ঘোষণা করে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে তাণ্ডব চালাল এক দল বিজেপি সমর্থক। ঘটনার আগে সমাজমাধ্যমে লাইভে এসে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ ঘোষণা করেন, ‘‘আজকে যা হবে এর পর গোটা দেশে কংগ্রেসিদের বিরুদ্ধে এই রকম বিরোধিতা দেখা যাবে।’’
শুক্রবার সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে বিজেপির পতাকা হাতে ঢুকে পড়ে এক দল সমর্থক। অভিযোগ, রাকেশ সিংহ ছাড়াও ছিলেন বিজেপি নেতা প্রতীক পান্ডে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, বিধান ভবনের বাইরে ঝোলানো কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ছবিতে কালি লেপছেন বিজেপির লোকজন। বিধান ভবনের মূল ফটক সেই সময়ে খোলা ছিল। তার পর তাঁরা ঢুকে পড়েন ভিতরে। সেই সময়ে কংগ্রেস দফতরে বিশেষ কেউ ছিলেন না। ভিতরে হুজ্জুতির পরে ফের ওই দলটি বাইরে বেরিয়ে আসে। গেটের বাইরে কংগ্রেস নেতাদের ছবিতে আগুনও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানো হয় পতাকাও।
দলগত ভাবে বিজেপি এই ঘটনাকে সমর্থন করেনি। রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতারা নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে যে যে শব্দ ব্যবহার করছেন, তাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জরুরি। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের দফতরে যাওয়াকে দল সমর্থন করে না।’’
গত বুধবার থেকে বিহারের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই দিন ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’য় বিহারের দ্বারভাঙা থেকে মুজফ্ফরপুর যাচ্ছিলেন রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, তেজস্বী যাদবেরা। দ্বারভাঙা শহরে কংগ্রেসের একটি মঞ্চ থেকে বছর কুড়ির এক যুবক প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর প্রয়াত মাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। পরে দ্বারভাঙা থেকেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে বিজেপি।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রতিবাদস্বরূপ রাকেশের নেতৃত্বে বিধান ভবনে পৌঁছে যায় বিজেপির একটি দল। দলীয় দফতরে হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই এন্টালি থানায় এফআইআর দায়ের করেছে কংগ্রেস। রাকেশ এবং প্রতীকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, পুলিশ তাঁদের আশ্বস্ত করেছে যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ করা হবে। থানায় অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে ইমেল মারফত গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেস দফতের হামলার ঘটনায় কৌশলী অবস্থান নিল তৃণমূল। শাসকদলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ওই ধরনের মন্তব্য করা যায় না। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের দফতরে এ রকম হামলাও করা যায় না। কোনওটাই আমরা সমর্থন করি না।’’ সেই সঙ্গে বিজেপির উদ্দেশে কুণাল বলেন, ‘‘বাংলার বিরোধী দলনেতা থেকে বিজেপির চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রতিদিন যা বলেন, তাতে এই ‘ট্রিটমেন্ট’ তাঁদের জন্য চালু হলে?’’ কংগ্রেস অফিসে হামলার নিন্দা করেছে সিপিএম-ও। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘কলকাতার বুকে এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারল কী করে?’’
দলের দফতরে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার মৌলালি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। শনিবার বিধান ভবন থেকে কলেজ স্ট্রিট মোড় পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস।