Advertisement
১৯ মে ২০২৪

১৬ বছর পার, বিচারের দাবি হেতাশোলে

নির্বাচনী প্রচারে গ্রামে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। তাঁকে দেখেই ছুটে গিয়েছিলেন রাবেয়া এবং রাফিয়া। তাঁদের আশ্বস্ত করে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘'মামলা চলছে, সুশান্ত ঘোষ তো গড়বেতাতেই ঢুকতে পারছেন না। ওদের বিচার হবে, শাস্তিও হবে।’’

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
হেতাশোল শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

বাড়ি থেকে বেরিয়ে হঠাৎই নিখোঁজ হয়েছিল মানুষগুলো। তারপর কেটে গিয়েছে ১৬টা বছর। হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে, পুলিশ থেকে সিআইডি— তদন্ত হয়েছে। মামলাও চলছে আদালতে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার হেতাশোলের দুই তৃণমূল কর্মীর পরিবার এখনও জানে না কী হল তাদের বাড়ির ছেলেদের। দোষীরাও বা শাস্তি পেল কই!

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামে তাই শাসকদলের নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। হেতাশোলের ওই দুই তৃণমূল কর্মীর পরিজনেরা তাই দলের নেতারা গ্রামে ঢুকলেই তাঁদের কাছে যাচ্ছেন। আর্জি একটাই—কিছু চাই না, বিচার চাই।

২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে কেশপুরে সাত তৃণমূল কর্মীকে সিপিএম গুমখুন করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই সাত জনের মধ্যে ছিলেন হেতাশোলের দেলোয়ার শেখ এবং শেখ শুকুর আলি। সরকার পরিবর্তনের পর ২০১১ সালের জুন মাসে গড়বেতার বেনাচাপড়ার দাসেরবাঁধে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় বহু হাড়গোড়। তখন তৃণমূল দাবি করে, ২০০২ সালে তাদের যে সাত জনকে খুন করেছিল সিপিএম, এই দেহাবশেষ তাঁদের। প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ-সহ ৪০জন সিপিএম নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করে শুরু হয় তদন্ত। পরে তদন্তভার নেয় সিআইডি। হয় ডিএনএ পরীক্ষাও। সেই মামলা এখনও চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে সিআইডি।

দোষীরা শাস্তি পাবে— এই আশায় দিন কাটছে দেলোয়ার আর শুকুর আলির পরিজনদের। দেলোয়ারের মা রাবেয়া বিবি বললেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা বলেছেন ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তবে এখনও তো নিশ্চিত ভাবে কিছু জানতে পারলাম না। তাই তৃণমূল নেতারা গ্রামে এলে তাঁদের কাছে আর্জি জানাই।’’ কানে শুনতে পান না দেলোয়ারের বাবা মধ্য সত্তরের গিয়াসুদ্দিন শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘মরার আগে যেন দেখে যেতে পারি ছেলের খুনের ন্যায় বিচার হয়েছে।’’ স্বামী শেখ শুকুরকে হারিয়ে দিশাহারা দশা রাফিয়া শেখের। বছর পনেরোর ছেলে অমরকে পাশে নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজনেরা পাশে থাকেন। কিন্তু সরকারি সাহায্য তেমন পাইনি।’’

নির্বাচনী প্রচারে গ্রামে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। তাঁকে দেখেই ছুটে গিয়েছিলেন রাবেয়া এবং রাফিয়া। তাঁদের আশ্বস্ত করে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘'মামলা চলছে, সুশান্ত ঘোষ তো গড়বেতাতেই ঢুকতে পারছেন না। ওদের বিচার হবে, শাস্তিও হবে।’’

বেনাচাপড়া কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুকে ফোনে পাওয়া যায়নি। আর গড়বেতার সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘মামলা চলছে, তাই কিছু বলছি না। তবে এরকম বহু মিথ্যা মামলা আমাদের বিরুদ্ধে হয়েছে। একদিন সত্যিটা ঠিক প্রকাশ পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hetasol Missing TMC হেতাশোল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE