উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ৩১০০ কোটি টাকার ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরই হোক বা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ, গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে কোনওটিরই কাজ সে ভাবে হয়নি। জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের এমন অবস্থায় চিন্তিত কেন্দ্রের নতুন সরকার। ওই সব প্রকল্পের কাজে কেন দেরি হচ্ছে, তার খোঁজ নিতে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ত সচিব-সহ রাজ্যে জাতীয় সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পদস্থ কর্তাদের দিল্লিতে তলব করেছেন কেন্দ্রের নতুন সড়ক-পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, যে সব রাজ্যে জমি জট-সহ নানা কারণে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে দেরি হচ্ছে, তাদের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে দিল্লিতে। আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার দফায় দফায় সব রাজ্যের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন গডকড়ী। রাজ্যের পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, জমি-জটে কেন ওই সব প্রকল্প আটকে রয়েছে এবং কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই রাজ্যের পূর্ত সচিব-সহ পদস্থ কর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন মন্ত্রী।
পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে সড়ক পরিবহণের উন্নয়নের মাধ্যমে ভুটান, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াতে চায় ভারত। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ভুটান সফরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২৫ এবং ২৬ জুন বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। কিন্তু সড়ক পরিবহণের উন্নয়ন না হলে বাণিজ্যে গতি আসবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এ রাজ্যে সড়ক তৈরির প্রকল্প আটকে থাকার কারণ যে মূলত রাজনৈতিক, তা স্পষ্ট সব পক্ষেরই কাছে। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিল, সরকার কোথাও জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না। জমি অধিগ্রহণ করতে গেলেই যদি বড়সড় আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়, এই আশঙ্কায় গত তিন বছরে কোথাও তা নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি রাজ্য সরকার। আর তার ফলে বহু ক্ষেত্রে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেলেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজও সে করণে কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে যেখানে বেশির ভাগ জায়গায় জাতীয় সড়ক চার লেন বা ছয় লেনে সম্প্রসারিত হয়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এর অগ্রগতি কার্যত শূন্য!
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমাদের তো জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোনও সমস্যাই নেই। সেটাই আমরা কেন্দ্রকে বৈঠকে জানাব। তার পরে কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে।” পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য জমি-জট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকে আমি যাচ্ছি না। দফতরের কর্তারা যাবেন। তাঁরাই গিয়ে যা জানানোর জানাবেন।”
রাজ্যের কোন কোন প্রকল্পগুল নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্র? সড়ক-পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ৩১০০ কোটি টাকার ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর তৈরির যে প্রকল্প ইউপিএ সরকার নিয়েছিল, তাতে বিহারের পূর্ণিয়া অবধি জাতীয় সড়ক ছয় লেনে সম্প্রসারিত হয়ে গেলেও এ রাজ্যে বেশির ভাগ কাজই আটকে। রাজ্য পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে ওই করিডর ছিল শিলিগুড়ি থেকে ঘোষপুকুর-ফালাকাটা-সলসলাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ কিলোমিটারের।
একই ভাবে জমি-জটে আটকে তেমন অগ্রগতি হয়নি বারাসত থেকে বনগাঁ হয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত জাতীয় সড়ক প্রকল্পেরও। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও বেশির ভাগ কাজই বাকি রয়েছে।
বারাসত-পেট্রাপোল বা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর প্রকল্পের মতোই জমি-জটে প্রায় থমকে রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর, বহরমপুর থেকে ফরাক্কা, ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ, রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা পর্যন্ত রাস্তার চার লেনে সম্প্রসারণের বিভিন্ন স্তরের কাজ। জমি জটে কাজ এগোয়নি ডানকুনি থেকে খড়্গপুর, ডানকুনি থেকে পানাগড়, পানাগড় থেকে আসানসোল এবং খড়্গপুর থেকে বালেশ্বর পর্যন্ত ছয় লেন সড়ক তৈরির কাজও।
জাতীয় সড়ক প্রকল্পে সেতু তৈরির কাজ, লেভেল ক্রসিং পরিবর্তন এবং বন ও পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র পেতে কী কী অসুবিধে রয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা করবেন গডকড়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy