আরও পড়ুন: কোষাগারে টান, নবান্নের মেনুতে কমছে সব্জি, মাংসের বদলে মাছ
ভেসে বেড়াচ্ছে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর নামও। নদিয়ার মেয়ে লগ্নজিতা এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষিতা, বলিয়ে-কইয়ে, স্মার্ট। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষ পদে তাঁকেই বেছে নেওয়া হতে পারে আপাতত। জল্পনা এমনই। কিন্তু গুঞ্জন বলছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে লগ্নজিতার সম্পর্ক তেমন মধুর নয়। তাই শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতার মধ্যে লগ্নজিতাকে মুখ্যমন্ত্রী ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদে বেছে নেবেন, এমন সম্ভাবনা কমই।
সভানেত্রী পদ থেকে জয়াকে সরিয়ে দিলেও, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য কমিটি ভাঙেননি মমতা। ওই কমিটির থেকেই কাউকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলেও মত একাংশের। রাজ্য কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজের মতামত জানালেন সার্থক ও লগ্নজিতা সম্পর্কে। বললেন, ‘‘যখনই টিএমসিপি সভাপতি বদলের কথা ওঠে, তখনই ওই দু’জনের নাম ভেসে ওঠে। কিন্তু ও সব ভিত্তিহীন জল্পনা। এ বারেও দেখে নেবেন, দু’জনের কেউই সভাপতি হচ্ছেন না।’’
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম কাণ্ডে লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে তদন্তে সিআইডি
আর কার কার নাম শোনা যাচ্ছে? জয়া দত্তর জেলা উত্তর ২৪ পরগনা থেকেই ভেসে এসেছে আর একটি নাম— সেটি হল বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণাঙ্কুর। উঠে এসেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের সভানেত্রী রোমানা আখতারের নামও। বি ই কলেজের প্রাক্তনী তথা ইঞ্জিনিয়র কৌস্তভ দে-কে সভাপতি করা হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
এক দিকে যখন এতগুলো নাম নিয়ে জল্পনা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভিতরে-বাইরে, অন্য দিকে তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডার অনুগামীরা। সৌজন্যে অবশ্যই শঙ্কু নিজে। ভর্তি দুর্নীতি এবং তার জেরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে আঙুল ওঠাকে হাতিয়ার করেছেন আপাতত সংগঠনের বাইরে থাকা শঙ্কু। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শঙ্কু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, পরিস্থিতি কতটা লজ্জাজনক। আর তার পরেই শঙ্কুর অনুগামী এবং সমর্থকরা, ফেসবুকে সমর্থনের বন্যা বইয়ে দিতে শুরু করেছেন। শঙ্কুদেব পন্ডার হাতে ফের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করেছেন তাঁরা। অনেকে আবার, সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্বোধন করে আবেদন জানিয়েছেন— শঙ্কুকেই ফের সভাপতি করা হোক।
তৃণমূলে কেউই অবশ্য মনে করছেন না, এই মুহূর্তে শঙ্কুর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। যে ভঙ্গিতে শঙ্কুর সঙ্গে সব সংস্রব ছিন্ন করেছিল তৃণমূল, তাতে সরাসরি অত বড় পুনর্বাসন সম্ভব নয় বলেই বেশ কয়েক জন সিনিয়র নেতার মত। কিন্তু শঙ্কুদেব হাল ছাড়ছেন না বলেই খবর। তিনি এখন মদন মিত্রের মাধ্যমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। মদন নিজেও অঘোষিত ভাবে দলের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্প্রতি ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ দিনের এই রাজনৈতিক সহকর্মীর। ধীরে ধীরে দলীয় বৃত্তে ফের গুরুত্বও বাড়তে শুরু করেছে মদনের। একই ফর্মুলায় শঙ্কুও পুনর্বাসন পেতে চাইছেন বলে জল্পনা।
আরও পড়ুন: ছাত্র আন্দোলন কই, কদর শুধু দাদাগিরির
শঙ্কুদেব পন্ডা যে মদনের বৃত্তে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছেন, তার আভাসও কিন্তু মিলেছে এ দিন। মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তথা কলেজ শিক্ষকদের অন্যতম নেতা সোমনাথ সিংহরায় বললেন, ‘‘শঙ্কুদেব পন্ডা আজ যেখানেই থাকুন, ছাত্রনেতা হিসেবে কিন্তু তাঁর জুড়ি কমই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদে শঙ্কুর পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা কেউই কিন্তু শঙ্কুর মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। তাই শঙ্কুকে ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠা খুব অস্বাভাবিক নয়।’’
শঙ্কুদেব নিজে এ বিষয়ে স্পিকটি নট। প্রথমত তিনি নস্যাৎ করলেন তাঁকে ঘিরে চলতে থাকা যাবতীয় জল্পনা। বললেন, ‘‘আমি ও সব থেকে অনেক দূরে।’’ কিন্তু ফেসবুকে তাঁর অনুগামীরা যে ঝড় তুলে দিয়েছেন? সভাপতি পদে তাঁকে ফেরত চেয়ে যে খোলাখুলি সওয়াল হচ্ছে? শঙ্কু এ বার বললেন, ‘‘আমি কিছুই জানি না। বৃষ্টির দিন। আমি এখন খিচুড়ি খাচ্ছি।’’