Advertisement
০১ মে ২০২৪

নারী পাচার রুখতে ভরসা কর্মশালা

অশিক্ষা এবং দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েই পাচার চক্রের কারবারিরা গ্রামে ঢোকে। কয়েক মাস এলাকায় ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করে নেয়। তারপর বিনা যৌতুকে ভাল পাত্র, কাউকে কলকাতায় চাকরির লোভ দেখায়। লোভে পড়ে রাজি হয়ে যায় কয়েকজন।পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ কিস্তি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বাবা-মা ‘ভাল’ পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন শেফালির (নাম পরিবর্তিত)। বিহারের বাসিন্দা ওই পাত্র জানিয়েছিল, অতিদরিদ্র শেফালির বিয়ের জন্য সে কোনও পণ নেবে না। বিয়ের পরে ‘উদার হৃদয়’ বরের হাত ধরে বিহারে সংসার পাততে চলে গিয়েছিল শেফালি।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৪
Share: Save:

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বাবা-মা ‘ভাল’ পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন শেফালির (নাম পরিবর্তিত)। বিহারের বাসিন্দা ওই পাত্র জানিয়েছিল, অতিদরিদ্র শেফালির বিয়ের জন্য সে কোনও পণ নেবে না। বিয়ের পরে ‘উদার হৃদয়’ বরের হাত ধরে বিহারে সংসার পাততে চলে গিয়েছিল শেফালি।

বসিরহাটের একই পাড়ার বাসিন্দা শেফালির বন্ধু মনোয়ারার (নাম পরিবর্তিত) কাহিনি একটু আলাদা। গরিবের সংসারে একটু সাশ্রয় আনতে স্কুল ছেড়ে কলকাতার একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে গিয়েছিল মনোয়ারা।

বিয়ের পরে প্রথম দিকে বাড়িতে নিয়মিত ফোন করত শেফালি। কলকাতায় গিয়ে মনোয়ারাও টাকা পাঠাত। কিন্তু মাস কয়েক যেতেই সব বন্ধ। আর কোনও খোঁজ মেলেনি। পুলিশে যখন অভিযোগ হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

শেফালি এবং মনোয়ারার বিয়ে এবং কাজ খুঁজে দেওয়া দু’টিই করেছিল এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। সে বসিরহাটের ওই পাড়ার বাসিন্দা ছিল না। তবে পাড়ার এক মুদিখানার দোকানে মাঝে মধ্যেই চা খেতে আসত। শেফালি এবং মনোয়ারার সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ার পর তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওই ব্যক্তির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত, ওই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি দুই নাবালিকাকে ভিন রাজ্যে পাচার করে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে।

উপরের ঘটনা দু’টি পুলিশের খাতা থেকে তুলে আনা উদাহরণমাত্র। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বহু গ্রামেই এই ভাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলি নানা প্রলোভনের ফাঁদে পা দেয়। অভিভাবকদের অজান্তেই বিক্রি হয়ে যায় বাড়ির মেয়ে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অশিক্ষা এবং দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েই পাচার চক্রের কারবারিরা গ্রামে ঢোকে। কয়েক মাস এলাকায় ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করে নেয়। তারপর বিনা যৌতুকে ভাল পাত্র, কাউকে কলকাতায় চাকরির লোভ দেখায়। লোভে পড়ে রাজি হয়ে যায় কয়েকজন। নাবালিকাদের একবার বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই কাজ প্রায় শেষ! দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের নিষিদ্ধপল্লি কিংবা হোটেলে মোটা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাদের।

জেলা পুলিশ সুপার ভাষ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অচেনা মানুষ হঠাৎ উপকার করতে চাইলে তাতে সাড়া না দেওয়াই ভাল। গ্রামে অপরিচিত কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে পুলিশকে জানাতে হবে। অচেনা মানুষের কথায় বিয়ে কিংবা ভালো বেতনের লোভে শহরে চলে যাওয়া উচিত নয়।’’

কিন্তু সবার আগে চাই সচেতনতা। জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, মানুষ যদি অচেনা মানুষের ফাঁদে বার বার পা দেন, তাহলে পুলিশের পক্ষে অপরাধীদের ধরা সত্যিই সমস্যার। সম্প্রতি হাসনাবাদের টাকিতে পুর সাংস্কৃতিক মঞ্চে নারী পাচার নিয়ে কর্মশালা হয়। যৌথ আয়োজক ছিল জেলা পুলিশ এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি নারী পাচার বন্ধে সচেতনতা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। নাবালিকাদের কী ভাবে ভিন রাজ্যে পাচার করা হয় সেই নিয়ে একটি তথ্যচিত্রেরও প্রদর্শন হয় ওই কর্মশালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, জেলা জুড়ে এই রকম আরও কর্মশালা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

woman trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE