Advertisement
E-Paper

দু’ঘণ্টায় ২২০০ কোটি! লগ্নিতে ‘ভাসছে’ উত্তরবঙ্গ

মাত্র দু’ঘণ্টা। তার মধ্যেই হিসেব করে দেখা গেল, ২২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসে গিয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হল গত বছর দু’টি শিল্প সম্মেলনে পাওয়া বিনিয়োগের প্রস্তাব ১৭০০ কোটি টাকা। দু’য়ে মিলে ৩৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে উত্তরবঙ্গে, ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সোমবার বিকেলে, উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ শিল্প সম্মেলনে এই ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কয়েকজন হকচকিয়ে গেলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০২
উত্তরবঙ্গে শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

উত্তরবঙ্গে শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

মাত্র দু’ঘণ্টা। তার মধ্যেই হিসেব করে দেখা গেল, ২২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসে গিয়েছে। তার সঙ্গে যোগ হল গত বছর দু’টি শিল্প সম্মেলনে পাওয়া বিনিয়োগের প্রস্তাব ১৭০০ কোটি টাকা। দু’য়ে মিলে ৩৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে উত্তরবঙ্গে, ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

সোমবার বিকেলে, উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ শিল্প সম্মেলনে এই ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কয়েকজন হকচকিয়ে গেলেন। কেউ মুচকি হেসেই গম্ভীর হয়ে গেলেন। আবার কেউ বিড়বিড় করলেন নিজের মনেই। আমন্ত্রিতদের অনেকেই একান্তে জানালেন, এ সব প্রস্তাবের অধিকাংশ বাম আমলের। নতুন মোড়কে পেশ হল। হাতে-গরম প্রাপ্তি বলতে চারটি সংস্থাকে জমি হস্তান্তর এবং তিনটি সরকারি চা বাগান বিক্রি। বাকি প্রস্তাবের ক’টা বাস্তবায়িত হবে, কবেই বা হবে, কেউ জানে না।

কারা উপস্থিত ছিলেন এ দিন? শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া, রবি পোদ্দার, কেভেন্টার্স ফ্রুট প্রসেসিং গ্রুপের কর্ণধার ময়াঙ্ক জালানকে এ বারও দেখা গেল। কিন্তু ভিডিওকনের কর্ণধার কিংবা নানা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার যে শিল্পোদ্যোগীরা গত বৈঠকে ছিলেন, তাঁরা এ বার আসেননি।

যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও হোঁচট খেয়েছেন। শিল্প সম্মেলনের নাম রাখা হয়েছিল, ‘নর্থ বেঙ্গল কলিং।’ উত্তরবঙ্গের শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হবে বলে ঘোষণা হয়। কিন্তু, পর্দায় ফুটে ওঠে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের টুকরো টুকরো ছবি। শিল্পপতিদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ী এবং মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য নিয়ে কী বলছেন তা দেখানো হয়। উত্তরবঙ্গে কী কী ক্ষেত্রে বিনিয়োগ চাইছে রাজ্য সরকার, স্পষ্ট হল কই?

উপস্থিতদের অনেকেই বললেন, তার দরকারও নেই। বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন যাঁরা, তাঁরা অনেকেই বাম আমলে উত্তরবঙ্গে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। সেই সব ব্যবসারই প্রসারে বিনিয়োগের কথা (আবারও) ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীও আছেন। মামনচাঁদ অগ্রবাল ফাস্ট ফুড ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরির জন্য ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। দু’বছর আগে পাহাড়ে লাগাতার বন্ধের সময়ে রেশনে দুর্নীতির অভিযোগে ওই গোষ্ঠীর একজন কর্ণধার গ্রেফতার হয়েছিলেন।

আর এক ব্যবসায়ী রতন বিহানি প্লাস্টিকজাত দ্রব্য তৈরির জন্য ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনিও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযানের সময়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কোচবিহারের তৃণমূল নেতা ভূষণ সিংহের ইলোরা গোষ্ঠী হোটেল শিল্পে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন, শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কোচবিহারের একাধিক তৃণমূল নেতা। আন্দাজ হয়, তাঁর এই আর্থিক সঙ্গতির কথা তাঁর জেলার কেউ টের পাননি।

মকাইবাড়ি, কার্শিয়াঙের ঘুম এবং লাটাগুড়িতে হর্ষ নেওটিয়ার পর্যটন কেন্দ্র গড়ার প্রকল্প, ইস্টার্ন বাইপাসে পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকায় বিনোদন পার্ক তৈরির রবি পোদ্দারের প্রস্তাব, ঋত্বিক দাসের হাউজিং তৈরির প্রস্তাবকোনওটা কয়েক বছর, কোনওটা কয়েক দশক পুরনো। অনেকগুলির কাজ এখনও শুরুই হয়নি। তিন শিল্পোদ্যোগীই অবশ্য আশ্বাস দিলেন, দ্রুত কাজ শুরু হবে।

তবে এ সব অস্পষ্টতায় চিন্তিত নন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বললেন, “সব কিছু নেতিবাচকভাবে দেখলে হবে না। এই বাংলাটা আপনাদেরও।” এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এশিয়ান হাইওয়ে, কলকাতা-শিলিগুড়ি সড়ক পথ, এনএইচপিসি, এনটিপিসি-র প্রকল্পও শিল্প সম্মেলনে ঘোষণা করেন। শিল্পের জন্য কোর কমিটি গড়া, ছয় মাসে একবার তাঁর শিলিগুড়ি আসা, ইউনিট ক্লিয়ারিং সেন্টার খোলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সহায়তা কেন্দ্র তৈরি, বিক্রয় কর এবং রিভিশনাল বোর্ডের শাখা খোলার কথাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

এ বারের সম্মেলন আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, সিকিম থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নতুন বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসেননি কেউ। নেপাল থেকে এলাচ ব্যবসায়ী মহাসঙ্ঘের চার প্রতিনিধি এসেছিলেন। এলাচের মান কলকাতা থেকে পরীক্ষা না করিয়ে, উত্তরবঙ্গেই করিয়ে নিলে সময় বাঁচে, সেই দরবার করতে এসেছেন তাঁরা, জানান সম্পাদক ওমকৃষ্ণ বিমলি। বাংলাদেশের রংপুর এবং লালমণিরহাট চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন সীমান্তে আমদানি-রফতানির সুবিধা বাড়াতে। ভুটানের প্রতিনিধিরা জানান, পর্যটকদের বুদ্ধবিহারে শুল্ক দফতরের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বিধি সরল করার দাবি নিয়ে এসেছেন তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে বলেন, “উত্তরবঙ্গে পাহাড়, নদী, চা বাগান, জঙ্গলে বিনিয়োগের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। পাট, পর্যটন ও পরিবহণে বিনিয়োগ করতে হবে।” বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের পর উত্তরবঙ্গ শিল্প সম্মেলনেও সম্ভাবনাই মূল সুর হয়ে রইল।

uttarkanya north bengal industrial meet amit mitra mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy