব পাল একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওড়িশায় কর্মরত পাঁচ জন লরিশ্রমিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। এ ছাড়া হরিহরপাড়ার যে দুই শ্রমিককে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাও যৌথ ভাবে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।

Nabanna Migrant Workers West Bengal government Odisha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy