Advertisement
E-Paper

করিমের সামনে জেরার পরে গ্রেফতার মদন-ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত

সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংস্রব। ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া। জোর করে জমি দখল। এ-সব অভিযোগ ছিলই। এ বার সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে অসহযোগিতা এবং ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত নস্করকে গ্রেফতার করল ইডি। অভিযোগ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সারদা গার্ডেন্সের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরেও ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেখিয়ে তার একাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন এই প্রশান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
ইডির দফতরে প্রশান্ত নস্কর (বাঁ দিকে) ও বাপি করিম।—নিজস্ব চিত্র।

ইডির দফতরে প্রশান্ত নস্কর (বাঁ দিকে) ও বাপি করিম।—নিজস্ব চিত্র।

সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংস্রব। ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া। জোর করে জমি দখল। এ-সব অভিযোগ ছিলই। এ বার সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে অসহযোগিতা এবং ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত নস্করকে গ্রেফতার করল ইডি।

অভিযোগ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সারদা গার্ডেন্সের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরেও ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দেখিয়ে তার একাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন এই প্রশান্ত। তদন্তকারীরা জানান, সুদীপ্তের অনুমতি নিয়ে প্রশান্ত নিজেই একটি সংস্থা খুলেছিলেন। জমি কেনাবেচার সঙ্গে সঙ্গে লগ্নির কারবার করত সেই সংস্থা। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সুদীপ্ত ছাড়াও বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে টাকা গিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে ইডি।

শুক্রবার সকালে সল্টলেকে ইডি-র দফতরে ডেকে পাঠিয়ে একটানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় প্রশান্তকে। তারই মধ্যে ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক বাপি করিমকে ডেকে পাঠানো হয়। ইডি-র তদন্তকারীদের অনুমান, প্রশান্ত সম্পর্কে অনেক

তথ্যই জানেন বাপি। সেই জন্যই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। তার পরেই প্রশান্তকে গ্রেফতার করা হয়। সুদীপ্তের স্ত্রী পিয়ালি এবং ছেলে শুভজিৎ সেন ছাড়াও সারদা কাণ্ডে এর আগে ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তার প্রায় আট মাস পরে এই মামলায় আবার কাউকে গ্রেফতার করল তারা।

কিন্তু কে এই প্রশান্ত?

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে মিনিবাসের কন্ডাক্টর ছিলেন একদা সিপিএম-ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত। স্থানীয় সূত্রের খবর, সুদীপ্তের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় সিপিএমেরই এক নেতার মাধ্যমে। তখনও তৈরি হয়নি সারদা গার্ডেন্স। কন্ডাক্টরের কাজ ছেড়ে ভাই পীযূষ নস্করকে নিয়ে ইট-বালি-চুন-সুরকির ব্যবসা শুরু করেন প্রশান্ত। এ দিন পীযূষকেও ডেকে পাঠায় ইডি। তিনি আসার পরে তাঁকে সমন ধরানো হয়। প্রশান্ত গ্রেফতার হওয়ার পরেও দীর্ঘ ক্ষণ ছাড়া হয়নি বাপি ও পীযূষকে। সন্ধ্যায় পীযূষকে যেতে দেয় ইডি। বাপি ছাড়া পান রাত ৮টা নাগাদ।

প্রশান্ত-পীযূষের উত্থান পর্বে বিষ্ণুপুরে বিশ্বনাথ অধিকারী নামে এক প্রোমোটার খুন হন। স্থানীয় সূত্রের খবর, তার পরেই ব্যবসা বাড়তে থাকে নস্কর ভাইদের। এই সময় সুদীপ্ত ওই এলাকায় জমি কিনতে আগ্রহী হন। অভিযোগ, নস্কর ভাইয়েরা তখন জোর খাটিয়ে বহু কৃষকের জমি দখল করে নেন। এবং সেই সব জমি তুলে দেওয়া হয় সুদীপ্তের হাতে। ইডি-র খবর, সেই সময় সরাসরি বিক্রির দলিল না-করে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র ব্যবস্থা হয়। সেই ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’তে সুদীপ্ত ছাড়াও ছিল প্রশান্তের নাম। তার জোরেই সারদা গার্ডেন্সে ইডি-র বাজেয়াপ্ত করা বেশ কিছু সম্পত্তি বেচে দিয়েছেন প্রশান্ত।

এলাকার অনেকেই জানান, রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূলের মন্ত্রী মদনবাবুর ঘনিষ্ঠ হন প্রশান্ত। বাপি করিম তখন ক্রীড়ামন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী। ফলে প্রশান্ত ও বাপির মধ্যেও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। প্রশান্ত অবশ্য এ দিন ইডি-র কাছে বলেন, সুদীপ্তের কাছে এখনও আড়াই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তাঁর। ইডি অফিসারদের কথায়, “কয়েক বছর আগে যিনি মিনিবাসের কন্ডাক্টর ছিলেন, তাঁর এমন উত্থান হল যে, আড়াই কোটি টাকা পাওনা থাকলেও জীবনযাত্রায় তার কোনও প্রভাব পড়ছে না!” প্রশান্তের এই বিপুল আয়ের উৎস জানতে চাইছেন তাঁরা।

সম্প্রতি বিষ্ণুপুরে স্বামীনারায়ণ মন্দির নিয়ে তদন্তে নেমেই প্রশান্তের নাম জানতে পারে ইডি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই মন্দির গড়ার সময় মোটা টাকা চাঁদা দেন সুদীপ্ত। যে-জমির উপরে ওই মন্দির গড়া হয়েছে, তা সুদীপ্তেরই কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ওই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়েছে মদনবাবুর নামও।

ক্রীড়ামন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে এ দিন জানান চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, মদনবাবুর রক্তচাপ আপাতত নিয়ন্ত্রণে। তবে মানসিক চাপ কাটেনি। মাঝেমধ্যেই অস্থির হয়ে পড়ছেন। রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে না। পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়াও করছেন না। হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্রের অবস্থার পর্যালোচনা করতে আজ, শনিবার ইকোকার্ডিওগ্রাম হবে।

আলিপুর জেলা আদালত জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার মদনবাবুর তরফে কলকাতা হাইকোর্টে একই আর্জি জানানো হয়েছিল। শুক্রবার তাঁর আইনজীবী সেই আবেদনের দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করতে বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চকে অনুরোধ করেন। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, শুনানি হবে শীঘ্রই।

ed prasanta naskar sardha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy