প্রতীকী ছবি।
সাংবাদিকতার সূত্রে দেখা হয়েছিল তাঁদের সঙ্গে। আপাত ভাবে তাঁরা ‘সাধারণ মেয়ে’। কিন্তু পরিস্থিতির ঘূর্ণিপাকে তাঁরাই এমন কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, যা নাড়িয়ে দিতে পারে ক্ষমতাবানদের কুর্সির পায়া।
সে সব প্রশ্নের বেশিরভাগই মেয়েলি সমস্যা নিয়ে। কিন্তু ঝড় তোলার জন্য সে সব প্রশ্নের যথেষ্ট দম ছিল। যথেষ্ট দম আছে। তাঁরা সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিলেন কি না জানা নেই, জানা নেই কোনও সমাধানসূত্র মিলেছিল কি না, কিন্তু প্রশ্নগুলো ধারালো। বড্ড সত্যি।
আয়লা ঝড়ের ঠিক পরে পরেই গিয়েছিলাম সুন্দরবন ঘেঁষা এক প্রত্যন্ত গ্রামে। বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে পড়েছে গেরস্ত বাড়ির পুকুরে। মাছ মরে, নুন জমে সে পুকুরের জল বিষ হয়ে গিয়েছে। প্রথমে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে গলা আটকে যাচ্ছিল মহিলাদের। পরে যখন আড় ভাঙল, তখন সদ্য-পরিচিত মহিলা সাংবাদিকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন অন্দরে। তাঁরা দেখালেন, দূষিত পুকুরের জলে স্নান করে আর পিরিয়ডে ব্যবহারের কাপড় কেচে যৌনাঙ্গে ঘা হয়ে গিয়েছে তাঁদের। পুঁজ-রক্ত পড়ছে। ভাল করে হাঁটতে পারছেন না।
অথচ, গ্রামে বিকল্প জলের ব্যবস্থা নেই। দুর্গতদের হাল দেখতে যে আধিকারিকেরা আসছেন, তাঁদের সকলেই পুরুষ। লজ্জায় তাঁদের নিজেদের অবস্থার কথা জানাতে পারেননি। এলাকার গ্রামগুলিতে আজও কি হয়েছে শৌচাগার? যেখানে একটু আড়ালে, পরিচ্ছন্ন জলে তাঁরা স্নান করতে পারেন? নাকি পুকুরের জল দূষিত হলে তাঁদের আর কিছু করার থাকে না?
কলকাতার নাগেরবাজারে একটা গলির মধ্যে একটা বড় গ্যারাজ ঘর। ভাড়া নিয়েছিলেন সোনাগাছির এক প্রাক্তন যৌনকর্মী। তখন তিনি ষাট। আজীবনের সঞ্চয় দিয়ে তৈরি করেন ক্রেশ। বিভিন্ন যৌনপল্লির মেয়েরা নিজেদের সন্তানদের রেখে কাজে যেতে পারতেন। ওই মেসে ‘বড়মা’র আদরে-শাসনে আর পাঁচটা গৃহস্থ বাড়ির শিশুদের মতো সুস্থ শৈশবের আবহে বড় হতে পারত তাঁরা।
বড় মা সেই সময় ইন্টারভিউ নিতে যাওয়া এই সাংবাদিককে প্রশ্ন করেছিলেন—‘‘আচ্ছা, সরকার থেকে প্রতিটি যৌনপল্লি-সংলগ্ন এলাকায় এইরকম একটা করে ক্রেশ খোলা হয় না?’’ প্রশ্ন তো নয়, যেন ছুরি! বাঁকুড়ার সেই আদিবাসী মেয়েটি? পিরিয়ডের সময় যে কাপড়ে উনুনের ছাই নিয়ে রক্তক্ষরণ সামাল দেয়। তাঁর কী হবে?
আর খিদিরপুর ডকের বস্তির সেই অল্পবয়সী মেয়েগুলো? যাঁরা জানিয়েছিল, কী ভাবে দরজাবিহীন দরমার খোলা শৌচাগারের শতচ্ছিন্ন পলিথিনের পর্দা সরিয়ে মোবাইলে তাঁদের ছবি তুলে নেয় অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা কিছু চেহারা। তারাও ছুড়ে দিয়েছিল—‘কবে পাব একটা ঘেরা বাথরুম?’
নারীদিবসেও কি এই সব ধারালো প্রশ্নের সদুত্তর মিলবে না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy