কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ভর্তির হারে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশের মধ্যে ১৭টি রাজ্যের পরে। তবে এক দশকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হারে উন্নতির মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গের জায়গা প্রথম পাঁচে। একই ভাবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে গত এক দশকে উন্নতির নিরিখেও প্রথম পাঁচে বঙ্গ। ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে অনুপাতেও প্রথম পাঁচে তারা, আজ জানিয়েছে নীতি আয়োগ।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে সঠিক মানের উচ্চশিক্ষার প্রসার নিয়ে আজ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। ২০১১-১২ থেকে ২০২১-২২-এর মধ্যে এক দশকে রাজ্যগুলিতে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাপকাঠিতে কী কী পরিবর্তন এসেছে, তা খতিয়ে দেখে এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। নীতি আয়োগের শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সোনিয়া পন্ত বলেন, ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সিদের মধ্যে কত জন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, সেই ভর্তির হার ২০২১-২২-এ পশ্চিমবঙ্গে ছিল ২৬.৩ শতাংশ। দেশের মধ্যে ১৮ নম্বরে। তামিলনাড়ু, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, কেরল, তেলঙ্গানায় ভর্তির হার ৪০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২০১১-১২-এ পশ্চিমবঙ্গে এই ভর্তির হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এক দশকে যে ১০টি রাজ্য সব থেকে বেশি উন্নতি করেছে, তার মধ্যে কেরল, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরামের পরেই পঞ্চম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ।
একই ভাবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশে ২৩ নম্বরে রয়েছে। কিন্তু এক দশকে উন্নতির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের পরেই। ২০১১-১২-তে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ছিল ৩৩, মানে ৩৩ জন ছাত্রপিছু এক জন শিক্ষক। ২০২১-২২-এ তা কমে ২৯ হয়েছে। ছাত্র ও ছাত্রীর মধ্যে অনুপাতের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ এখন ১৩ নম্বরে। রাজ্যে এই অনুপাত ২০২১-২২-এ ১.০৩। দশ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে এই অনুপাত ০.৭৬ ছিল। এ ক্ষেত্রেও দশ বছরের উন্নতিতে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে।
তবে নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, উচ্চশিক্ষায় খরচের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই পিছিয়ে। রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি-র মাত্র ০.৪৩ শতাংশ উচ্চশিক্ষায় ব্যয় হয়। বিহার, অসম, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম প্রায় ১ শতাংশের আশেপাশে অর্থ ব্যয় করছে। নীতি আয়োগের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের খরচে চলা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই ৮১ শতাংশ পড়ুয়া পড়াশোনা করেন।
দেশে এখন ৪৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধীনে ৪৬ হাজার কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব থেকে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে কর্নাটকে, ৪৩টি। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ। দুই রাজ্যে ৩৮টি করে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে জনঘনত্বের অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ১৮ নম্বরে রয়েছে। নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যাতে পাশ করে বেরিয়ে চাকরির যোগ্য হয়, শিক্ষার গুণগত মান যাতে
বজায় থাকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে যাতে যথেষ্ট অর্থ থাকে, সেটা কেন্দ্রের সাহায্য নিয়ে রাজ্য সরকারগুলিকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নীতি আয়োগের সুপারিশ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজের মতো ফি ঠিক করার ক্ষমতা দেওয়া হোক। গবেষণার ক্ষেত্রে নীতি তৈরি হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো তৈরির অর্থ জোগানে নির্দিষ্ট সংস্থা
তৈরি হোক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)