Advertisement
০৯ মে ২০২৪

কথায় রাজি কর্তৃপক্ষ, তবু দিশা মিলছে না জটমুক্তির

দু’সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও জট কাটার সম্ভাবনা কতটা, প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কারণ, আন্দোলনকারীদের মূল দাবি বরাবরের জন্য পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছাত্রদের জন্য বিশ্বভারতীর স্নাতকস্তরে ‘কোটা’ বজায় রাখা। আর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেই দাবি মানতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মভঙ্গের দায়ে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।

উপাচার্যের আবাসনের সামনে পাত পেড়ে খাওয়ানো হচ্ছে অবস্থানকারী পড়ুয়াদের। শনিবার দুপুরে।  ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

উপাচার্যের আবাসনের সামনে পাত পেড়ে খাওয়ানো হচ্ছে অবস্থানকারী পড়ুয়াদের। শনিবার দুপুরে। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

মহেন্দ্র জেনা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

দু’সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও জট কাটার সম্ভাবনা কতটা, প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কারণ, আন্দোলনকারীদের মূল দাবি বরাবরের জন্য পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছাত্রদের জন্য বিশ্বভারতীর স্নাতকস্তরে ‘কোটা’ বজায় রাখা। আর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেই দাবি মানতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মভঙ্গের দায়ে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।

বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রীর একাংশ, তাদের অভিভাবক, এবং সেই সঙ্গে অধ্যাপক সভা, কর্মিসভা ও আধিকারিক সভার সদস্যদের ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’-র আন্দোলনে অচলাবস্থা কাটাতে শনিবার সহ-উপাচার্য স্বপন দত্ত কথা বলতে চান আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্ররা দাবি করেন, কেবল তাদের সঙ্গে নয়, জয়েন্ট কমিটির সঙ্গে কথা বলতে হবে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে জামশেদ আলি খান, অচিন্ত্য বাগদিরা বলেন, “বিশ্বভারতীর এই আন্দোলনে সব পক্ষই যুক্ত হয়েছেন। তাই কর্তৃপক্ষকে ছাত্রদের পাশাপাশি কর্মী, অধ্যাপক ও আধিকারিক, অভিভাবকদের নিয়েও আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, তাতে রাজি হলেও কর্তৃপক্ষ ভর্তি ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলতে রাজি হবে না।

কিন্তু চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় কোনও শর্ত আরোপ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, উপাচার্যের পদত্যাগ এবং অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থান আরও তীব্র করছে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি অধ্যাপক, কর্মী ও আধিকারিকদের একটা অংশও সরাসরি আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়া কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত শনিবার দিনভর নিজের ঘর থেকে বের হলেন না। উল্টে, তাঁর আবাসনের বাইরে অবস্থান করে নিজেদের দাবিতে অনড় থেকেছেন আন্দোলনকারীরা।

অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ২৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভ, অবস্থান, মিছিলের সঙ্গে ক্লাস বয়কটও চলছে। ২৩ ডিসেম্বর টানা ২০ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের জেরে চাপে পড়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ বহাল রাখার কথা ঘোষণা করেন উপাচার্য। বলা হয় পরবর্তী কর্মসমিতির বৈঠকে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।

কিন্তু, গত ২৪ জানুয়ারি কলকাতায় কর্মসমিতির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর না পড়ায় লাগাতার আন্দোলনে স্তব্ধ হয় বিশ্বভারতী। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার একটি নোটিস জারি করে রেজিস্ট্রার ডি গুণশেখরন জানিয়ে দেন, ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্যই অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ বহাল থাকবে। সঙ্গে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতেই আরও তীব্র হয় আন্দোলন। আন্দোলনকারীদের দাবি, আগামী বছরগুলিতেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা জারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে।

এমন নানা দাবিতে মাঘের শীতে শুক্রবার রাতভর সামিয়ানা খাটিয়ে উপাচার্যের আবাসন ‘পূর্বিতা’র সামনে বসে রয়েছেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। এ দিন রাতে অনেকেই হস্টেল ও মেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন। যাদবপুরের পড়ুয়ারা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে অনশন করলেও, বিশ্বভারতীতে আন্দোলনকারীদের জন্য দুপুর ও রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুক্রবার সারা রাত মাইকে গান এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানে উচ্চকিত ছিল বিশ্বভারতী চত্বর। শনিবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ১২ ঘণ্টা অবস্থান করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ দিনও কোনও ভবন ও বিভাগের তালা খোলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

santiniketan mahendra jena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE