Advertisement
E-Paper

ধর্ষণ-খুনের হুমকির মামলা শুরু, অধরাই তৃণমূল নেতা

জমি বিক্রির বকেয়া টাকা চাইতে বাড়িতে গেলে উপ-পুরপ্রধান তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লির এক বিধবা। সোমবার তাঁর অভিযোগ, ওই হুমকির দু’দিন পরে বাড়ি বয়ে এসেও মেদিনীপুরের তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস ফের মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ-খুনের হুমকির অভিযোগের প্রতিবাদে পথে বিরোধীরা মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানা ঘেরাও অভিযান বিজেপির।

তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ-খুনের হুমকির অভিযোগের প্রতিবাদে পথে বিরোধীরা মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানা ঘেরাও অভিযান বিজেপির।

জমি বিক্রির বকেয়া টাকা চাইতে বাড়িতে গেলে উপ-পুরপ্রধান তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লির এক বিধবা। সোমবার তাঁর অভিযোগ, ওই হুমকির দু’দিন পরে বাড়ি বয়ে এসেও মেদিনীপুরের তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস ফের মেয়েকে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দিয়েছেন।

২১ অগস্ট উপ-পুরপ্রধানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি শোনার পরে মা-মেয়ে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের পুলিশ ফিরিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ। এর পরে পুলিশ সুপারের অফিসে তিনি অভিযোগ জমা দেন। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়ার পরেই চাপে পড়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে কোতোয়ালি থানাতেই ওই মহিলা জিতেনবাবুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ তার ভিত্তিতে উপ-পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। যদিও তাঁকে গ্রেফতার করেনি। ঠিক যেমন, নদিয়ার চৌমুহায় তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল প্রকাশ্যে বিরোধীদের উদ্দেশে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ’ করানোর হুমকি দেওয়ার পরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি।

ধর্ষণ-খুনের হুমকির অভিযোগের প্রতিবাদে কোতোয়ালি থানার সামনেই কংগ্রেস।

শরৎপল্লির বাসিন্দা ওই বিধবার অভিযোগ, তাঁর প্রায় সাড়ে তিন কাঠা জমি বিক্রি হয়েছিল ১৫ লক্ষ টাকায়। কিন্তু, তাঁকে দেওয়া হয়েছে অর্ধেক। বাকি সাড়ে সাত লক্ষ টাকা চেয়েও না পাওয়ায় তিনি ও তাঁর মেয়ে ২১ অগস্ট ওই জমি বিক্রিতে মধ্যস্থতা করা এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর জিতেনবাবুর কাছে গিয়েছিলেন। জিতেনবাবু ওই মহিলার তরুণী মেয়েকে ধর্ষণ করিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেন। এ দিন ওই মহিলা বলেন, “তার পর ২৩ অগস্ট (শনিবার) আমাদের বাড়িতে এসে হামলা চালান জিতেনবাবু ও তাঁর দলবল। সে দিনও একই হুমকি দেন।” জিতেনবাবু, তাঁর ভাই সুকুমার দাস, জমির দালাল সলিল চৌধুরী, জমির ক্রেতা সহদেব চৌরা এবং স্থানীয় জনা পনেরো বাসিন্দার (সকলের নাম উল্লেখ নেই) বিরুদ্ধে রবিবার পুলিশে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানান, এখনও পর্যন্ত তিনটি অভিযোগপত্র পেয়েছেন। প্রথমটি ২১ অগস্ট, যে অভিযোগ ওই মা-মেয়ে জানাতে পারেননি সেটি (রবিবার সেই অভিযোগই ওই মহিলার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন কোতোয়ালি থানার আইসি এবং এক অফিসার)। দ্বিতীয়টি ২২ অগস্টের, যে অভিযোগ তাঁরা সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে করেছেন এবং শেষ অভিযোগটি কোতোয়ালি থানায় দায়ের হয়েছে রবিবার রাতে। জিতেনবাবুকে ধরা হল না কেন? পুলিশ সুপারের জবাব, “ওই তিনটি অভিযোগের বয়ানে অসঙ্গতি আছে। খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করব।”

জিতেনবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে দলীয় স্তরেও। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রবিবারই জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতিকে তদন্তভার দিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দল কোনও খারাপ কাজ সমর্থন করে না। তাই দলের প্রবীণ সদস্যকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

তৃণমূল নেতার ধর্ষণ-খুনের হুমকির প্রতিবাদে সিপিএমের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র

উপ-পুরপ্রধানের দাবি, “সবই মিথ্যা অভিযোগ। ওই মহিলার জমি বিক্রির ক্ষেত্রে আমার কোনও ভূমিকাই ছিল না। এ নিয়ে যা জানানোর আমি দলকে জানিয়েছি।” ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সোমবার উপ-পুরপ্রধানকে ধরার দাবিতে থানা ও পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। কংগ্রেস প্রতিবাদ-মিছিল করে। সিপিএম কর্মীরা থানা ঘেরাও করেন। দলীয় কর্মসূচিতে এ দিন শহরে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “একের পর এক নারী নিগ্রহের পরও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘ছোট ঘটনা’। তাঁর দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীরা তো সেখান থেকেই এ সব শিখছেন!”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎপল্লির বেশির ভাগ জমিই নরমপুর মৌজায় পড়ে। এই মৌজা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। নিয়মমাফিক খাস জমি লিজ দেওয়া গেলেও বেচাকেনা বা হস্তান্তর করা যায় না। অভিযোগ, খাস জমি বিক্রির বেআইনি চক্রের সঙ্গে যুক্ত উপ-পুরপ্রধান এবং শাসকদলের একাংশ। উপ-পুরপ্রধান হিসেবে পুরসভার জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করেন পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী জিতেনবাবুই। যদিও তাঁর দাবি, “কোনও দিন এ সব কাজ করিনি। যদি কারও আমার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, জানাক।”

medinipur sharatpalli tmc leader tmc rape jitendranath das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy