Advertisement
E-Paper

‘বাস নামাসনি কেন?’ শায়েস্তা করল তৃণমূল

ভরা অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজও অধিকাংশই খোলা। যানবাহনের দেখা মিললেও যাত্রী ঈষৎ কম—ধর্মঘটের এই অচেনা চিত্রে দু-একটা খুচরো ব্যতিক্রমও ছিল। শনিবার, তার ‘শাস্তি’ও জুটল!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৯
বেলডাঙায় ব্যাঙ্কে ঢুকতে বাধা। — নিজস্ব চিত্র

বেলডাঙায় ব্যাঙ্কে ঢুকতে বাধা। — নিজস্ব চিত্র

ভরা অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজও অধিকাংশই খোলা। যানবাহনের দেখা মিললেও যাত্রী ঈষৎ কম—ধর্মঘটের এই অচেনা চিত্রে দু-একটা খুচরো ব্যতিক্রমও ছিল।

শনিবার, তার ‘শাস্তি’ও জুটল!

দেশ জুড়ে বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে সাড়া দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁদের কাউকে বকাঝকা, ধমকধামক কারও গায়ে উঠল হাত। এবং অভিযোগের তির, ধর্মঘট-বিরোধী শাসক দলের দিকে।

এ দিন যেমন, শুক্রবার, রাস্তায় না-নামা বেশ কিছু বাস চালককে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে এনে তৃণমূল কর্মীরা জানতে চাইলেন, ‘‘কাল বাস নামাসনি কেন, আজ বাস বেরোবে না।’’ অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের সমর্থকদের হাতও উঠল নদিয়ার বেশ কিছু চালকের গায়ে।

শনিবার ব্যাঙ্কে এসে শাস্তি জুটল কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীরও।

নবদ্বীপে যেমন, আগাম সতর্ক করা হয়েছিল বাস চালকদের— বন্‌ধের দিন রাস্তায় যেন বাস নামে। কিন্তু ঝুঁকি নিতে চাননি বাস মালিকেরা। এ দিন তাঁরা রাস্তায় বাস নামাতেই নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড থেকে বের করে দেওয়া হল বাসগুলিকে। কিছু বাস আটকে দেওয়া হল নবদ্বীপ রেলগেট ও স্টেশনের মাঝে।

নবদ্বীপ-গৌরাঙ্গ সেতু রুট কমিটির সভাপতি ভোলা সান্যাল বলছেন, “ধর্মঘটে তো তেমন যাত্রী হয় না, তাই চালক ও বাসকর্মীরা ছুটি নিয়ে নেন। কিন্তু সব জেনেও ওরা (তৃণমূল কর্মী সংগঠন) প্রায় তিরিশটা বাস নামতে দেয়নি।’’ নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের আইএনটিটিইউসির নেতা সুজিত সরকার এ ব্যাপারে কোনও আড়াল রাখছেন না, “আমরা তো কাউকে বাস চালাতে নিষেধ করিনি। শুধু নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতে বারণ করেছি। ওরা শুক্রবার আসেনি, তাই শনিবারেও আসতে দেওয়া হয়নি।”

যা দেখে, নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, “কী আর বলব, ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

একই শাস্তি পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ব এবং একটি সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মীরা। অভিযোগ, এ দিন তাদের ব্যাঙ্কে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।

সদ্য দল বদলেছেন বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওরের নেতৃত্বে তৃণমূলের সমর্থকরা একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ারকে মারধর করেন বলেও অভিযোগ।

ওই ব্যাঙ্কের বেলডাঙা শাখার ম্যানেজার উত্তম নস্কর বলেন, ‘‘গত কাল ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের আলাদা ধর্মঘট ছিল। ফলে তাঁরা মারধরে আহত হয়েছেন ক্যাশিয়ার মানসচন্দ্র সাহা।’’

ভরতবাবু সব জানেন। বলছেন, ‘‘শুক্রবার অনেক বয়স্ক মানুষ অবসর ভাতা তোলার জন্য ব্যাঙ্কের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। তালা খুলে তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ফোনে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাঁরা সেই অনুরোধ রাখেননি। এই জন্যই এ জদিন তাঁদের ব্যাঙ্কে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। মারধর তো হয়নি।’’

অন্য দিকে, প্রায় একই অভিযোগে শনিবার নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেন স্থানীয় কিছু মানুষ। এদের বেশির ভাগই তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সদস্য। সঙ্গে ছিলেন নবদ্বীপ পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৈতালি গুঁই। চৈতালিদেবীর অভিযোগ, ‘‘নবদ্বীপের বহু প্রাথমিক শিক্ষক ওই ব্যাঙ্ক থেকে বেতন নেন। মাসের প্রথম শুক্রবার তাঁরা বেতন নিতে এসে দেখেন ব্যাঙ্ক বন্ধ।’’

ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শুভাশিস দাশগুপ্ত শুধু বলছেন, ‘‘চার দিন আগেঅ আমরা নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম শুক্রবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। সে কথা শুনলেন কোথায় শাসক দলের নেতারা!’’

জেলার এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘আসলে, গুন্ডামিটাই তৃণমূলের ধর্ম। ওরা যা ভাববে, সেটাই শেষ কথা। তাই শাস্তি!’’

Bus Strike Day TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy