প্রতীকী ছবি
করোনা-আক্রান্ত পাঁচ বছরের ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন মা। একই ওয়ার্ডের করোনা-আক্রান্ত শিশুর রাতে বাড়াবাড়ি হল। পর দিন সকালে মা দেখেন, সে ‘বেড’ ফাঁকা। ব্লাড ক্যানসারে ভোগা নিজের ছেলের ভাগ্যে কী আছে ভেবে গা শিউরে ওঠে তাঁর। তবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছে পুরুলিয়ার বরাবাজারের হেরবনা গ্রামের শিশু অজয় সিং সর্দার। করোনা-জয়ী অজয়ের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে খেলনা ও পুষ্টিকর খাবারদাবার দিয়েছে বরাবাজার থানা। পরিবারটিকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে পুলিশ।
শত্রুঘ্ন সিং সর্দার ও গুরুবারি সিং সর্দারের চার সন্তানের মধ্যে অজয় ছোট। বিঘে দেড়েক জমি থেকে যা ধান মেলে, তাতে সারা বছর সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে দম্পতি দিনমজুরি করেন। মাটির বাড়ি, খড়-খাপড়ার চালার একটি ঘরেই তাঁদের রান্না, শোয়া সব কিছু।
গুরুবারি জানান, বছর দেড়েক আগে অজয়ের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। গত ন’মাস ধরে কলকাতায় ঠাকুরপুকুরে সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টারে থেকে তিনি অজয়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘৩০ মে ক্যানসার হাসপাতালের এক ডাক্তার জানান, অজয়ের করোনা ধরা পড়েছে। ভয়ে গুটিয়ে যাই। শুনেছিলাম, করোনা ভয়ঙ্কর রোগ। তবে ডাক্তারেরা সাহস দিয়েছিলেন। তাঁদের চেষ্টায় অজয়কে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শিশু বিভাগে ভর্তি করানো হয়।’’
কলকাতা মেডিক্যালে অজয়ের পাশে গুরুবারিকে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, ছেলের কোনও উপসর্গ না থাকলেও, প্রতিটি দিন উৎকণ্ঠায় কেটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘অজয়ের কয়েকটা বেড পরে রাতে করোনা-আক্রান্ত একটা বাচ্চার বাড়াবাড়ি হওয়ায় ডাক্তার ও সিস্টারদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। সে বাচ্চাটা খুব ছটফট করছিল। রাতে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হল। সকালে ঘুম ভাঙতে দেখি, বেডটা ফাঁকা। বাচ্চাটার কী হল সিস্টারদের কাছে জানতে চাইলাম। জবাব পাইনি। গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। পরের ক’টা দিন যে কী ভাবে কেটেছে, বলতে পারব না।’’
তিন সন্তানের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে ছিলেন শত্রুঘ্নবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অজয়ের করোনা হয়েছে শুনে এক রকম হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে গ্রামের ভিলেজ পুলিশ উত্তম মাহাতো মাঝেমধ্যে বাড়িতে এসে ফোনে গুরুবারির সঙ্গে কথা বলাতেন। তখন ফোনে স্ত্রীকে ভরসা দিতাম। ’’
গত ১৫ জুন ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন গুরুবারি। সেই করোনা-জয়ীকে দেখতে গিয়েছিলেন বরাবাজার থানার আইসি সৌগত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওই শিশু ফিরে আসার পরে গ্রামের কয়েক জন মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আতঙ্কের কিছু নেই। দু’সপ্তাহ পরিবারের লোকেরা বাড়ির বাইরে যাবেন না।’’ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য তথা হেরবনা গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই বাচ্চাটা ও তার পরিবারের মনের জোরের কদর করতেই হয়। একের পরে এক ঝড় সামলাচ্ছে ওরা। পঞ্চায়েত ওই পরিবারের পাশে রয়েছে।’’ বিডিও (বরাবাজার) সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই পরিবারটিকে কী ভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব, দেখছি।’’
আরও পড়ুন: বাস ও রুট বৃদ্ধির পরামর্শ কমিটির
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy