Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধৈর্য নয়, অসহিষ্ণুতাই আনে বদল: অমর্ত্য

দিনের পর দিন মুখ বুজে সব সহ্য করে নিলে গণতান্ত্রিক পরিসরে পরিবর্তন আসে না। “সহিষ্ণুতা গুণ কি না, সন্দেহ আছে। অধৈর্য না হলে পরিবর্তন আসে না,” রবিবার বিকেলে আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে তেমনটাই জানালেন অমর্ত্য সেন। একটু আগে সেই অধৈর্য হওয়ার কথাই বলছিলেন শঙ্খ ঘোষ: ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার নমুনাই কি আমরা সম্প্রতি দেখলাম দিল্লিতে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরেও তৈরি হয়ে গেল জনসমষ্টি, যাঁরা জয়ের পর অন্য নানা দলের অভিনন্দনও প্রত্যাখ্যান করলেন!’

জঁ দ্রেজ ও অমর্ত্য সেনের বই ‘অ্যান আনসার্টন গ্লোরি: ইন্ডিয়া ইট্স কন্ট্রাডিকশনস’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে শঙ্খ ঘোষ এবং লেখক। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

জঁ দ্রেজ ও অমর্ত্য সেনের বই ‘অ্যান আনসার্টন গ্লোরি: ইন্ডিয়া ইট্স কন্ট্রাডিকশনস’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে শঙ্খ ঘোষ এবং লেখক। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

গৌতম চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

দিনের পর দিন মুখ বুজে সব সহ্য করে নিলে গণতান্ত্রিক পরিসরে পরিবর্তন আসে না। “সহিষ্ণুতা গুণ কি না, সন্দেহ আছে। অধৈর্য না হলে পরিবর্তন আসে না,” রবিবার বিকেলে আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে তেমনটাই জানালেন অমর্ত্য সেন।

একটু আগে সেই অধৈর্য হওয়ার কথাই বলছিলেন শঙ্খ ঘোষ: ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার নমুনাই কি আমরা সম্প্রতি দেখলাম দিল্লিতে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথাগত রাজনৈতিক দলের বাইরেও তৈরি হয়ে গেল জনসমষ্টি, যাঁরা জয়ের পর অন্য নানা দলের অভিনন্দনও প্রত্যাখ্যান করলেন!’

অধৈর্য এই বিকেল বই প্রকাশের। জঁ দ্রেজ ও অমর্ত্য সেনের বই ‘অ্যান আনসার্টন গ্লোরি: ইন্ডিয়া ইট্স কন্ট্রাডিকশনস’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ এ দিনই শঙ্খ ঘোষের হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ পেল আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে। সেখানেই এল অধৈর্য হওয়ার কথা, দুর্নীতির বিরোধিতার কথা। দ্রেজ ও সেনের বইয়ে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের কথা আছে। ভারতে মেয়েদের নিরাপদ চলাফেরা যে সমস্যা, তা নিয়ে জনপরিসরে বিতর্ক ও আইন তৈরি হয়। বাংলা বইটির প্রকাশে সেই সূত্র ধরে শঙ্খবাবু নিয়ে এলেন পশ্চিমবঙ্গের কথাও, “প্রতিবাদের আয়োজন সব সময়েই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভয়া কাণ্ডের পর এ রাজ্যে কামদুনি ঘটেছিল। অনেকেই বলেছিলেন, মিছিল করে সরকারের টনক নড়ানো যায় না, সামাজিক চেতনা বাড়ানো যায় না। কিন্তু এত দুর্বিপাকের মধ্যেও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে প্রতিবাদ করে চলেছেন।” আর্জেন্তিনার লেখক হোর্হে লুই বোর্হেস লিখেছিলেন, ভাল বই শেষ হয় না। বছরের পর বছর সেটি নতুন করে লেখা হতে থাকে। দ্রেজ-সেনের এই বই সেই জাতের। নির্ভয়াই কবি ও প্রাবন্ধিককে মনে পড়িয়ে দেয় ভবিষ্যতের কামদুনিকে। শঙ্খবাবুর কাছে এ বইয়ের সবচেয়ে উল্লেখ্য অধ্যায়: দায়বদ্ধতা ও দুর্নীতি। দ্রেজ-সেনের এই বই বহুবিধ উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছে, চিনের সঙ্গেও ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম তফাত সরকারি ব্যবস্থার তৎপরতা ও জবাবদিহির দায়বদ্ধতায়। শঙ্খবাবু জানালেন, দায়বদ্ধতার অভাবই দুর্নীতি। অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও কুমার রাণার অনুবাদে এই বই বারংবার দেখিয়ে দেয়, অমর্ত্য দায়বদ্ধতার পক্ষে। মধ্যবিত্ত ‘আম-আদমি’কে সারে, বিদ্যুতে ভর্তুকির বিপক্ষে। জঁ দ্রেজ আসেননি, কিন্তু নালন্দা বিতর্কের পর এ দিনই অমর্ত্যর প্রথম কলকাতা আগমন। “নালন্দা নিয়ে কী বলব? অনেক বলেছি,” নাছোড়বান্দা সাংবাদিকদের জানান তিনি। একান্তে ধরা গেল অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে বসে-থাকা এক অতিথিকে। সুগত বসু। “নালন্দায় সরকারি হস্তক্ষেপ অবশ্যই অন্যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করতে হিংসার আশ্রয়ও কি সমান অন্যায় নয়?” “অবশ্যই”, জানালেন ইতিহাসবিদ। ফের প্রশ্ন করা গেল, “অমর্ত্যর ‘পরিচিতি এবং হিংসা’ সূত্র দিয়ে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই হিংসা ব্যাখ্যা করা যায়? অধ্যক্ষ, সহপাঠীদের অন্য সব পরিচিতি ভুলে যেখানে বিরোধী লবি শব্দবন্ধই হয়ে ওঠে এক এবং একমাত্র পরিচিতি?” উত্তরে হাসলেন সাংসদ, “একশো বার। সেটা নিঃসন্দেহে অন্যতম বড় কারণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amartya sen gautam chakrabarty an uncertain glory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE