Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

রিকশা চালিয়েই বারাণসী থেকে বাংলায়

কিশোরবাবু জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। একাই থাকেন সেখানে। বছরের আট মাস কাটে বারাণসীতে।

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: বাড়ির পথে কিশোর সাউ। নিজস্ব চিত্র

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: বাড়ির পথে কিশোর সাউ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০১:৩১
Share: Save:

গত এক মাস ধরে এক জন যাত্রীও পাননি। টাকার টানাটানি উঠেছে চরমে। অগত্যা আর অপেক্ষা না-করে নিজের রিকশা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন বাড়ির পথে। বুধবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির ডুবুরডিহি সীমানা পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশের পরে খানিক স্বস্তি পেলেন হাওড়ার বালির বাসিন্দা কিশোর সাউ।

কিশোরবাবু জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। একাই থাকেন সেখানে। বছরের আট মাস কাটে বারাণসীতে। বাকি চার মাস পৈতৃক বাড়ি বালিতে থাকেন তিনি। কিশোরবাবু বললেন, ‘‘বারাণসীতে রোজগার ভালই হয়। তবে বর্ষাকালে মন্দা চলে। সেই সময়ে বালির বাড়িতে চা ও তেলেভাজার অস্থায়ী দোকান খুলে সংসার চালাই। মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে এক জন যাত্রীও পাইনি। এক মাস দাঁতে দাঁত চেপে পড়েছিলাম সেখানে। আর পেরে উঠলাম না। ২৮ এপ্রিল নিজের রিকশা নিয়েই বাড়ির পথ ধরি।’’

ফেরার পথে অতি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস রিকশায় বেঁধে নেন তিনি। টানা আট দিন রিকশা চালিয়ে মঙ্গলবার সকালে ডুবুরডিহি সীমানায় আটকে পড়েন। তবে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বুধবার তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করায় বলে জানান কিশোরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পরীক্ষার রিপোর্ট ও শংসাপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, সরকারের নির্দেশ রয়েছে, ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এর পরে পরিস্থিতি বিচার করে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। সেই নির্দেশ মেনেই তাঁকে ছাড়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি মানুষ নিখরচায় পাবেন মনোবিদদের পরামর্শ, ব্যবস্থা রাজ্যের

ডুবুরডিহি সীমানায় দাঁড়িয়ে কিশোরবাবু জানান, বালিতে তাঁদের আট পুরুষের বসবাস। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি বারাণসীতে রিকশা চালাতে চলে যান। বালির বাড়িতে তাঁর অন্য আত্মীয়-পরিজনেরা রয়েছেন। স্ত্রী মারা গিয়েছেন। এক ছেলে কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বারাণসীতে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের জনা ১৯ রিকশাচালক একসঙ্গে থাকেন। লকডাউনের জেরে এখন আর কেউই সেখানে নেই। সকলেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। এই ছন্নছাড়া সময়ে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই কিশোরবাবুর। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় দীর্ঘ ক্ষণ লঙ্গরখানায় দাঁড়িয়ে থেকে আধপেটা খাবার জুটত তাঁর। তার উপরে পরিবারের চিন্তা। অবশেষে নিজের রাজ্যে ঢুকতে পেরে খুশি কিশোরবাবু। বললেন, ‘‘ভবিষ্যতে আর কাশীতে ফেরার ইচ্ছে নেই। বাকি জীবনটা বালির বাড়িতেই কাটাব।’’

আরও পড়ুন: ফের রাজ্যকে কড়া চিঠি কেন্দ্রের, লকডাউনের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE