Advertisement
E-Paper

পেট্রল নিয়ে আয়, জ্বালিয়ে দেব! কসবায় কেন এমন মন্তব্য? বিতর্কে জড়িয়ে নিজেই ব্যাখ্যা দিলেন সেই চাকরিহারা শিক্ষক

কসবায় ডিআই দফতরের সামনে গোলমালের সময় ওই শিক্ষকের একটি মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পেট্রল নিয়ে আয়, জ্বালিয়ে দেব!’’

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০০
কসবায় বিক্ষোভের মুহূর্ত। (ইনসেটে) প্রতাপ রায়চৌধুরী।

কসবায় বিক্ষোভের মুহূর্ত। (ইনসেটে) প্রতাপ রায়চৌধুরী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কসবায় স্কুল পরিদর্শকের দফতরের সামনে গোলমালের সময় তাঁর একটি মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কলকাতা পুলিশ যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পেট্রল নিয়ে আয়, জ্বালিয়ে দেব!’’ বিতর্কে জড়ানো সেই চাকরিহারা শিক্ষক এ বার নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর দাবি, তিনি সরকারি দফতর জ্বালানোর কথা মোটেই বলেননি। বলেছিলেন নিজেকে জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা।

বুধবার জেলায় জেলায় ডিআই দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। কসবার ডিআই দফতরেও জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। তাঁরা চেয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দিতে। কিন্তু স্কুল পরিদর্শক দফতরে ছিলেন না। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন চাকরিহারারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাঁদের। সেই দিনের ঘটনারই কয়েকটি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনে কলকাতা পুলিশ। তার মধ্যে একটি ফুটেজেই বিক্ষোভকারী ওই শিক্ষককে পেট্রল-মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে।

শুক্রবার এসএসসি দফতরের সামনে বিক্ষোভেও দেখা গেল ওই শিক্ষককে। তিনিই জানালেন, তাঁর নাম প্রতাপ রায়চৌধুরী। তিনি সোনারপুর এমসি হাই স্কুলের নবম-দশমের শিক্ষক। কসবায় কেন ‘পেট্রল দিয়ে জ্বালানো’র কথা বলেছিলেন তিনি? প্রতাপের জবাব, ‘‘আমি নিজেকে জ্বালানোর কথা বলেছিলাম। নিজেদের চাকরি যদি সসম্মানে ফিরে না পাই, তা হলে নিজেকে জ্বালিয়ে দেওয়া ছাড়া, ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া ছাড়া বা আত্মহনন ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নেই।’’

প্রতাপের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের লোন চলছে। আমার বাচ্চার মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি। আমাদের চাকরি কেন কেড়ে নেবে? পেট্রল দিয়ে নিজেকে জ্বালিয়ে দেব বলেছিলাম। যদি সেই পরিস্থিতি আসে, তা-ই করতে বাধ্য হব। আমরা চাই স্কুলে গিয়ে সসম্মানে পড়াতে। লোকে আমাদের ছি ছি করছে।’’

কিন্তু কলকাতা পুলিশ যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে প্রতাপকে অবশ্য নিজেকে জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়নি। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে চাকরিহারা শিক্ষক বলেন, ‘‘এতে আমি কী করব? সব কথা কি ওইটুকু ক্লিপে হয় নাকি? ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিন। গুলি করুন আমাদের। আমি শুধু একটাই কথা বলতে চাই, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার কোনও অভিপ্রায় আমাদের নেই। আমরা আইনত নিয়োগপত্র পেয়েছি। আবার আইনতই নিয়োগপত্র ছিনিয়ে আনব। সিবিআই যে অযোগ্যদের তালিকা দিয়েছে, তাতে কি আমার নাম রয়েছে? প্রমাণ করে দেখাক আমি অযোগ্য।’’

সমাজমাধ্যমে প্রতাপের একটি পুরনো ফেসবুক পোস্টও ভাইরাল হয়েছে। যে পোস্টে ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ নিয়ে প্রতাপ বলেন, ‘‘আমাকে আক্রমণ করা হচ্ছে ফেসবুকে। আমি জয় বাংলাই বলব। এখনও বলব। যে দিন তৃণমূল থাকবে না, সে দিনও বলব। বাম আমলেও জয় বাংলা। কাল বিজেপি ক্ষমতায় এলে তখনও জয় বাংলা। আমি বাঙালি ছেলে। আমি বাংলায় গান গাই। আমার এই জয় বাংলা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আমি কী বলব? জয় বিহার? জয় উত্তরপ্রদেশ? শাসকদল, বিরোধী দল সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’’

প্রসঙ্গত, কসবায় চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ সামলাতে গিয়ে পুলিশের ভূমিকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচনার মুখে পুলিশ দাবি করেছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করতে হয়েছে তাদের। পরে প্রতাপদের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে ‘হালকা বলপ্রয়োগের’ কারণ ব্যাখ্যা করেছে তারা। ভিডিয়ো প্রকাশের পাশাপাশি এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব ছড়াচ্ছেন যে, কলকাতা পুলিশের পোস্ট করা ভিডিয়োগুলি নাকি গতকালের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে জানানো হচ্ছে, শুধুমাত্র উপস্থাপনার স্বার্থে একাধিক ক্লিপ একত্র করে একটি ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। নিচে পৃথক ক্লিপগুলি দেওয়া হল, যার মধ্যে একটি ক্লিপে এক প্রতিবাদকারীকে ‘পেট্রল দিয়ে জায়গাটা জ্বালিয়ে দাও’ বলতে শোনা যাচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, ‘‘এই ধরনের অবিরত আগ্রাসী আচরণের মুখোমুখি হয়ে কলকাতা পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সামান্য বলপ্রয়োগ করতে এবং উচ্ছৃঙ্খল ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।’’

Bengal SSC Recruitment Case Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy