কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের খণ্ডযুদ্ধের পরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না।’’ উচ্চশিক্ষার শতাব্দীপ্রাচীন ওই প্রতিষ্ঠানে কী চলছে, নিজেদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষই বা কেন, টিএমসিপির সভানেত্রী জয়া দত্তের কাছে এ বার সেই কৈফিয়ত তলব করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ছাত্রভোট ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। তাতে ঘৃতাহুতি পড়ে টিএমসিপি-প্রধান ওই দিন বাইরের বহু সমর্থককে নিয়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছনোর পরে। জয়া উপাচার্যের ঘরে ঢোকার পরেই টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বেধে যায়। ভাঙচুর হয় দরজা-জানলার কাচ। সন্ত্রস্ত সাধারণ পড়ুয়ারা দিশাহারার মতো ছোটাছুটি করতে থাকেন। আশ্রয়ের আশায় উপাচার্যের ঘরেও ঢুকে পড়েন কেউ কেউ।
বিরোধী-শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন হাঙ্গামা কেন, মুখ্যমন্ত্রী রাতেই ফোন করে সেই ব্যাপারে জয়ার কৈফিয়ত চান বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। ছাত্রনেত্রী জবাবে কী বলেছেন, শুক্রবার পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে শাসক দলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নানা ঘটনায় জয়ার মধ্যে পরিপক্বতার অভাব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁকে টিএমসিপির শীর্ষ পদ থেকে সরানোর দাবিও উছে দলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসকের অভ্যন্তরীণ কাজিয়ায় শিক্ষা শিবির হতভম্ব। উদ্বিগ্ন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উপাচার্য আশুতোষ ঘোষের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। শিক্ষক সংগঠন কুটা-র সাধারণ সম্পাদক রামপ্রহ্লাদ চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘বহিরাগতেরা যে-ভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকেছে এবং যে-ভাবে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। উপাচার্যের কাছে আমরা ক্যাম্পাসে সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি।’’
২০১৫-য় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধিকার নিয়ে অবস্থান আন্দোলনের সময় টিএমসিপির নেতা সৌরভ অধিকারীর হাতে নিগৃহীত হন কুটা-র পূর্বতন সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল। তখনকার ছাত্রনেতারা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ছাত্রভোট আসতেই টিএমসিপির গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব দাঁত-নখ বার করেছে।
রামপ্রহ্লাদবাবু এ দিন বলেন, ‘‘উন্নতির বদলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।’’ যে-সব শিক্ষক ভোটের কাজে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা উপাচার্যকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান ওই শিক্ষক-নেতা।
উপাচার্য আশুতোষবাবু জানান, ছাত্র সংসদের নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের গন্ডগোলের জেরে মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল। স্ক্রুটিনির পরে এ দিন সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিক্ষাজগৎও। একে ‘মুষল পর্ব’ আখ্যা দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে যায়। নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে ইউনিয়ন করে। কিন্তু এই ধরনের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নতুন ইতিহাস তৈরি করছে!’’
ক্যাম্পাস এ দিন অবশ্য শান্তই ছিল। সকলকেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ দিন প্রেসিডেন্সিতে আসায় কলেজ স্ট্রিট জুড়েই ছিল কড়া নিরাপত্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy