Advertisement
E-Paper

বাবার চিকিৎসার টাকায় বর্ধমানে দুঃস্থদের সেবা মহিলা কনস্টেবলের

বছর সাঁইত্রিশের মাহিনুর জানান, ১৫-১৬ বছর ধরে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাঁর বাবা প্রাক্তন বাসচালক মাসুদ চৌধুরীর।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০৩:৫২
খাদ্যসামগ্রী বিলি করছেন মাহিনুর খাতুন।

খাদ্যসামগ্রী বিলি করছেন মাহিনুর খাতুন।

বাবার হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা করানোর জন্য লক্ষাধিক টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার পরে, দু’মুঠো খাবারের জন্য এলাকার বহু গরিব পরিবারকে বিপাকে পড়তে দেখে সিদ্ধান্ত বদলান। সঞ্চিত সে টাকায় আপাতত দিনের পর দিন দুঃস্থদের খাবার কিনে দিচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের মহিলা কনস্টেবল মাহিনুর খাতুন।

বছর সাঁইত্রিশের মাহিনুর জানান, ১৫-১৬ বছর ধরে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাঁর বাবা প্রাক্তন বাসচালক মাসুদ চৌধুরীর। দু’বার স্ট্রোক হয়েছে। শ্বাসকষ্টও রয়েছে। সম্প্রতি বুকের ‘স্ক্যান’ করানোর পরামর্শ দেন ডাক্তার। ঠিক ছিল, চিকিৎসা করাতে বাবাকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাবেন মেয়ে। কিন্তু তার আগেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়।

মাহিনুরের বাড়ি বর্ধমান শহর লাগোয়া খাগড়াগড়ে। বাড়িতে বাবা-মা-বোন রয়েছেন। কলকাতায় দাদা-বৌদি। ২০০৭ সালে জেলা পুলিশে যোগ দেন বাংলায় এই স্নাতক। বর্তমানে কর্মরত এনফোর্সমেন্ট বিভাগে। ‘ডিউটির’ ফাঁকে বাজার থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকার খাদ্যসামগ্রী কিনে বিলি করা শুরু করেন তিনি।

আরও পড়ুন: দীর্ঘ নিভৃতবাস শেষে জুটল থালাভরা ভাত

মাহিনুর বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে বাবার চিকিৎসা করানোর জন্য টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু লকডাউনের পরে, অনেক গরিব মানুষকে খাবারের জন্যে ছোটাছুটি করতে দেখছি। তাঁদের হাতে খাবার তুলে দেওয়াই কর্তব্য ও দায়িত্ব বলে মনে করেছি।’’ জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো কাজ করছেন উনি।’’

স্থানীয় সূত্রের দাবি, সকাল-দুপুর-বিকেলে শুধু খাগড়াগড় নয়, পাশের সরাইটিকর, কেষ্টপুর, বাদশাহী রোড, দুবরাজদিঘি, মাঠপাড়ার মতো এলাকার বাসিন্দারাও মাহিনুরের বাড়ির সামনে লাইন দিচ্ছেন। সে লাইনে মানতে হচ্ছে দূরত্ব বজায় রাখা, ‘মাস্ক’ পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি। তবে মিলছে প্যাকেট। এক-একটি প্যাকেটে তিন কেজি চাল, তিন কেজি আলু, পেঁয়াজ, ডাল, সর্ষের তেল এবং মুড়ি থাকছে। গত কয়েক সপ্তাহে তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে সে প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। পড়শিরা জানান, আগেও নানা সামাজিক কাজে তাঁরা পাশে পেয়েছেন মাহিনুরকে। তা কারও মেয়ের বিয়েই হোক, বা কারও চিকিৎসার প্রয়োজন। প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্বপ্না দাস, ঝুমা দাসেরা বলেন, ‘‘আমরা খেতমজুর। কাজ না করলে খাবার জোটে না। অনেক দিন ঘরে বসে আছি। এলাকার মেয়ে মাহিনুর অন্নপূর্ণার মতো পাশে থাকায়, খাবারের অভাব হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন: রিকশা চালিয়েই বারাণসী থেকে বাংলায়

মাহিনুরের বাবা বলেন, ‘‘আমার চিকিৎসা পরেও হতে পারে। কিন্তু এই সময় মানুষের খিদে মেটানোটা জরুরি।’’ মাহিনুর বলেন, ‘‘বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা আছে। তবে আশা রাখি, সমস্যা হলে পড়শিদের পাশে পাব। তাই দুশ্চিন্তা নেই।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

West Bengal Lockdown Woman Constable Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy