Advertisement
E-Paper

পা বাড়িয়ে শঙ্করও, অধীর বললেন ওঁরা গেলে যান

বিয়াল্লিশ বছরের ‘সম্পর্ক’ চুকিয়ে কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছেন তিনি। গন্তব্য? তা-ও এক রকম পাকা। নদিয়ার রানাঘাটের দু’বারের বিধায়ক শঙ্কর সিংহ জানাচ্ছেন, বড় কোনও ‘অঘটন’ না হলে তৃণমূলেই যোগ দিচ্ছেন তিনি। একদা নদিয়া জেলা সভাপতি শঙ্কর বলেন, “এত দিনের সম্পর্ক, দল ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৩
শঙ্কর সিংহ

শঙ্কর সিংহ

বিয়াল্লিশ বছরের ‘সম্পর্ক’ চুকিয়ে কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছেন তিনি। গন্তব্য?

তা-ও এক রকম পাকা। নদিয়ার রানাঘাটের দু’বারের বিধায়ক শঙ্কর সিংহ জানাচ্ছেন, বড় কোনও ‘অঘটন’ না হলে তৃণমূলেই যোগ দিচ্ছেন তিনি। একদা নদিয়া জেলা সভাপতি শঙ্কর বলেন, “এত দিনের সম্পর্ক, দল ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। তবে বয়স হয়েছে তো, অপমানিত হয়ে আর কংগ্রেসে থেকে যাওয়ার মানে হয় না।” তিনি জানান, দিন কয়েক আগে তাঁকে ফোন করেন তৃণমূলের নবনিযুক্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। এ দিন শঙ্কর বলেন, “সুব্রত ফোন করেছিলেন, কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে ফিরলে তাঁর সঙ্গেও কথা হবে। মমতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কোনও দিনই তিক্ত ছিল না। এখনও নয়।” তার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করতে চলেছেন এই বর্ষীয়ান নেতা।

তাঁর দলত্যাগের কথা শুনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “শঙ্করবাবু অনেক দিন ধরেই তেমন সক্রিয় নন। নিজের জেলায় বেশির ভাগ সময়েই থাকেন না। এখন অপমানিত হওয়ার দোহাই দিয়ে দল ছাড়ছেন।” সারদা সুতোয় জড়িয়ে এক দিকে দলের হাঁসফাঁস অবস্থা। অন্য দিকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গত কয়েক মাসে ক্রমান্বয়ে দূরত্ব বেড়েছে তৃণমূলের দীর্ঘ দিনের অঘোষিত দু’নম্বর মুকুল রায়ের। শাসক দলের এই ডামাডোলের মধ্যেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে বিরোধের জেরে দলের নেতা-কর্মীদের কংগ্রেস ত্যাগের বিরাম নেই। দিন কয়েক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে পুরনো দলে ফিরেছেন কলকাতা পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, একদা মমতার ছায়াসঙ্গী মালা রায়। অধীরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ অচেনা নয়। সোমবার, দলত্যাগের কারণ হিসেবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছে বারংবার সেই অপমানিত হওয়ারই ইঙ্গিত করেছেন শঙ্কর। সেই তালিকায় রয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে তাঁর বিরোধের জেরে বেশ কিছু দিন ধরেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি এড়িয়ে চলেছেন মান্নান। এ বার মালা রায়দের দলত্যাগের ধাক্কায় প্রকাশ্যেই অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা।

যখনই কেউ কংগ্রেস ছাড়ছেন অধীর বলছেন, স্বেচ্ছায় কেউ গেলে কিছু করার নেই। মান্নান এ দিন পাল্টা বলেন, “সবাই ধান্দাবাজির জন্য কংগ্রেস ছেড়ে যাচ্ছেন, মোটেও এমন নয়। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অসম্মান ও অপমানের জন্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সবার ধৈর্য তো সমান হয় না।” তাঁর দাবি, দলে রাজনৈতিক ভাবে যাঁরা অপমানিত, তাঁরা অনেকেই অন্য রাস্তা বাছছেন।

প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্রের মতো প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি, মালদহের আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, উত্তর দিনাজপুরের দীপা দাশমুন্সি বা নদিয়ার শঙ্কর সিংহেরা কেউ অধীরের আমলে দলে সম্মান পাচ্ছেন না বলে সরব হয়েছেন মান্নান। প্রশ্ন তুলেছেন, হুমায়ুন কবীর থেকে ইমানি বিশ্বাস, সিদ্দিকা বেগম হয়ে মান্নান হোসেন বা তাঁর ছেলে শুধু অধীরের নিজের জেলাতেই কত লোককে কংগ্রেস ছাড়তে হয়েছে?

প্রয় একই সুরে এ দিন শঙ্করও বলছেন, “ত্রিশ বছর ধরে আমি এআইসিসি-র সদস্য, অথচ আমাকে বলা হল সাধারণ সদস্য পদ সংগ্রহ করতে হলে কৃষ্ণনগরে গিয়ে তা নিয়ে আসতে হবে।” ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর আক্ষেপ, ‘বাড়তি’ সম্মান নয়, বর্ষীয়ান কংগ্রেস কর্মী হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকুও কি তাঁকে দেওয়া যেত না? শঙ্করের দাবি, এ সবই হচ্ছে অধীরের ‘অঙ্গুলিহেলনে’। মাস কয়েক আগে তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে অধীর ঘনিষ্ট অসীম সাহাকে ওই পদে বসানো হয়। তার পর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন শঙ্কর। তিনি বলেন, “অসীম আমার হাত ধরেই কংগ্রেসে এসেছিলেন। আর এখন অধীরের নির্দেশে আমাকে চিনতেই পারেন না।”

অধীরের দল চালানোর পদ্ধতি নিয়ে তাঁকে আক্রমণে গিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক মান্নানও। বলেছেন, “প্রদেশ কংগ্রেস এখন এক মহিলার কথায় চলছে। কে তিনি? প্রদেশ সভাপতি প্রকাশ্যে জানান, ওই মহিলা কোথায় কী ভাবে কংগ্রেস করেছেন? কেন তাঁর কথায় কংগ্রেসের সব নেতাকে চলতে হবে?”

যা শুনে অধীর বলছেন, “বাজে কুৎসা ছেড়ে ওঁরা একটু রাজনীতির কথা বলুন না!”

কংগ্রেসের উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি শিবাজী সিংহ রায়ও মালাদেবীদের পথেই হাঁটতে চলেছেন। কংগ্রেস পরিবারের সন্তান শিবাজীবাবুর আক্ষেপ, “মনের আনন্দে আমি তৃণমূলে যাচ্ছি না। অনেক দুঃখ-বেদনায় যেতে হচ্ছে। নিজের সম্মান রক্ষা এবং কাজ করতে চাই বলেই তৃণমূলে যাচ্ছি।”

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিরাম নেই। অধীর তা জানেন। তাঁর কটাক্ষ, “ওঁরা গেলে যান, তবে কি জানেন, নাচতে না জানলে উঠোন বেঁকা!”

adhir chowdhury mala roy congress to tmc shankar singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy