Advertisement
E-Paper

স্বামীকে মারছে প্রেমিক, ‘লাইভ’ শুনল স্ত্রী

বাড়ি ঢোকার মুখে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল সদালাপী যুবককে। কিছুই খোয়া যায়নি বাড়ি থেকে। আঙুল থেকে শুধু সোনার আংটিটা খুলে রাখা ছিল দেহের পাশে। ফলে কোনও সূত্র পাচ্ছিল না পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ০৪:৩৬
ত্রিকোণ: (বাঁ দিকে) ধৃত মনুয়া ও অজিত। অনুপম সিংহ (ডান দিকে)  বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

ত্রিকোণ: (বাঁ দিকে) ধৃত মনুয়া ও অজিত। অনুপম সিংহ (ডান দিকে) বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি ঢোকার মুখে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল সদালাপী যুবককে। কিছুই খোয়া যায়নি বাড়ি থেকে। আঙুল থেকে শুধু সোনার আংটিটা খুলে রাখা ছিল দেহের পাশে। ফলে কোনও সূত্র পাচ্ছিল না পুলিশ। গত ৩ মে বারাসতের হৃদয়পুরের তালপুকুরে অনুপম সিংহ (৩৪) নামে ওই যুবক খুনের পরে তাঁর স্ত্রী মনুয়া মজুমদারও পুলিশের কাছে বারবার কেঁদে দরবার করেছিল, ‘কেন আপনারা আমার স্বামীর খুনিকে ধরতে পারছেন না?’

তদন্তে কিনারা করতে না পেরে অগত্যা মনুয়ার মোবাইল ‘ট্যাপ’ করে পুলিশ। জানা যায়, তার এক প্রেমিক আছে। নাম অজিত রায়। কিন্তু অজিতের মোবাইলেও মনুয়া জানায়, ‘‘খুব খারাপ আছি। কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি আবার এ সব করতে যাওনি তো?’’

তবু তাদের কথোপকথনে কান পাততে থাকে পুলিশ। আর সেই সূত্রেই অবশেষে খুনের কিনারা হল। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুলিশও প্রথমে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আসলে মোবাইল ট্যাপ হবে ভেবে ওরা এ সব নাটক করেছিল। কিন্তু দেখা যায়, খুনের আগে-পরে প্রায় এক ঘণ্টা ওই মহিলা এবং অজিতের মধ্যে মোবাইলে কথা হয়। সেই সূত্র ধরেই আমরা এগোই।’’

আরও পড়ুন: জটিলতা শেষ, কেন্দ্র শরিক হবে তাজপুরে

অনুপম খুনে তাঁর স্ত্রী মনুয়া আর অজিতকেই বুধবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন বারাসত আদালতে দু’জনেরই ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। কিন্তু কী ছিল ওই এক ঘণ্টার কথোপকথনে? পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতায় এক ভ্রমণ সংস্থায় কাজ করতেন অনুপম। বছর দেড়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়। খুনের দিন কয়েক আগে নবপল্লিতে বাপের বাড়ি চলে যায় মনুয়া। ৩ মে অফিস করে রাতে বাড়ি ফেরেন অনুপম। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনুপম স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। সবটাই রানিং কমেন্ট্রির মতো অজিতকে জানাতে থাকে মনুয়া।’’

সেই মতো ডাকবাংলো মোড় থেকে বাড়ি পর্যন্ত অনুপমের পিছু নেয় অজিত। দরজা খুলে ঘরে ঢোকার মুহূর্তেই লোহার রড দিয়ে অনুপমের মাথায় মারে সে। অনুপম মুখ ঘুরিয়ে দেখতে গেলেই ফের রড দিয়ে আঘাত করা হয়। পড়ে যাওয়ার পরে অজিতের পা জড়িয়ে অনুপম বলেন, ‘আমি তো কারও ক্ষতি করিনি। কেন মারছ আমায়?’’ এর পরে একটি ছুরি দিয়ে ফালাফালা করে দেওয়া হয় অনুপমকে। বারাসত থানার আই সি জয়প্রকাশ পাণ্ডে জানান, খুনের সময়ে অজিতের পকেটে মোবাইল অন ছিল। গোটা ঘটনাটাই ও পার থেকে শুনছিল মনুয়া। খুনের পরে সে মনুয়াকে বলে, ‘‘এখন ফোনটা রাখছি। কাজ শেষ।’’ মনুয়াও বলে, ‘‘তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাও। সাবধানে এসো। আমাদেরও রাস্তা সাফ।’’

পুলিশ জানিয়েছে, নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন অনুপম-মনুয়া। বিয়ের পরে অশোকনগরের অজিতের সঙ্গে মনুয়ার আলাপ। তা প্রেমে গড়ায়। অজিত সোনার আংটি উপহারও দেয় মনুয়াকে। পুলিশের দাবি, অজিত জানিয়েছে, খুনের পরে ওই আংটিটি অনুপমের আঙুলে দেখে তার রাগ হয়। তাই অনুপমকে খুনের পরে মনুয়ার উদ্দেশেই মৃতদেহের পাশে আংটিটি রাখে সে।

এমন নৃশংস খুনের পরে পুলিশ অনুপমের বন্ধু-সহকর্মীদেরও জেরা করেছিল। তাঁরাও পাল্টা দাবি তুলেছিলেন আসল খুনিকে ধরার। এ দিন বিচারকের নির্দেশের পরে সোচ্চার হন তাঁরাও। কলকাতায় যে সংস্থায় কর্মরত ছিলেন অনুপম, তার মালিক পলাশ চন্দ বলেন, ‘‘আমার সংস্থা ডুবতে বসেছিল। অনুপম এসে মানুষের সঙ্গে মিশে সংস্থার উন্নতি করেন। সম্প্রতি ওঁকে একটা নিজস্ব অফিসও করে দিয়েছিলাম। ওঁর এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই দোষীদের চরম সাজা হোক।’’

Murder Domestic violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy