Advertisement
E-Paper

পাড়ুইয়ে সিবিআই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে পরিবার

পাড়ুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টেরই দ্বারস্থ হল নিহত সাগর ঘোষের পরিবার। শুক্রবার সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ, ছেলে হৃদয় ঘোষ এবং পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে তিনটি পৃথক আবেদন দাখিল করেছেন। হৃদয়বাবু শনিবার বলেন, “বাবার খুনিদের শাস্তির জন্য বহু দিন ধরে লড়ছি। সহজে হাল ছাড়ব না। আশা করি, শীর্ষ আদালতে বিচার পাব।”

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৬

পাড়ুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টেরই দ্বারস্থ হল নিহত সাগর ঘোষের পরিবার। শুক্রবার সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ, ছেলে হৃদয় ঘোষ এবং পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে তিনটি পৃথক আবেদন দাখিল করেছেন।

হৃদয়বাবু শনিবার বলেন, “বাবার খুনিদের শাস্তির জন্য বহু দিন ধরে লড়ছি। সহজে হাল ছাড়ব না। আশা করি, শীর্ষ আদালতে বিচার পাব।”

শিবানীদেবীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জানান, সাগরবাবুর খুনের তদন্তে এখনও বহু তথ্য অজানা। কার ষড়যন্ত্রে সাগরবাবু খুন হলেন, তাঁর বাড়িতে যে হামলা হয়েছিল, তা পূর্ব পরিকল্পিত কি না সেই প্রশ্নের জবাব মেলা বাকি রয়েছে। খুনের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁর দাবি, “এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর খোঁজার চেষ্টাই করেনি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বাধীন বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। ওই খুনের তদন্ত তাই অসম্পূর্ণই রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে সাগরবাবুর পরিবার।”

সারদা-কাণ্ডের তদন্তের মতো পাড়ুই নিয়ে সিবিআই তদন্তের এই আর্জিরও বিরোধিতায় নেমেছে রাজ্য সরকার। আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টে মামলা হলে রাজ্য তার বিরুদ্ধে লড়বে।”

২০১৩-র ২১ জুলাই রাতে বীরভূমের পাড়ুই থানার বাঁধ নবগ্রামে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। দু’দিন পরে বর্ধমান মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে প্রথম দিন থেকেই পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবারের দাবি, পাড়ুই থানার পুলিশ জোর করে তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নিজেদের মতো খুনের এফআইআর লিখেছিল। থানা ঠিকঠাক অভিযোগ না নেওয়ায়, শিবানীদেবী পরে রেজিস্ট্রি-ডাকে বীরভূমের সে সময়ের পুলিশ সুপারের কাছে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনা হল, সাগরবাবু খুন হওয়ার ক’দিন আগেই (১৭ জুলাই) কসবা পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে অনুব্রত দলীয় কর্মীদের নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার এবং পুলিশ-প্রশাসনের উপরে বোমা মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাগরবাবুর পরিবারের যুক্তি ছিল, অনুব্রতর ওই উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরিণামই ছিল সাগরবাবুর খুন। অনুব্রতকে এ দিন ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”

পুলিশ অনুব্রতকে গ্রেফতার করা তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। এমনকী, এ প্রসঙ্গে একাধিক বার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনুব্রতেরই পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না, এই অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সাগরবাবুর পরিবার। সেই মামলা চলাকালীন, গত ১৬ জুলাই অনুব্রতর নাম বাদ দিয়েই সিউড়ি আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ‘সিট’। এমনকী, গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে হাজিরা দিয়ে অনুব্রতকে ‘ক্লিনচিট’ দেন রাজ্য পুলিশের ডিজি জি এম পি রেড্ডিও। যদিও ‘সিট’-এর তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন গত ২৪ সেপ্টেম্বর পাড়ুই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে তার দু’দিন পরেই সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাস গত ৪ ডিসেম্বর বিচারপতি টন্ডনের নির্দেশ খারিজ করে দেন। ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, পাড়ুই-কাণ্ডের তদন্ত রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ছাতা দিয়ে আড়াল করা হয়েছে বলে বিচারপতি টন্ডন তাঁর রায়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু কী কারণে বিচারপতি টন্ডন সেই পর্যবেক্ষণ করলেন, রায়ে সে কথা বলা হয়নি। ‘সিট’-এর তদন্তে বাধা দিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কোনও প্রমাণ পাওয়ার কথাও বিচারপতি টন্ডনের রায়ে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকী, বিচারপতি টন্ডন নিম্ন আদালতে জমা পড়া চার্জশিটও খারিজ করেননি। সে ক্ষেত্রে তদন্ত হয়নি, তা বলা যায় না। এই যুক্তিতেই বিচারপতি টন্ডনের আদেশ খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে এখন ছুটি। খুলবে ৫ জানুয়ারি। মামলা গৃহীত হল কি না, সেটা তার পরেই জানা যাবে।

parui saraswati ghosh hridoi ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy