Advertisement
E-Paper

কারও দুটো বৌ থাকতে পারে, আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না! অর্পিতা নিয়ে ‘সদর্প’ পার্থ, কী বললেন টাকার প্রসঙ্গে

গত সাড়ে তিন বছরে জেলে থাকাকালীন তেমন কোনও কাজ করতে পারেননি বলে নিজের বিধায়ক তহবিলের টাকা ফেরত দিয়ে দিতে চান পার্থ। জানিয়েছেন, কিছু টাকা রেখে বাকিটা দলনেত্রীর হাতে তুলে দেবেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:০২
জেলমুক্তির পর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে খোলাখুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

জেলমুক্তির পর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে খোলাখুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। সাড়ে তিন বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে সেই বিশেষ বন্ধুত্ব নিয়ে এ বার মুখ খুললেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তথা সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। জামিনে মুক্ত হয়ে সবে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। বুধবারই বেহালা পশ্চিমের মানুষের উদ্দেশে লিখেছেন খোলা চিঠি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের বিষয়েও এ বার কথা বললেন পার্থ। সংবাদমাধ্যমে ‘সদর্পে’ স্বীকার করলেন, অর্পিতা তাঁর বান্ধবী। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন পার্থ। গত সাড়ে তিন বছরে জেলে থাকাকালীন তেমন কোনও কাজ করতে পারেননি বলে নিজের বিধায়ক তহবিলের টাকা ফেরত দিয়ে দিতে চান পার্থ। জানিয়েছেন, কিছু টাকা রেখে বাকিটা দলনেত্রীর হাতে তুলে দেবেন।

সদর্পে বান্ধবী

অর্পিতাকে নিয়ে ‘রং চড়িয়ে’ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, অভিযোগ পার্থের। দাবি, তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে। পার্থের কথায়, ‘‘একজন মহিলাকে অসম্মান করা তো খুব সহজ। এখানে সংবাদমাধ্যম রং চড়িয়ে তা করেছে। আমার স্ত্রী প্রয়াত। তার পরে কোনও মহিলা যদি আমার সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব করতে চান, সে ক্ষেত্রে কি কারও কোনও আপত্তি থাকতে পারে? অর্পিতার পরিচয় তো শুধু আমার বান্ধবী নয়! সে অভিনেত্রী, ৩০-৩৫টি ওড়িয়া ছবিতে কাজ করেছে। দিনের পর দিন যে ভাবে তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে, তা অন্যায়।’’ অর্পিতা প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্য নেতাদের কথাও উল্লেখ করেছেন পার্থ। বলেছেন, ‘‘কারও দুটো বৌ থাকতে পারে, আর আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না!’’ শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের উদাহরণও দিয়েছেন পার্থ। উল্লেখ্য, স্ত্রী রত্নার সঙ্গে শোভনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে এখনও বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। তবে তিনি থাকেন বান্ধবী বৈশাখীর সঙ্গেই। সম্প্রতি বান্ধবীকে নিয়ে শোভন আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বান্ধবীর প্রশ্নে পার্থ তাই শোভন-বৈশাখীর নাম করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁর বৌ আছে, তাঁর বান্ধবী থাকলে আমার কেন থাকবে না?’’

টাকা কার?

অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। দাবি, পুরোটাই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। পার্থ জেল থেকে বেরিয়ে সেই টাকার সঙ্গে নিজের যোগাযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, আমার বাড়ি থেকে তো কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। বান্ধবীর বাড়ি থেকে পেয়েছে। বান্ধবীই তার উত্তর দেবে।’’ অর্পিতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে? পার্থের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘না।’’ দুর্নীতি কি হয়েছিল? পার্থের কথায়, ‘‘কোনও দুর্নীতি হয়নি। আমি তো দীর্ঘ সময় শিক্ষামন্ত্রী পদে ছিলাম। তখন তো কেউ দুর্নীতির কথা বলেননি। ২০২১ সালে আমি সরে যাওয়ার পরেই কেন এত কিছু বলা হল? বেনিয়ম হতে পারে, কাজে ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু তা দুর্নীতি নয়। এত কাজ করলাম, সকলে সব ভুলে গেল?’’

তৃণমূলই আমার দল

পার্থের নাম নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়ানোর পরেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেছিল তৃণমূল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর মন্ত্রিত্ব। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মণ্ডলেরাও দুর্নীতির অভিযোগে জেল খেটেছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে এত কঠোর পদক্ষেপ করা হয়নি। দলের উপর কি ক্ষোভ আছে? পার্থ বলেন, ‘‘তৃণমূল আমার দল নয়, এটা কে বলল? দল আমার সঙ্গে না থাকলেও আমি কিন্তু এখনও দলের সঙ্গে আছি।’’ তৃণমূলের কঠিন সময়ে তিনি দলের পাশে ছিলেন, দাবি করেছেন পার্থ। পুরনো স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘‘দলের সঙ্কটকালে শুধু নয়, দলকে ক্ষমতায় আনার নেপথ্যে আমি ছিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাইরে, আমি ভিতরে। সুব্রত বক্সী সঙ্গে থাকত তখন। আর কটা লোক ছিল?’’ পার্থের দাবি, দলের তরফে তাঁকে সাসপেন্ড করার বিষয়ে কিছু জানানোই হয়নি। সে খবর তিনি পেয়েছেন ইডি হেফাজতে থাকাকালীন কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের কাছ থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তখন জেলে ছিলাম না। ইডি হেফাজতে ছিলাম। ইডি আধিকারিকেরা এসে বললেন, ‘আপনাকে তো দল সাসপেন্ড করে দিয়েছে। মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়েছে। এর পরেও চুপ করে থাকবেন?’ আমি কিন্তু দলের কোনও বিরুদ্ধাচরণ করিনি।’’ দলের কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, জানিয়েছেন পার্থ। দল ফিরিয়ে না নিলে কী করবেন? ভবিষ্যৎ কী রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর? পার্থের জবাব, ‘‘ফিরিয়ে না নিলে না নেবে। সেতু এলে তা কী ভাবে পেরোতে হবে, আমি জানি।’’ এই পরিণতির জন্যেও নিজেকেই দায়ী করেছেন পার্থ। বলেছেন, ‘‘আমি এবং আমার আনুগত্য এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আর কেউ নয়।’’

অভিষেক ‘অটোম্যাটিক চয়েস’

তৃণমূলের আগামী দিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘অটোম্যাটিক চয়েস’ বলে মনে করছেন পার্থ। দাবি, অতীতে তিনি অভিষেকের পাশে থেকেছেন। বর্তমানে যাঁরা অভিষেকের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা সে দিন ছিলেন না। কারও নাম না-করে পার্থ বলেন, ‘‘অভিষেকই অটোম্যাটিক চয়েস। এখন যাঁরা তাঁর পিছন পিছন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তারা সে দিন কেউ ওঁর পাশে দাঁড়াননি। আমি দাঁড়িয়েছিলাম, আবার আমিই জেল খেটেছি।’’

‘আমাকে বলতে দাও’

বেহালার মানুষের কাছ থেকে বিচার চান পার্থ। তাঁর কথায়, ‘‘দলনেত্রীর প্রতি আমি আস্থাশীল। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। ২৫ বছর ধরে যাঁরা আমাকে জিতিয়েছেন, তাঁদের কাছেই বিচার চাইব। তাঁরা কি অসৎ, অকর্মণ্যকে জিতিয়েছেন? আইনি বিচার আইনের পথে হবে। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক বিচার তো গণদেবতার কাছেই চাইতে হবে।’’ প্রয়োজনে বেহালার মানুষের ঘরে ঘরে অটো নিয়ে ঘুরবেন, জানিয়েছেন পার্থ। বেরিয়ে পড়বেন চলতি মাসেই। তাঁর কথায়, ‘‘বিধানসভা তো জনপ্রতিনিধিদের বলার জায়গা। আমি সাড়ে তিন বছর ধরে কিছু বলতে পারিনি। ‘আমাকে বলতে দাও’ বলে চিৎকার করেছি। কেউ তো আমার কথা শোনেনি, আমার কাছে আসেনি। আমি বেহালার প্রতিটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।’’

রাতে ঘুম হয় না

জেলেও নির্ঘুম রাত কাটত। বাড়ি ফিরেও মঙ্গলবার রাতে ঘুমোতে পারেননি, দাবি পার্থের। জানিয়েছেন, সারা রাত তাঁর ভাই এবং ভাইঝি তাঁর কাছে বসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটিয়েছেন। পার্থের কথায়, ‘‘জেলে তো আমি বাঁচব কি মরব, ঠিক ছিল না। অন্ধকারে বসে থাকতাম, শ্বাসকষ্ট হত। দলের কর্মীরা এসে কান্নাকাটি করত। গত তিন বছর আমি কাগজ পড়িনি, টিভি দেখিনি। এখন আবার কর্মযজ্ঞে ফেরার চেষ্টা করছি।’’ তবে আইনের কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি পার্থ। বলেছেন, ‘‘সোনা গলানোর চেষ্টা করলেও খাঁটি সোনা তো গলে না। আইনের কোনও বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। সত্যের জয় এক দিন হবেই, জানি।’’

এসআইআর নিয়ে

বুধবার পার্থের বাড়িতেও বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও) গিয়েছিলেন। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) এনুমারেশন ফর্ম দিয়ে এসেছেন। পার্থ তা গ্রহণও করেছেন। কিন্তু তৃণমূল তো এসআইআর-এর বিরুদ্ধে! পার্থের বক্তব্য, ‘‘দলনেত্রী বলেছিলেন, এক জনও বৈধ ভোটার যাতে বাদ না যান। কেন এসআইআর ভোটের সময় হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কোথাও তো তিনি বলেননি, এসআইআর-এর ফর্ম না নিতে। বিএলও-র সঙ্গে সহযোগিতা না করতে।’’

Partha Chatterjee Arpita Mukherjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy