Advertisement
E-Paper

ত্রিকোণ প্রেমের জেরে যুবকের গলা কেটে খুন করল প্রেমিকার মা-বাবা

ত্রিকোণ প্রেমের বলি হল বছর কুড়ির তরতাজা যুবক সৌমেন মাইতি। দশম শ্রেণিতে বার বার অকৃতকার্য হয়ে সৌমেন তাঁর বাবা চন্দন মাইতির ডেকরেটিংয়ের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। সৌমেনের মা মিঠু মাইতি বাড়িতেই থাকতেন। বোন মণিমালা মাইতি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ২০:৫৮

ত্রিকোণ প্রেমের বলি হল বছর কুড়ির তরতাজা যুবক সৌমেন মাইতি। দশম শ্রেণিতে বার বার অকৃতকার্য হয়ে সৌমেন তাঁর বাবা চন্দন মাইতির ডেকরেটিংয়ের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। সৌমেনের মা মিঠু মাইতি বাড়িতেই থাকতেন। বোন মণিমালা মাইতি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয়দের দাবি, সৌমেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বড়বাড়ি গ্রামের সুনীতি দলুইয়ের সঙ্গে। কিন্তু সুনীতিকে আবার ভালবাসতেন তাঁর গৃহশিক্ষক বুদ্ধদেব মণ্ডল। অভিযোগ, বুদ্ধদেব বনাম সৌমেনের মধ্যে দড়ি টানাটানির সম্পর্ক ছিল। সুনীতির বাবা শঙ্কর দলুই ও মা সাবিত্রী দলুই মেয়ের সঙ্গে সৌমেনের প্রেমের সম্পর্ক কোনও দিন মেনে নেয়নি। যদিও সুনীতি সৌমেনকেই ভালবাসতেন বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশের দাবি, সম্পর্কের এই টানাপড়েনে ইতি টানতে সৌমেনকে খুনের পরিকল্পনা করে সুনীতির বাবা-মা। কারণ, সুনীতির পরিবার চেয়েছিল গৃহশিক্ষকের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিতে। যদিও এই প্রস্তাবে সায় ছিল না সুনীতির। তাই খুনের নীল নকশা অনুযায়ী গত বুধবার রাতে কথা বলার জন্য মেয়েকে দিয়ে সৌমেনকে ডেকে পাঠানো হয়। সৌমেন সুনীতির বাড়িতে পৌঁছলে সেখানে তাঁকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। মেয়ে সুনীতিকে পাশের ঘরে আটকে রাখা হয়। তার পর সৌমেনের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে সুনীতির বাবা শঙ্কর দলুই। তাতে অজ্ঞান হয়ে যান সৌমেন। তার পর ধারালো বঁটির সাহায্যে তাঁর গলার নলি কেটে দেয় সুনীতির মা সাবিত্রী দলুই। এর পর সুনীতিকে তার পাঁশকুড়ার মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য রাতের অন্ধকারে সৌমেনের মৃতদেহ চকদ্বীপা গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে দলুইপাড়ার কাছে একটি ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে আসা হয়। যাতে পরে কাক-চিল-শকুনে তা খেয়ে নেয়।

বুধবার থেকে সৌমেন নিখোঁজ থাকায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মিসিং ডায়েরি করা যান তাঁরা। সৌমেনের পরিবারের দাবি, তাঁদের সঙ্গে সৌমেনের ছবি না থাকার জন্য মিসিং ডায়েরি নিতে চায়নি থানা। তবে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরই মধ্যে মামাবাড়ি থেকে সুযোগ বুঝে সুনীতি সৌমেনের জামাইবাবু নিমাই রাউতকে ফোন করে বলে, “মা-বাবার হাত থেকে সৌমেনকে বাঁচাও।” এই খবর পেয়ে জামাইবাবু নিকটবর্তী একটি ক্লাবে খবরটি দেন। ক্লাবের ছেলেরা থানায় গিয়ে তদন্তের জন্য চাপ দেয়। মোবাইল ট্র্যাকারের সাহায্যে সৌমেনের গতিবিধি জানার চেষ্টা করে পুলিশ। তাতেই জানা যায়, ওই ভাগাড়ের আশপাশেই আছেন সৌমেন। ক্লাবের ছেলেরা পুলিশকে নিয়ে সেখানে পৌঁছতেই পচা গন্ধ পায়। খোঁজ করতেই ভাগাড়ে মেলে সৌমেনের পচাগলা দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সৌমেনের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সুনীতির মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। প্রথমে তাঁরা সবকিছু অস্বীকার করে। পরে সুনীতির ভাই পুলিশকে খুনের কথা বলে ফেলেন। পুলিশি জেরায় অবশেষে ভেঙে পড়ে সুনীতির বাবা মা। এবং কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। গৃহশিক্ষক কতটা জড়িয়ে তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সৌমেনের খবর পেয়ে বাবা-মা শোকে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন মা মিঠু দেবী। খুনের ঘটনায় জানাজানি হতেই এলাকার বাসিন্দারা সুনীতির মা-বাবার ফাঁসির দাবিতে প্রথমে চকদ্বীপা হাইস্কুলের রাস্তা অবরোধ করেন। পরে সেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে মেচেদা-হলদিয়া ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে। প্রায় এক ঘণ্টা টানা অবরোধে যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ ওঠাতে পুলিশ ব্যর্থ হলে স্থানীয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শঙ্কর নায়েকের প্রতিশ্রুতিতে তা তুলে নেওয়া হয়। তদন্তের স্বার্থে সুনীতিকে মামাবাড়ি থেকে থানায় নিয়ে এসেছে পুলিশ।

love triangle murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy