Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
State news

কর্পোরেশন গড়ার তোড়জোড়, ভোট পিছতে পারে গোটা শিল্পাঞ্চলে, তীব্র বিরোধ বিজেপির

৮টি পুরসভাকে এক ছাতায় এনে বৃহত্তর ব্যারাকপুর পুর নিগম গঠন করার পথে এগোচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।

বাদ পড়তে পারে উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় গোটা শিল্পাঞ্চলই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বাদ পড়তে পারে উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় গোটা শিল্পাঞ্চলই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৩০
Share: Save:

শিয়রে পুরভোট গোটা রাজ্যে। এপ্রিল থেকে কয়েক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে ভোট হয়ে যাওয়ার কথা পুরসভাগুলিতে। কিন্তু বাদ পড়তে পারে উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় গোটা শিল্পাঞ্চলই। ৮টি পুরসভাকে এক ছাতায় এনে বৃহত্তর ব্যারাকপুর পুর নিগম গঠন করার পথে এগোচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। খবর নবান্ন সূত্রের।

আর তা নিয়েই ফের শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। গোটা শিল্পাঞ্চলে হারবে বলেই কৌশলে ভোট করানো এড়িয়ে যেতে চাইছে রাজ্য সরকার। বলছে বিজেপি। ‘‘ওদের যদি এতই জনসমর্থন থাকে, তা হলে যে সব জায়গায় ভোট হবে, সেখানেও তো জিতবে। শুধু ব্যারাকপুর নিয়ে ভাবছে কেন?’’ পাল্টা প্রশ্ন তৃণমূলের।

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভায় ভোট হতে পারে। তার পর বিভিন্ন জেলার ১১১টি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। সে কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কবে, কোথায় ভোট হবে— এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই রাজ্যের তরফে সবিস্তার জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে কমিশনকে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে ৮টি পুরসভা (ব্যারাকপুর, গারুলিয়া, ভাটপাড়া, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, টিটাগড়, উত্তর ব্যারাকপুর এবং নৈহাটি) নিয়ে ব্যারাকপুর পুর নিগম গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, সেই সব জায়গায় নির্বাচন স্থগিত হতে পারে। ব্যারাকপুর পুর নিগমের সঙ্গে জুড়ে যেতে পারে মোহনপুর, কাউগাছি, জেটিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের এলাকাও। পুরসভাগুলিতে জনসংখ্যা, এলাকা বিন্যাস, পরিষেবা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে কর্পোরেশন গঠন হবে। সে বিষয়ে কয়েক ধাপ এগনো হয়ে গিয়েছে বলেও প্রশাসনিক সূত্রে খবর।

আরও পড়ুন: পুর ভোট এগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা, কমিশনে নালিশ জানিয়ে তোপ মুকুলের

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ভোট পিছিয়ে যেতে পারে, এই জল্পনা শুরু হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে ৬ মুরলীধর সেন লেন থেকে। ব্যারাকপুর-সহ উত্তর ২৪ পরগনার গোটা শিল্পাঞ্চলে নিজেদের ভরাডুবি হবে বুঝেই তৃণমূল ওখানে ভোট পিছিয়ে দিতে চাইছে, বলছে বিজেপি। পুরভোটের মুখে যাতে ব্যারাকপুর পুর নিগম গঠনের পথে রাজ্য সরকার এগোতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে আইনি পদক্ষেপের কথাও বিজেপি ভাবতে শুরু করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: চিকিৎসককে সপাটে চড়, প্রসূতি মৃত্যুতে উত্তেজনা একবালপুরের হাসপাতালে

বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহ এ দিন বলেছেন, ‘‘কর্পোরেশন গঠনের গল্পটা পুরো ভাঁওতা। কোনও কর্পোরেশন হবে না। কর্পোরেশন গঠনের নামে তৃণমূল আসলে এই এলাকার ভোটটাকে পিছিয়ে দেবে।’’ কেন তৃণমূল পিছিয়ে দিতে চাইছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পুরভোট, তার ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। উমাশঙ্করের কথায়, ‘‘এখানে তৃণমূলের পায়ের তলায় আর একটুও মাটি নেই। ভোট হলেই এই অঞ্চলের সব পুরসভা ওদের হাতছাড়া হবে। তাই ভোটে যেতে ভয় পাচ্ছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ ওদের, প্রশাসন ওদের। গুন্ডা নামিয়ে সন্ত্রাস তৈরি করার চেষ্টা করছে। দলদাস পুলিশ সব দেখেও চুপ করে থাকছে। এর পরেও এত ভয় কিসের?’’

তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা দলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলটাকে নিয়ে যদি একটা পুর নিগম গঠিত হয়, তা হলে বিজেপির আপত্তি কেন, আমি বুঝতে পারছি না। অবশ্য আপত্তি থাকলেও কিছু যায় আসে না। সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেবেন।’’

আরও পড়ুন: জেলের মধ্যে মাথা ঠুকে নিজেকে আহত করার চেষ্টা করল বিনয়

নৈহাটির বিধায়ক, তথা শিল্পাঞ্চলে এই মুহূর্তে তৃণমূলের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখ পার্থ ভৌমিক আরও বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর পৌর নিগম গঠনটা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক দিনের স্বপ্ন। ২০১১ সালে সল্টলেকে একটা সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, ব্যারাকপুর এবং দমদমে তিনি কর্পোরেশন গঠন করতে চান। যে কোনও কারণেই হোক, সেটা আটকে ছিল। এখন যদি সেই স্বপ্ন পূরণ হয়, তা হলে ব্যারাকপুরের মানুষের কাছে তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না।’’

কিন্তু বিজেপি যে বলছে, উত্তর ব্যারাকপুর, গারুলিয়া, ভাটপাড়া, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া-সহ বিভিন্ন পুরসভায় তৃণমূলের হাল খারাপ বলেই এখন তারা শিল্পাঞ্চলে ভোট চাইছে না?

কর্পোরেশন গঠনের নাম করে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে যে বিজেপি দাবি করছে?

আরও পড়ুন: তদন্তে যাবে পুলিশ, বিমানের টিকিট কাটলেন অভিযোগকারী!

এ প্রসঙ্গে পার্থর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তার মানে কী? সারা বাংলায় কি মাত্র ওই ক’টা পুরসভার উপরেই বিজেপির অস্তিত্ব নির্ভর করছে? সারা বাংলায় আরও অনেক পুরসভায় তো নির্বাচন হচ্ছে। যদি বিজেপি খুবই শক্তিশালী হয়ে থাকে, তা হলে সেগুলোয় জিতে দেখিয়ে দিক। শুধু ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নিয়ে ভাবছে কেন?’’

বিজেপি সে তর্কে যেতে নারাজ। লোকসভা নির্বাচনে বাংলার যে সব আসনে জিতেছে বিজেপি, তার মধ্যে ব্যারাকপুর অন্যতম।

রাজ্য বিজেপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অন্যতম মুকুল রায় এবং দাপুটে সাংসদ অর্জুন সিংহের খাসতালুকও ওই ব্যারাকপুরই। সেই এলাকাতেই কৌশলে ভোট আটকে দেওয়ার চেষ্টা বিজেপি যে মানবে না, তা দলের রাজ্য নেতৃত্বও স্পষ্ট করে দিচ্ছে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে রাজ্য নেতাদের। শুক্রবার ব্যারাকপুর জেলা বিজেপির সভাপতিকে রাজ্য দফতরে ডেকেও পাঠানো হয়েছে। আরও এক দফা আলোচনা সেরে আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে খবর। উমাশঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE