Advertisement
E-Paper

উন্নয়ন হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়াতে পারে রাজ্য: কৌশিক বসু

বামফ্রন্টের আমলে রাজ্যের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে হলে, বড় শিল্প আনার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব করতে হবে। বললেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুবামফ্রন্টের আমলে রাজ্যের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে হলে, বড় শিল্প আনার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব করতে হবে। বললেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৩

ভারতের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দেশের অর্থনীতির আগাপাশতলা দেখেছেন। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে গোটা বিশ্বের উন্নয়নের ছবি দেখছেন। পশ্চিমবঙ্গকে ঠিক কোথায় রাখবেন?

কৌশিক বসু: সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু মন্দ করছে না। আংশিক ভাবে হলেও, উন্নয়ন হচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এক কালে গোটা দেশে বাংলা যেমন অগ্রগণ্য ছিল, এখন আর সেই জায়গাটা নেই। বামফ্রন্টের আমলে একটা বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তবে, ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। খুবই সম্ভব।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটিমাত্র পরামর্শ দেওয়ার থাকলে কী বলবেন?

বলব, বড় শিল্প আর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে আনার জন্য যা প্রয়োজন, সব করুন। গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের কথা ভাবলে, আরও বেশি করে করুন। গোটা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা বলছে, বড় শিল্প এলে গ্রামাঞ্চলের জমির দাম বাড়ে, ফলে জমির ওপর নির্ভরশীল মানুষের হাতে টাকা আসে। সেটা প্রয়োজন। জমির বাজার যাতে কয়েক জন বড় দালালের হাতে না চলে যায়, তার জন্য একটু বুদ্ধি করে খেলতে হবে, নীতি স্থির করতে হবে। সেখানে সরকারের মস্ত ভূমিকা রয়েছে।

আপনি নিজে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া বাঙালি। আন্তর্জাতিক স্তরে বাঙালিরা কেমন করছেন?

বিদেশে বাঙালিরা যথেষ্ট সফল। আগেও ছিল, এখনও আছে। কিন্তু, শুধু প্রবাসীদের সাফল্য দিয়ে তো হবে না। রাজ্যটার উন্নতি করতে হবে। শিক্ষা বাঙালির মস্ত বড় জায়গা ছিল। এক খ্যাতনামা শিল্পপতি আমায় বলেছিলেন, হাজার ঝামেলা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ লাভজনক, কারণ এই রাজ্যে স্কিল অর্থাৎ পেশাদারি দক্ষতার মান খুব উঁচু। সেই জায়গাটা খানিক নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এক বার বড় শিল্প আসতে আরম্ভ করলে তার টানে বাকি উন্নতিও হবে।

আর, ভারতের ছবিটা কেমন?

বৃদ্ধির হারের অঙ্কে বেশ ভাল। দুনিয়ার বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে বৃদ্ধির হারের নিরিখে ভারত এক নম্বরে। কিন্তু, সেটাই সব কথা নয়। আয়ের অঙ্কে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু সে দেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ভারতের তুলনায় তিন বছর বেশি। শিশুমৃত্যুর হার কম। আয়বৃদ্ধির হার যে অলিম্পিকস-এর রেস নয়, এই কথাটা ভারতে মাঝেমাঝেই গুলিয়ে যায়। বৃদ্ধির হার কত, তার চেয়ে বেশি জরুরি হল সেই আয়বৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছোচ্ছে কি না। ভারতে নেহরুর আমল থেকেই সর্বজনীন উন্নয়নের দিকে ঝোঁক ছিল। সম্প্রতি সেটা খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে তো বটেই।

মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা থাকার সময় আপনি বলেছিলেন, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ মানুষের কতখানি উন্নয়ন হল, সেটাই আসল মাপকাঠি। সম্ভবত মহাত্মা গাঁধীর কথার রেশ ধরেই...

গাঁধী তো বটেই, দার্শনিক জন রলস-ও বলেছিলেন। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্ক তার নীতি হিসেবে দরিদ্রতম ৪০ শতাংশ মানুষের উন্নয়ন মাপার কথা বলেছে। বড়লোকরা কতখানি ভাল থাকছে, সেটা মাপকাঠি নয়, সাধারণ মানুষ কেমন থাকছে, সেটা দিয়েই কোনও দেশ, সমাজের চেহারা বোঝা যায়। ভারতে কিন্তু ছবিটা ভাল নয়। এত আর্থিক বৃদ্ধি, এত রমরমা, তবুও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ ভারতেই থাকে।

সম্প্রতি ভারতে যে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তার বাড়াবাড়ি আরম্ভ হয়েছে, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, তাতে কি দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে?

সঙ্গে সঙ্গে নয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ধাক্কা খেতেই পারে। গোটা দুনিয়ার অভিজ্ঞতা বলছে, সংখ্যালঘুরা যদি নিজেদের কোণঠাসা মনে করেন, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে। তাতে বিদেশি লগ্নিকারীরা ঘাবড়ে যেতে পারেন। কিন্তু সেটা কথা নয়। বৃদ্ধির হারে যদি প্রভাব না-ও পড়ে, তবুও ভারত বলতে এত দিন যে ছবিটাকে চিনতাম, তার উল্টো দিকে চলে যাওয়াটা এমনিতেই খারাপ। সব কিছু তো বৃদ্ধির হার দিয়ে মাপার দরকার নেই। তার বাইরেও দেখতে হবে।

সাক্ষাৎকার: অমিতাভ গুপ্ত

Kaushik Basu world Bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy