নৈহাটির সেই হোটেল। সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব কয়েক বছর ধরে। এক পরিবারের গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে অন্য পরিবারটির গৃহকর্তার সকলের অলক্ষ্যে মেলামেশা থেকে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে সময় লাগেনি। কিন্তু দু’জনেই বিবাহিত! সম্পর্ক যে বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না, জানতেন দু’জনেই। পুরুষটি এ জন্য হতাশায় ভুগছিলেন। আর তার জেরেই মহিলাটিকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। নৈহাটির হোটেল-কাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় নৈহাটির কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের একটি হোটেলের পাঁচিলে হঠাৎ ‘ধপাস’ আওয়াজ শুনে ভিড় জমে যায়। সেখানে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে হোটেলের তিন তলার ১৩ নম্বর ঘরেরর দরজা ভেঙে ওই ব্যক্তির সঙ্গিনীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, মৃত অটল সেন (৪২) ও আরতি গায়েন (৪৬) দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা। রাতে ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সৈকত ঘোষ-সহ পুলিশ অফিসাররা। হোটেলের রেজিস্টারে অটল সেনের ভোটার কার্ডের ফোটোকপি থাকলেও আরতিদেবীর সচিত্র পরিচয়পত্র ছিল না। সেখানে তাঁর নাম নথিভুক্ত হয় ‘প্রিয়া সেন’ বলে। অটলের ব্যাগ থেকে একটি চিঠি পেয়েছে পুলিশ। সেই চিঠি পড়ে তদন্তকারীদের ধারণা, শারীরিক চাহিদা মেটানোর তাগিদে সম্পর্ক তৈরি হলেও অটল জড়িয়ে যান। আরতিকে বিয়ের কথা বলার পর অশান্তি শুরু হয় দু’জনের। আরতির তিন সন্তানই বিবাহিত। নিজের পরিবার ছেড়ে তিনি বেরোতে চাননি। দু’জনের সম্পর্কে সাময়িক ভাবে চিড় ধরলেও অটলই আরতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন ও শনিবার নৈহাটির এই হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও তাঁরই ছিল। ওই চিঠিতেই আরতিকে বিয়ে না করতে পারার জন্য নিজেদের জীবন শেষ করে দেওয়ার উল্লেখও আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘পরিকল্পনা করে খুনের পর আত্মহত্যা বলেই অনুমান।’’ শনিবার রাতেই অটল ও আরতির বাড়িতে যায় নৈহাটি থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, দু’টি পরিবারই নিম্নবিত্ত। অটলের স্ত্রী গৃহবধূ। আরতির স্বামী ফুটপাথে চাল বিক্রি করেন। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে অটলের কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। আরতি ঘুঘুডাঙায় আয়ার কাজ করতেন। বছর দুয়েক ধরে দু’জনে একসঙ্গে আয়ুর্বেদিক প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবসাও করছিলেন। শনিবার সকালে অটল ও আরতি কাজে যাওয়ার নাম করে বেরোন।
হোটেলের তথ্য বলছে, ওই দিন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ সেখানে ঘর নেন অটল-আরতি। তার পরে কেউই ঘর থেকে বেরোননি। পুলিশের অনুমান, সারাদিন এক সঙ্গে কাটানোর পর সন্ধ্যার দিকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে আরতিকে পেটে ছুরি মেরে খুনের পর মৃতদেহ বিছানায় এনে শুইয়ে দেন অটল। পুলিশ সূত্রে খবর, হোটেলের ঘরে তল্লাশি করে দু’জনের ব্যাগ থেকে শ্যাম্পু, ক্রিম ও আপত্তিকর ছবি মিলেছে। বাথরুমের বালতিতে পাওয়া গিয়েছে কেক কাটার ছুরি। সেই ছুরি দিয়েই আরতিকে খুন করে অটল ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন বলে পুলিশের অনুমান। ওই হোটেলের তিনতলার গোটাটাই ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। একই সঙ্গে এই ঘটনার পর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পানশালা-সহ হোটেলগুলিতে তল্লাশি অভিযানও শুরু করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy