দুধিয়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উত্তরকন্যায় যাওয়ার পথে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে যান। তাঁর যাওয়ার ঘণ্টাতিনেক পর মালদহ উত্তরের সাংসদকে দেখতে হাসপাতালে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন এ রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনী ‘সহ-প্রভারী’ বিপ্লব দেব এবং অন্য বিধায়ক-সাংসদেরাও। কেমন আছেন খগেন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা? বিজেপি সাংসদকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিস্তারিত জানান শুভেন্দু। শুধু তা-ই নয়, খগেনকে মুখ্যমন্ত্রীর দেখতে আসার বিষয়টিকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
সোমবারই শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সকালে উত্তরবঙ্গ যাবেন তিনি। তাঁর এই উত্তরবঙ্গ সফরের দু’টি কারণ ছিল। প্রথমত, বন্যাবিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা এবং দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে আক্রান্ত খগেন এবং বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে দেখতে যাওয়া। সেই মতো মঙ্গলবার সকালে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেন শুভেন্দু। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় স্বচক্ষে দেখতে এ রাজ্যে আসেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। শুভেন্দু এবং রিজিজু মঙ্গলবার দুপুরে মিরিকের বিপর্যস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শুভেন্দু, রিজিজুর সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও।
এক রাতের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনও পর্যন্ত দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা অন্তত ২৭। রবিবার দুপুরের পর থেকে তেমন বৃষ্টি না-হওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ের রাস্তাঘাট এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি। ঘুরপথে পাহাড় এবং সমতলের মধ্যে গাড়ি চলাচল করছে। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিকে। দুধিয়া থেকে মিরিকে যাওয়ার পথে একটি লোহার সেতু ভেঙে গিয়েছে। মঙ্গলবার সেই মিরিকেই যান শুভেন্দুরা। পরে মুখ্যমন্ত্রীও ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।
সোমবার দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন খগেন এবং শঙ্কর। ইটের ঘায়ে রক্তাক্ত হন খগেন। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনে। বিকেলের পর তাঁদের দেখতে হাসপাতালে যান শুভেন্দু, বিপ্লবেরা। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘শঙ্করের কাঁধের কাছের লিগামেন্ট ছিঁড়েছে। কাল বা পরশু হয়তো তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে আগামী এক মাস বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হবে তাঁকে।’’
আরও পড়ুন:
কেমন আছেন খগেন? শুভেন্দু জানান, এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিজেপি সাংসদের এমআরআই করা হয়। সেই বিষয় উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এমআইআরের রিপোর্টে স্পষ্ট, তাঁর চোখের নীচের হাড় ভেঙেছে। অপারেশন করাও হতে পারে। তবে এখনই সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি চিকিৎসকেরা।’’ অপারেশন ছাড়া বিকল্প পথে কী ভাবে চিকিৎসা করা যায়, সেই ব্যাপারেও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ট্রাকশন দিয়ে ছ’সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা চলবে তাঁর।’’ এর পরে খগেনের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হবে। পারিবারিক এবং দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আপাতত চার সপ্তাহ ওই হাসপাতালে থাকবেন খগেন। তার পরে তাঁকে দিল্লির এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানান শুভেন্দু।
খগেনদের মারধরের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রেফতার হয়নি। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, মমতা হাসপাতালে অত্যন্ত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। খগেনের সঙ্গে দেখা করলেও শঙ্করকে উপেক্ষা করে যান। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন গিয়েছিলেন, তখন যাঁরা হাসপাতালে ছিলেন তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ফোনে বারণ করি। সকলকে শান্ত থাকতে বলি। বিজেপি এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না।’’ বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন মমতা। শুভেন্দুর দাবি, এটা পুরোটাই অসত্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই ৬ হাজার কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হয়েছে।