মঙ্গলবার ভীমপুরের মহখোলায় এসে পৌঁছল কফিনবন্দি সমর টিকাদার।
উঠোনের এক কোণে উল্টোনো কেটলিটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে বার বার। ‘ঘরে থাকলে এক কাপ চায়ের জন্য বড় হাঁকুপাকু করত গো লোকটা!’
ফ্যালফ্যালে উঠোনে হুমড়ি খাওয়া ভিড়। কান্না, গুমরে মরা শ্বাস, সোল্লাশ বিলাপ— মহাখোল গ্রামে সমরের বাড়ির উঠোনে, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝড়ের মতো আছড়ে পড়ছে শোক। আর তারই পাঁক ফোঁকর খুঁজে না-মনে পড়া বাবার কফিনের সামনে চুপ করে আছে মেয়েটি। মেরেকেটে সাড়ে আট বছর।
ষে উঠোনটায় সারা দিন এক্কা-দোক্কা আর রোগাটে মুরগি ছানা নিয়ে হুটোপুটি করত মেয়েটি, আজ এই অচেনা ভিড় আর না-ভাল লাগা শোকের ধাক্কায় বড্ড বিরক্ত লাগছে তার। তার চেনা উঠোনটা জুড়ে আজ শোকের হুটোপুটি যে। টেনে টেনে তাকে মায়ের কোলে এগিয়ে দেওয়ার ফাঁকেই কেউ যেন বলছে, ‘‘যা বাবা মায়ের কাছে একটু বসো গিয়ে।’’ এ সব ভাল লাগে না তার। এই উঠোন, তার বাবার কোলে বসা শীতের রোদ পোহানো আর এটা সেটা আবদার— উঠোনটাকে সে ভাবেই ফিরে পেতে চাইছে সে।
তার বাবাও (সমর টিকাদার) তো তেমনই বলে গিয়েছিল। মরু শহরে চলে যাওয়ার পরে, সে বার যখন দিন সাতেকের জন্য ফিরেছিল, মেয়ের ছোট্ট কপালে বিলি কেটে— একটা নুপুর গড়িয়ে দেব তোকে, তুই উঠোনে নাচবি আর আমি ওই দেশে বসে শুনব!’ কথাটা আলপিনের মতো গেঁথে আছে সোনুর মনে। কফিন ছুঁয়ে তাই ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে মেয়েটা...‘বাবা বলেছিল...’ কেউ বুঝল না তার মেয়েবেলার বিলাপটা থমকে গেল কেন।
সমর টিকাদারের কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ল মেয়ে শর্মিষ্ঠা।
শুধু চকচকে কফিনের গায়ে আছড়ে পড়া শোকের দিকে তাকিয়ে সোনু বিড় বিড় করে চলে, ‘বাবা তুমি তো বলেছিলে নুপূর... ’
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য, কল্লোল প্রামাণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy