Advertisement
E-Paper

ঘুমন্ত স্বামীকে খুন, ঝাড়গ্রামে ধৃত মহিলা

ছেলেদের গৃহশিক্ষকের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়েছিল বধূটি। দীর্ঘ ১৫ বছরের সেই প্রেম। তার পরিণতিতেই প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে হাতুড়ির ঘায়ে ঘুমন্ত স্বামীর মাথা থেঁতলে খুনের অভিযোগ উঠল বছর আটত্রিশের ঝর্না মণ্ডলের বিরুদ্ধে। প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে খুনের কথা পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছে ওই মহিলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৭
ধৃত ঝর্না মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত ঝর্না মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

ছেলেদের গৃহশিক্ষকের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়েছিল বধূটি। দীর্ঘ ১৫ বছরের সেই প্রেম। তার পরিণতিতেই প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে হাতুড়ির ঘায়ে ঘুমন্ত স্বামীর মাথা থেঁতলে খুনের অভিযোগ উঠল বছর আটত্রিশের ঝর্না মণ্ডলের বিরুদ্ধে। প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে খুনের কথা পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছে ওই মহিলা।

ক’দিন আগে প্রেমিককে ‘সুপারি’ দিয়ে স্বামীকে খুন করানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন বাঁকুড়ার আদিবাসী বধূ। এ বারের ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম।

মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন এলআইসি মোড় এলাকার বাড়িতেই উদ্ধার হয় ঝর্নার স্বামী বিকাশ মণ্ডল (৪৮)-এর দেহ। পরে ঝর্নাকে গ্রেফতার করা হয়। আজ, বুধবার তাকে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হবে। তবে ঝর্নার প্রেমিক বছর তেতাল্লিশের সূর্যকান্ত পাল পলাতক।

ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষ বলেন,
‘‘স্বামীকে খুনের অভিযোগে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর তার সঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে ঝর্না পড়শিদের ডেকে জানায়, বহু ডাকাডাকিতেও বিকাশবাবু ঘুম থেকে উঠছেন না। প্রতিবেশীরা এসে দেখেন, বিকাশবাবু মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। মাথার একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। সারা শরীরে, এমনকী মেঝেতেও চাপ চাপ রক্ত। ঝর্না বোঝানোর চেষ্টা করে, বিকাশবাবু পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন। তবে সব দেখে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দেখে বিকাশবাবু ততক্ষণে মারা গিয়েছেন।

সেই সময়ও ঝর্না নির্বিকার ভাবে বাড়ির উঠোনে বসেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে আসেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো এবং এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মা। টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়ে ঝর্না। স্বীকার করে, সূর্যকান্তকে সঙ্গে নিয়েই বিকাশবাবুকে খুন করেছে সে। ঝাড়গ্রাম শহরেরই সত্যবানপল্লিতে থাকে সূর্যকান্ত। সে লালগড়ের হরিণাগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

বাড়িতে ঘরোয়া খাবার হোটেল চালাতেন বিকাশবাবু। এ ছাড়া হোম ডেলিভারির ব্যবসাও ছিল। বিকাশবাবুর দুই ছেলে। বড় ছেলে স্বপন স্নাতকোত্তরের ছাত্র। আর ছোট ছেলে অভিজিৎ পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। স্বপন ও অভিজিতের গৃহশিক্ষক ছিল সূর্যকান্ত। সেই সূত্রেই বহু দিন ধরে বিকাশবাবুর বাড়িতে যাতায়াত ছিল তার। ক্রমে ঝর্নার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। তার জেরে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সূর্যকান্তের। বিকাশবাবুর সঙ্গে ঝর্নার সম্পর্কেরও টানাপড়েন চলছিল। বাবা-মায়ের অশান্তির জন্য স্বপন ঝাড়গ্রামেই মেসে থাকেন।

বিকাশবাবুর ভাইপো সন্তোষ মণ্ডলও বলেন, “কাকিমার সঙ্গে সূর্যকান্তের সম্পর্ক নিয়ে কাকা অশান্তিতে ছিলেন। এই নিয়ে কাকা-কাকিমার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত।’’

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মাস খানেক আগে সূর্যকান্তের বাড়িতে চলে গিয়েছিল ঝর্না। পরে বিকাশবাবু
স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনেন। ঝর্নার নামে গচ্ছিত কয়েক লক্ষ টাকা তোলা
নিয়েও দু’জনের গোলমাল চলছিল। জেরায় ঝর্না পুলিশকে জানিয়েছে, সোমবার দিনভর স্বামীর সঙ্গে অশান্তির পরে গভীর রাতে
সূর্যকান্তকে ফোন করে ডাকে সে। তখন একতলার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছেন বিকাশবাবু। ঘুমের মধ্যেই মাথায় হাতুড়ির ঘা মেরে খুন করা হয় তাঁকে। ভোররাতে চম্পট দেয় সূর্যকান্ত। পুলিশ বিকাশবাবুর বাড়ির দেওয়াল আলমারিতে হাতুড়িটি পেয়েছে।

সোমবার রাতে বাড়িতেই ছিল অভিজিৎ। বাবার মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। তাকে ঝাড়গ্রাম মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সুস্থ হলে অভিজিৎকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

murder wife
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy