Advertisement
E-Paper

কলেজে শিক্ষিকাকে চড়, ছাত্রের পাশে টিএমসিপি

ফাঁকা ক্লাসঘরে দুই ছাত্রছাত্রীর আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রের হাতেই চড় খেলেন শিক্ষিকা। ওই ছাত্রের শাস্তির দাবিতে কলেজের শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার ক্লাস বয়কট করেছেন। অথচ অভিযুক্ত ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। টুকতে বাধা পেয়ে রায়গঞ্জে শিক্ষককে মারধর থেকে ভাঙড় কলেজে আরাবুল ইসলামের শিক্ষিকার দিকে জগ ছুড়ে মারা রাজ্যে সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশ কয়েক বার ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৫
নিগৃহীত শিক্ষিকার বাড়ির পথে তাঁর সহকর্মীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

নিগৃহীত শিক্ষিকার বাড়ির পথে তাঁর সহকর্মীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

ফাঁকা ক্লাসঘরে দুই ছাত্রছাত্রীর আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রের হাতেই চড় খেলেন শিক্ষিকা। ওই ছাত্রের শাস্তির দাবিতে কলেজের শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার ক্লাস বয়কট করেছেন। অথচ অভিযুক্ত ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ।

টুকতে বাধা পেয়ে রায়গঞ্জে শিক্ষককে মারধর থেকে ভাঙড় কলেজে আরাবুল ইসলামের শিক্ষিকার দিকে জগ ছুড়ে মারা রাজ্যে সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশ কয়েক বার ঘটেছে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যতই শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলবে না বলে বার্তা দিন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় শাসকদল বা তাদের ছাত্র সংগঠন। এ বার বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজে দর্শনের বিভাগীয় প্রধান সাত্বকী পোদ্দারকে চড় মারায় অভিযুক্ত ছাত্রটিও টিএমসিপি-ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ।

কলেজের অধ্যক্ষ শিবপ্রসাদ রুদ্রের কথায়, “সাত্বকীদেবীর অভ্যেস হল, ক্লাস নিয়ে স্টাফরুমে ফেরার পথে যে ঘরগুলিতে ক্লাস হচ্ছে না, সেগুলি দেখতে-দেখতে আসা। সেগুলিতে আলো-পাখা চললে তা বন্ধ করে দেওয়া। বুধবার সে ভাবেই তিনতলার লাইব্রেরির পাশের একটি ক্লাসঘরে উঁকি দিয়ে তিনি দেখেন, দুই ছাত্রছাত্রী ঘনিষ্ঠ ও আপত্তিকর অবস্থায় বসে রয়েছে। কী হচ্ছে জানতে চাইলে তারা চটে যায়।” সাত্বকীদেবীর অভিযোগ, “খানিক পরেই ছাত্রটি স্টাফরুমে ঢুকে আমায় অপমান করে। পরে বাড়ি ফেরার সময়ে কলেজের গেটের মুখে আমার ছেলের সামনেই বাঁ গালে প্রচণ্ড জোরে চড় মারে। আমি পড়ে যাই।” পরে তিনি লিখিত ভাবে অধ্যক্ষকে গোটা ঘটনা জানান।

অধ্যক্ষ জানান, অভিযুক্ত ছাত্রের নাম বিকাশচন্দ্র দাস। সে পাশ কোর্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার শাস্তির দাবিতে কলেজের কোনও শিক্ষক এ দিন ক্লাস নেননি। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি। কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অনিমেষ দেবনাথ বলেন, “শিক্ষিকাকে নিগ্রহের প্রতিবাদে আমরা বৈঠক ডেকে সারাদিন ক্লাস বয়কট করেছি। ছাত্রটির শাস্তি চেয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি ভূদেবচন্দ্র ঘোষের কাছে আর্জিও জানিয়েছি।” ভূদেববাবু বলেন, “সোমবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে।”

এর পরেও অবশ্য অভিযুক্ত ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন কলেজের টিএমসিপি নেতৃত্ব। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ হাজরার দাবি, “ওই শিক্ষিকা প্রচণ্ড বদমেজাজি। প্রত্যেকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ছাত্রটির আমাদের জানিয়েছে, সে শিক্ষিকার সঙ্গে দর্শন বিভাগ নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল। তিনিই মেরে তার চশমা ও হেডফোন ভেঙে দেন। জামা ছিঁড়ে দিয়েছেন, হাতে আঁচড়ে-কামড়েও দিয়েছেন।” এই মর্মে ছাত্রটির লিখিত অভিযোগ সংসদের তরফে অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়েছে। বর্ধমান থানায় ডায়েরিও করে এসেছে ছাত্রটি। শিক্ষিকার শাস্তি দাবি করে টিএমসিপি কলেজে মিছিল করেছে।

অধ্যক্ষ বলেন, “বুধবার ছাত্র সংসদের তরফে বলা হয়েছিল, শিক্ষিকা আকাশ দত্ত নামে একটি ছেলেকে মেরেছেন। এ দিন আবার বলা হচ্ছে, তার নাম বিকাশ দাস। তাই ওই অভিযোগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।” শিক্ষিকা পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন না কেন? সাত্বকী দেবী বলেন, “আমার স্বামী এখানে থাকেন না। নাবালক ছেলেকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকি। তাই কিছু বলতে বা করতে তাই সাহস পাচ্ছি না।” এক দল শিক্ষক এ দিন কলেজের কাছেই ছোটনীলপুর পিরতলায় তাঁদের বাড়িতে যান। শিক্ষিকা কাঁদতে-কাঁদতে অধ্যক্ষকে বলেন, “আমরা প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এর পর থেকে সন্ধ্যের পরে বাইরেই থাকতে পারব না!” অন্য শিক্ষকেরাও নিরাপত্তাহীনতার অনুযোগ করেন।

শিক্ষিকাকে নিগ্রহের প্রতিবাদে কলেজের কিছু ছাত্রছাত্রী এ দিন ধর্নায় বসবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু হুমকি দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের কটাক্ষ, “অভিযুক্ত ছাত্রটি তো সব সময় ছাত্র সংসদ অফিসে বসে থাকে বলেই শুনেছি। তাকে মদত দিচ্ছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে পিঠ বাঁচাতে চাইছে।”

অস্বস্তিতে পড়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্বও। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের বক্তব্য, “ওই ছাত্র সম্ভবত আমাদের সংগঠনের কেউ নয়। যদি তা হয়েও থাকে, তা হলেও শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনা সমর্থন করা যায় না।”

সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? অশোকবাবু বলেন, “আগে ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখি, কী ঘটেছে। তার পরে ঠিক করব।”

bardwan college tmcp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy