Advertisement
E-Paper

জেলা সভাপতি বদলে ‘সম্পদ’ বেহাত অধীরের

আগের দিন বলেছিলেন ‘দলের সম্পদ’। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই আব্দুল মান্নানের প্রবল বিরোধী এক নেতার হাতে হুগলি জেলা কংগ্রেসের দায়িত্ব প্রায় তুলে দিয়ে এলেন অধীর চৌধুরী! প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে দূরত্ব রেখেই চলছিলেন মান্নান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রবিবারের ঘোষণার পরে সেই ফাটল আরও চওড়া হল। সেই সঙ্গেই দ্বন্দ্ব প্রকট হল প্রদেশ স্তরেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭

আগের দিন বলেছিলেন ‘দলের সম্পদ’। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই আব্দুল মান্নানের প্রবল বিরোধী এক নেতার হাতে হুগলি জেলা কংগ্রেসের দায়িত্ব প্রায় তুলে দিয়ে এলেন অধীর চৌধুরী! প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে দূরত্ব রেখেই চলছিলেন মান্নান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রবিবারের ঘোষণার পরে সেই ফাটল আরও চওড়া হল। সেই সঙ্গেই দ্বন্দ্ব প্রকট হল প্রদেশ স্তরেও।

ডানকুনিতে এ দিন হুগলি জেলা কংগ্রেসের কর্মিসভায় গিয়েছিলেন অধীর। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের সবাইকে সেই কর্মিসভার খবরই দেওয়া হয়নি বলে দলের একাংশের অভিযোগ। প্রত্যাশিত ভাবেই সেখানে যাননি মান্নান এবং তাঁর অনুগামীরা। তাঁদের অনুপস্থিতিতে ওই কর্মিসভায় অধীর এ দিন গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রীতম ঘোষের। জেলা রাজনীতিতে যিনি মান্নানের প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত, যাঁকে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী করায় সন্ন্যাস পর্যন্ত নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মান্নান। এই পূর্ব ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও এ দিনের কর্মিসভায় অধীর বলেছেন, ‘‘হুগলি জেলা নেতৃত্বের ডাকে এখানে এসেছি। প্রদেশ সভাপতি হিসেবে প্রদেশ নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রীতম ঘোষের নেতৃত্বে এখানে এসেছি। তার মানে দু’য়ে দু’য়ে চার এটাই যে, প্রীতম ঘোষ বর্তমানে হুগলি জেলায় দলের সভাপতি।”

বস্তুত, প্রদেশ কংগ্রেস যে ভাবে চলছে, তাতে শুধু হুগলি নয়, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে নানা জেলাতেই। একের পর এক সিদ্ধান্ত তাঁদের অন্ধকারে রেখে নেওয়া হচ্ছে বলে প্রদেশ স্তরের বহু নেতাই ক্ষুব্ধ। ক’দিন আগেই বনগাঁয় প্রদেশ সভাপতির কর্মিসভায় ডাক পাননি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি অসিত মজুমদার। মালদহে প্রদেশ সভাপতি সভা করছেন, জানতেন না সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী! পুরুলিয়ায় আজ, সোমবারই একটি কর্মিসভায় যাওয়ার কথা অধীরের। জেলার নেতা নেপাল মাহাতোর আর্জিতে সেখানে যাচ্ছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া। তবে তাঁরও বক্তব্য, “আমাকে সব সময় ডাকা হয় না। তবু দলের নামে সভা বলে অনেক জায়গায় চলে যাই!” প্রদেশ নেতৃত্বেরই একাংশের প্রশ্ন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। কিন্তু যে ২০ জানুয়ারির শহিদ মিনার সমাবেশের জন্য এত কর্মিসভা হচ্ছে, এ ভাবে চললে সেখানে অংশ নিতে কী করে উৎসাহ পাবেন জেলার নেতা-কর্মীরা?

হুগলি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বা প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিলীপ নাথেরা কেউই কর্মিসভায় ছিলেন না। পরে সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘ওটা আসলে বিক্ষুব্ধদের সম্মেলন!’’ সঞ্জয়বাবুর দাবি, জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করে এআইসিসি। প্রদেশ সভাপতি কারও নাম প্রস্তাব করতে পারেন। হুগলিতে এ দিন যা হয়েছে, তাতে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে বলে অভিযোগ প্রদেশ নেতৃত্বের একাংশেরও।

মান্নান মুখ খোলেননি। তবে জেলা কংগ্রেসে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “ডানকুনিতে এ দিন যে ভাবে মান্নানদা’কে অপমান-অবহেলা করা হয়েছে, এর পর তিনি যে কোনও পদক্ষেপ নিয়ে বসতে পারেন!” মাত্র শনিবারই সারদার আইনি লড়াইয়ের জন্য গোটা দল মান্নানের কাছে কৃতজ্ঞ বলে মন্তব্য করেছিলেন অধীর। প্রদেশ সভাপতির সেই মন্তব্যে অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। এর এ দিন যা হয়েছে, তাতে দ্বন্দ্ব অবসানের কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না!

ডানকুনি কোল কমপ্লেক্সের প্রেক্ষাগৃহে এ দিনের কর্মিসভায় অধীর ছাড়াও ছিলেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সচেতক অসিত মিত্র, আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রমেন পাণ্ডে প্রমুখ। কর্মিসভায় বলার সুযোগ পেয়ে জেলা সভাপতি পরিবর্তনের দাবি তোলেন অনেকে। শ্রীরামপুরের প্রাক্তন এক মহিলা কাউন্সিলর সরাসরিই বলেন, ‘‘আমাদের উপরে চাপ ছিল এই বৈঠকে না আসার!’’ পরে মান্নানের নাম না করেই বক্তৃতায় অধীর বলেন, “হুগলিতে আমরা দুর্বল। এখানে তিনটি লোকসভা আসনেই আমাদের জামানত জব্দ হয়েছে। তাই বাহাদুরি দেখিয়ে লাভ নেই!’’ এই সূত্রেই জেলা সভাপতি হিসেবে প্রীতমবাবুর নাম ঘোষণা করে দেন তিনি।

adhir chowdhury abdul mannan pradesh congress pritam ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy