বছর তিনেক আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখে সারদা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালু। কিছু দিন পরে তিনি ফের একটি চিঠি লিখে আগের চিঠির সঙ্গে দেওয়া তালিকা থেকে সারদার নাম বাদ দিতে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীকে।
কেন?
মূলত এই প্রশ্নের জবাব পেতে সোমবার ডালুবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে এই প্রথম রাজ্যের কোনও কংগ্রেস সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করল ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। এ দিন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের দফতরে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করা হয় মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীকে।
সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন মালদহে প্রচুর সম্পত্তি কিনেছিলেন। সম্প্রতি ইংরেজবাজার থানা এলাকার টিয়াকাঠি ও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে সারদার ১১টি সম্পত্তির হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে সিবিআইয়ের অনুমান, ওই সব সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ডালুবাবুর যোগাযোগ থাকতেও পারে।
ডালুবাবুর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১১ সালে, মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ডালুবাবু তাঁকে চিঠি দিয়ে এই রাজ্যের সব বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এই ধরনের সংস্থার একটি তালিকাও পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও একটি চিঠি পাঠান ডালুবাবু। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, আগের চিঠিতে তিনি অর্থ লগ্নি সংস্থার নামের যে-তালিকা দিয়েছিলেন, তা থেকে সারদার নামটি যেন বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সারদা-প্রধান সুদীপ্তের প্রশংসাও করেন সেই চিঠিতে। সেই চিঠি সিবিআইয়ের হাতে পৌঁছে গিয়েছে। এ দিন সেই বিষয়েই ওই কংগ্রেস সাংসদকে জেরা করেন সিবিআই অফিসারেরা। তাঁদের প্রশ্ন, আচমকা ডালুবাবুর এই মত পরিবর্তন কেন? জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে তিনি ঠিক কী বলেছেন, তা বিশদ ভাবে জানা যায়নি। সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনেও এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে চাননি ডালুবাবু। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি সুদীপ্তকে চেনেন? সারদা-কর্ণধারের সঙ্গে তাঁর কখনও দেখা বা বৈঠক হয়েছিল কি? জবাবে ডালুবাবু শুধু বলেন, “না।”
এ দিনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তিন জন অফিসারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই রাজ্যে সারদা, রোজভ্যালির মতো অর্থ লগ্নি সংস্থা আরবিআই-এর নিয়ম মেনে টাকা তুলেছে কি না, নিয়ম অমান্য করা থাকলে আরবিআই তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এই সব প্রশ্নের জবাব পেতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে ইডি সূত্রের খবর। রাত পর্যন্ত ইডি-র দফতরে এই জেরা চলে। ওড়িশার একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার কাছ থেকে জমি ও বাড়ি উপঢৌকন নেওয়ার অভিযোগে এ দিনই ওই রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক মহান্তিকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
সরকারি ও বেসরকারি যে-সব ব্যাঙ্কে সারদার অ্যাকাউন্ট ছিল, সেই ব্যাঙ্ক অব বরোদা, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের অফিসারদেরও এ দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল সিবিআইয়ের সল্টলেকের দফতরে। সারদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত সবিস্তার নথিপত্র নিয়ে তাঁরা বিকেলে সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান। রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলে।